বেরিয়ে এলো আড়ালের তথ্য; তিলকে তাল করা হয়েছে: র‍্যাব

| আপডেট :  ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৫৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৫৩ অপরাহ্ণ

একসময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ ছিলো বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই চিত্র বদলে গেছে। বিশেষ করে গত কয়েকবছর ধরেই পূজা মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ব্যতিক্রম ঘটেনি চলতি বছরেও।

যদিও সম্প্রতি এমন ঘটনার সূত্রপাত কুমিল্লায় একটি মন্দিরে ‘পবিত্র কোরআন অবমাননা’ থেকে। যেখানে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীগুলো অতিরিক্ত সতর্কতায়, সেখানে কুমিল্লা ও চাঁদপুরের পর পীরগঞ্জে এমন কি ঘটেছিল যে কারণে হিন্দুপল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল? এর নেপথ্যে কি রয়েছে? কে বা কারা এতে ইন্ধন যুগিয়েছে? এমন অসংখ্য প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছিল সাধারণ মানুষের মনে।

অনেকে মনে করছেন, বহুল প্রচলিত বাংলার বাগধারা ‘তিলকে তাল করা’, এটির বাস্তবিক প্রমাণ সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। যে কারণে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)। আজ শনিবার (২৩ অক্টোবর) এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে বাহিনীটি।

পীরগঞ্জের ওই এলাকায় একই সঙ্গে চলফেরা করা দুই বন্ধুর মধ্যে সামান্য ব্যক্তিগত মনমালিন্যতা থেকে ঘটনার সূত্রপাত। যে কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বী ১৯ বছর বয়সী তরুণ পরিতোষ সরকার ‘পবিত্র কাবা, ইসলাম ও মুসলমানদের’ কটাক্ষ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়। সেটি আবার স্ক্রিনশট দিয়ে ফেসবুকে শেয়ার দেয় তারই বন্ধু ২১ বছর বয়সী উজ্জ্বল হাসান। এই উজ্জ্বলের শেয়ার দেয়া স্ট্যাটাস নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে ছড়িয়ে দেয় সৈকত মণ্ডল। পাশাপাশি এলাকার মসজিদের দায়িত্বে থাকা রবিউল ইসলামকে মাইকিং করে সকলকে একত্রিত হতে বলে। যার ফলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে হিন্দুপল্লীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

র‌্যাব বলছে, রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে সৈকত মণ্ডল (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। র‌্যাবের ভাষ্য, ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য এবং মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় লোকজনকে উত্তেজিত করেন সৈকত। ঘটনার দিন একটি মসজিদ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে জড়ো করেন তার সহযোগী রবিউল ইসলাম (৩৬)। এর পরই হামলা চালানো হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, সৈকতের বাবার নাম মো. রাশেদুল হক। তার বাড়ি পীরগঞ্জে। আর রবিউলের বাবার নাম মো. মোসলেম উদ্দীন। তার বাড়িও পীরগঞ্জে। এর আগে গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের টঙ্গী থেকে সৈকত মণ্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পীরগঞ্জের বড়করিমপুরে পরিতোষ সরকার ও উজ্জ্বল নামের দুই তরুণের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। এর জের ধরে পরিতোষের ধর্ম নিয়ে উজ্জ্বল কটূক্তি করেন। পরে পরিতোষ ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে উজ্জ্বলের ধর্ম নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেন। পরিতোষের ওই মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেন উজ্জ্বল।

উজ্জ্বলের ওই পোস্ট সৈকত আবার তার নিজের ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেন বলে জানান খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই সৈকত নানা উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছিলেন। পরিতোষ ও উজ্জ্বলের দ্বন্দ্বের ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলেন সৈকত। তার একটি ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে তার প্রায় ৩ হাজার অনুসারী রয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি ‘দুর্বল সময়ের’ জন্য অপেক্ষা করছিলেন সৈকত। পরিতোষের বার্তাকে কেন্দ্র করে সৈকত উসকানি ছড়ানোর পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।

হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সৈকতের পেছনে কেউ ছিল কিনা, এ বিষয়ে র‌্যাব কিছু বলেনি। সৈকতের রাজনৈতিক কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়েও র‌্যাব নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে-এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছে র‌্যাব।