গোপালগঞ্জে প্রধান শিক্ষককে লাথি মারলেন শিক্ষা অফিসার

| আপডেট :  ৮ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪৪ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

সারাদেশ: গোপালগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লা’থি মা’রাসহ দু’ দফায় মা’রপিট করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও তার লোকজন। এরপর উল্টো শিক্ষা অফিসারকে মারপিঠ করার অ’ভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষককেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; হয়েছে বিভাগীয় মা’মলা। অথচ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক ওই প্রধান শিক্ষককে মা’রধরের একটি ভিডিও-ক্লিপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে উঠলেও জে’লা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কি’শোর সাহা বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের বি’রুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষকের লিখিত অ’ভিযোগসহ এটিপিইও’র অ’ভিযোগ পেয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বি’রুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে সদর উপজে’লার ২৮নং উরফি বড়বাড়ি স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস জানান, গত ৩ অক্টোবর তার স্ত্রী’র ক্লিনিকে পুত্র স’ন্তান প্রসবের খবর পেয়ে দুপুরের পর তিনি ক্লিনিকে যান। বিকেল ৪টায় ছুটির পর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম কুমার রায় বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে পাশর্^বর্তী গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজু নামে এক সহকারী শিক্ষকও ছিলেন। তার সহকারী শিক্ষকের ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন মনোজ কান্তি। সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কিছু না বলেই তাকে লা’থি মা’রেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। তারপরই সহকারী শিক্ষক রাজুও তাকে মা’রপিট ও গা’লিগা’লাজ করে। মার খেয়ে তিনি কোনরকমে দৌঁড়ে নিরাপদে যান। এসব ঘটনার সময় ওই বিদ্যালয়ের আরো দুই শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

৫ অক্টোবর সকালে তিনি বিদ্যালয়ে গেলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় গা’লিগা’লাজ ও মা’রপিট করে এবং মোবাইল ফোন ছি’নিয়ে নিয়ে ধারণকৃত ভিডিওচিত্র মুছে ফে’লে। এসময় তিনি দৌঁড়ে গিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আশ্রয় নেন এবং উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষকে জানান। তাদের সাড়া না পেয়ে তিনি তার বোনদের মাধ্যমে পুলিশে জানালে, পুলিশ গিয়ে তাকে উ’দ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অ’সুস্থ স্ত্রী কাকলী হীরা এব্যাপারে থানায় একটি অ’ভিযোগপত্র দাখিল করেছে।

প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস অ’ভিযোগ করে বলেছেন, উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যয়সহ নানা বি’ষয় নিয়ে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং জে’লা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে তার দ্ব›দ্ব রয়েছে। আর এ পরিণতিতেই তিনি একদিকে মার খেয়ে এখন হাসপাতালে, অন্যদিকে সাময়িক বরখাস্ত।

অপরদিকে, দু’টি ঘটনারই প্রত্যক্ষদর্শী শিল্পী খানম ও শিপ্রা বিশ্বাস একরমের আ’তঙ্ক নিয়েই সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে রাজি হন নি। তবে জানিয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বি’রুদ্ধে লিখিত নেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা কেঁদে ফে’লেন এবং বলেন, প্রধান শিক্ষকের উপর যে হা’মলা হয়েছে তা মর্মস্পর্শী এবং চ’রম অ’মানবিক। তারা আরো বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে আমাদের খুবই ভাল সম্পর্ক, তিনি খুবই ভাল মানুষ।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যালয়-সংলগ্ন বাসিন্দা জুলফিকার বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, তার সামনেই শিক্ষা অফিসার সাহেব কিছু না বলেই প্রধান শিক্ষককে লা’থি মা’রেন। এটা অত্যন্ত অ’মানবিক। এরপর তাকে মে’রে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, আবার বরখাস্তও করা হয়েছে। আমি চাই না, কোন নির্দোষ মানুষ হ’য়রানি বা ভোগান্তির শি’কার হোক।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মহিদুল আলম মাহাত্তাব খান প্রধানশিক্ষকের উপর হা’মলার বি’ষয়টিকে অস্বীকার করে বলেছেন, এ অ’ভিযোগ অবান্তর। সাময়িক বরখাস্তের বি’ষয়টি নিয়ে প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে এলোমেলো কথা বলে মোবাইলে ভিডিও করতে শুরু করে। তাই তার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ভিডিও চিত্র মুছে ফেলা হয়েছে; কিন্তু তাকে কোন মা’রধর করা হয়নি।

সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গৌতম কুমার রায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের দেখে তিনি হকচকিয়ে যান এবং হাত জোড় করে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অফিসকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।