পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা ছেলের বিচার চান মা (ভিডিও)

| আপডেট :  ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২৯ অপরাহ্ণ

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা যুবক ইকবাল হোসেনের (৩০) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তার মা বিবি আমেনা। স্থানীয়রাও তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির পাশাপাশি দাবি জানিয়েছেন জড়িত অন্যদেরও বিচারের আওতায় আনার। তাদের বক্তব্য, মানসিক ভারসাম্যহীন ইকবাল একা এ কাজ করেননি, তাকে দিয়ে কেউ করিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ইকবাল মোবাইল ব্যবহার না করা ও ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় তাকে ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বুধবার (২০ অক্টোবর) সিসি টিভি ফুটেজ দেখে ইকবালকে শনাক্তের কথা জানায় পুলিশ। অভিযুক্ত ইকবাল কুমিল্লা মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। তাকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকালে দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হওয়া ইকবাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে পরিচিত। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। এরই মধ্যে বিয়ে করেছেন দুটি।

প্রথম বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। ওই সংসারে ১০ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। তার পাগলামির কারণে সাত-আট বছর আগে স্ত্রী আশা বেগম তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন।

পরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাদৈর গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ইকবাল। দু’বছর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়েসন্তান। তিন বছর আগে আবার মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি শুরু করেন ইকবাল। পরে দ্বিতীয় স্ত্রী রুমিও তাকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। এরপর থেকে তার পাগলামি আরও বেড়ে যায়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইকবাল বেশিরভাগ সময় থাকতেন লস্করপুকুর এলাকায় নানির বাসায়। এছাড়া তিনি নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাজারে অবস্থান করতেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরেও তার আসা-যাওয়া ছিল। তাদের দেওয়া ভোগও খেতেন ইকবাল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইকবাল যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্ত, তাই তিনি নিজে এ কাজ করতে পারেন না। তাকে দিয়ে কেউ করিয়েছেন।

ইকবালের মা বিবি আমেনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সে ১৬-১৭ বছর বয়স থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি করে আসছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে সে আমার মায়ের কাছে থাকতো। ঘটনার দুদিন আগে (১১ অক্টোবর) বিকেলে নেশা করে আমার সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসে। কেন এসেছো জিজ্ঞেস করলে কথা না বলে চলে যায়। এরপর থেকে আর বাসায় আসেনি।

তিনি বলেন, ভিডিওতে দেখেছি আমার ছেলে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলেকে যে শাস্তি দেবেন আমরা তা মাথা পেতে নেবো। এ ঘটনায় তার সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই। ইকবালের নানি রহিমা বেগমও নাতির শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার নাতি মানসিক রোগী। তাকে যে সহযোগিতা করেছে আমরা তারও বিচার দাবি করছি।

কুমিল্লা মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ইকবাল মানসিক রোগী। নানুয়ার দিঘিরপাড়ের ঘটনা তাকে দিয়ে কেউ না কেউ করিয়েছে। দেশের উন্নয়ন হয়তো তাদের সহ্য হচ্ছে না, এ কারণে বাংলাদেশে দাঙ্গা লাগানোর জন্য কাজটি করতে পারে। ইকবালকে গ্রেফতার করলে সব তথ্য বের হয়ে আসবে।

ইকবাল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে একজন দিনমজুর। রাজমিস্ত্রির জোগালি (সহকারী) ও রঙের কাজ করতো। বউ চলে যাওয়ার পর থেকে সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে সে মাজারে মাজারে এবং মসজিদের বারান্দায় থাকে। তার পাগলামির কারণে মা-বাবা বাড়িতে জায়গা না দেওয়ায় নানির সঙ্গে থাকতো।

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় নয়টি মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি, দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। মামলায় ৯১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কুমিল্লার এ ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় উপাসনালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। নানুয়ার দিঘিরপাড় এলাকা থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে বুধবার সন্ধ্যায় ইকবালের নাম প্রকাশ করা হয়।