মক্কা-মদিনা মসজিদের অন্যতম রূপকার যিনি

| আপডেট :  ২০ নভেম্বর ২০২০, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ নভেম্বর ২০২০, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

মুসলমানদের নিকট অন্যতম পবিত্র স্থান মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববী। এদের মধ্যে সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত মসজিদুল হারাম ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবাকে ঘিরে অবস্থিত আর মসজিদে নববী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক মদীনায় প্রতিষ্ঠিত। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। ঐতিহাসিক এ মসজিদ দুটোর সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আর বর্তমানে এই পবিত্র স্থান দুটির যে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আমরা দেখছি তার সূচনা হয় আধুনিক মিসরীয় স্থপতি ড. কামাল মুহাম্মদ ইসমাইলের হাত ধরে। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আজকের সুন্দর রূপ পেয়েছে মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববী।

প্রতিভাবান এ স্থপতির জন্ম ১৯০৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মিসরেড সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারের। তিনি মিসরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে ইসলামি আর্কিটেকচারে তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্তির জন্য ইউরোপে গমন করেন এবং সফল হন। ব্যক্তিজীবনে প্রতিভাবান এই স্থপতি ৪৪ বছরে বিয়ে করেন কিন্তু তার স্ত্রী পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যান। এরপর বাকি জীবন তিনি একাই পার করেন। জানা গেছে, ড. ইসলামাইল মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীসহ বিভিন্ন কাজে অবদান রাখায় কোনোদিন অর্থ নেননি তিনি। এমনকি সৌদির তৎকালীন বাদশাহ ফাহাদ এবং বিন লাদেন এই কারিগরকে কাজের পুরস্কার হিসেবে বিপুল অঙ্কের অর্থ দিতে চাইলে তিনি তা ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, মজিদের মতো পবিত্র স্থানে কাজের বিনিময়ে কেন আমি অর্থ নেব? শেষ বিচারের দিন আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সামনে কীভাবে মুখ দেখাব?

এই দুই মসজিদের নির্মাণ ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাওয়াফকারীদের সুবিধার্থে মসজিদুল হারামের তাওয়াফের স্থানটুকু মার্বেল পাথর বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে গ্রিসের একটি পাহাড়েই সবচেয়ে ভালো সাদা মার্বেল পাথর পাওয়া যেত, এমন খবর পান স্থপতি ইসমাইল। আর তখনই তিনি সুদূর গ্রিসে ছুটে যান এবং তাপশোষণ করতে পারে এমন মূল্যবান দুর্লভ সাদা মার্বেলের জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেন। সেইসময়ে তিনি মজিদুল হারামের জন্য প্রায় অর্ধেক পাহাড় পরিমাণ মার্বেল কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং পরবর্তীতে নিখুঁতভাবে মসজিদের মেঝেতে মার্বেলের স্থাপনের কাজ শেষ করেন এই স্থপতি।

এর ১৫ বছর পর মদিনার মসজিদেও একইভাবে মার্বেল স্থাপনের জন্য গুণী ও ধার্মিক স্থপতি মুহাম্মদ ইসমাইলকেই দায়িত্ব দেন তৎকালীন সৌদির বাদশাহ। কিন্তু ওই সময়ে সাদা মার্বেল সংগ্রহ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এর আগে তিনি অর্ধেক পাহাড়ের মার্বেল পাথর কিনে নিয়েছিলেন। তবে এতে হাল ছাড়েন নি এই স্থপতি। আবারো ছুটে যান গ্রিসের সেই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৫ বছর আগে তিনি চলে যাওয়ার পর মার্বেল বিক্রি হয়ে যায়। এতেও হাল না ছেড়ে ড. ইসমাইল খুঁজে বের করেন পাথর ক্রয়কারী সেই প্রতিষ্ঠানকে এবখ তাদের কাছ থেকেই পুনরায় সংগ্রহ করেন সাদা মার্বেল পাথর।

এভাবেই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই মহান স্থপতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে সময় কাটান। প্রতিভাবান এই স্থপতি ২০০৮ সালের ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।