তিনি ফোন করতেন যুবলীগ চেয়ারম্যান সেজে, টাকা তুলতেন অল্প অল্প করে

| আপডেট :  ১৯ অক্টোবর ২০২১, ০৬:৫২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ অক্টোবর ২০২১, ০৬:৫২ অপরাহ্ণ

যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর স্পুফ করেছেন এক প্রতারক। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানের যুবলীগ নেতাদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের নামে টাকা নিয়েছেন। সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে তুলেছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অবশেষে সেই প্রতারক ও চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম তদন্ত বিভাগ। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নাম ফিরোজ খন্দকার।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি যুবলীগ চেয়ারম্যানের নাম বলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ফোন দেওয়া হচ্ছিল। ফোনে কাউকে কাউকে ‘ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে’ বলে ভয় দেখানো হয়। এ সময় অনেকের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়া হয়। কেউ কেউ এই ফিরোজকে চেয়ারম্যান ভেবেই নানা তদবিরের জন্য লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার ভিডিও দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর দীর্ঘ তদন্তের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সংস্থাটি জানায়, প্রতারক ফিরোজ ঢাকার খিলগাঁও থেকে কেরানীগঞ্জের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলেন। সন্দেহ এড়াতে বিভিন্ন বুথ থেকে তিনি অল্প অল্প করে টাকা তুলতেন। ফিরোজের প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে পুলিশের সিটি সাইবার ইন্টারনেট রেফারেল টিম খিলগাঁও থেকে কেরানীগঞ্জের যেসব বুথ থেকে ফিরোজ খন্দকার টাকা তুলেছেন সেসব বুথের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে।

প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজীমনগর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। প্রতারক ফিরোজকে অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার নামে আরও তিনটি প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যাদের কাছ থেকে টাকা চেয়েছেন ফিরোজ
পরশের নাম নিয়ে তার ব্যবহৃত রবি নম্বরটি ক্লোন করে গত ৯ অক্টোবর প্রথম ফোন করা হয় গাইবান্ধা যুবলীগের সভাপতি সরদার মো. শাহীন হাসান লোটনের নম্বরে। সংগঠনের জন্য চাঁদা হিসেবে তাকে একটি রকেট নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। একই দিন নেত্রকোনা যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের চপলকে ফোন করে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। ১০ অক্টোবর মুশফিকুল ইউনুস জায়গীরদার নামে এক ব্যক্তি এবং পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সনি বিশ্বাসকে ফোন করে বিকাশে তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়।

এছাড়াও গত কয়েকদিন একই পরিচয়ে দেশের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ফোন করে টাকা দাবি করে প্রতারক ফিরোজ। ফিরোজ খন্দকার বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলে পরশ পরিচয়ে টাকা দাবি করে বিকাশ-রকেট নম্বর দিয়ে টাকা চাইতেন। সংগঠনের চেয়ারম্যানের ফোন নম্বর পেয়ে নেতারা উৎফুল্ল মনে বিকাশে টাকা পাঠাতেন। আর প্রতারক রাজধানীর বুথগুলো থেকে এ টাকা তুলতেন। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন বুথে মোটর সাইকেল চড়ে এ টাকা উত্তোলন করতেন।

এই ঘটনায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের হয়ে ১৫ অক্টোবর রাজধানীর বনানী থানায় ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ব্যারিস্টার রানা তাজউদ্দিন খান। মামলাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ও ২৬ ধারায় করা হয়েছে। এতে ‘মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোনিং করে টাকা দাবি’র অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার পরপরই সাইবার সিটিটিসি তদন্ত নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে ফিরোজ খন্দকারকে শনাক্ত করা হয়।