যে সাহসী সিদ্ধান্তগুলো শেখ হাসিনাকে দিয়েছে অনন্যতা

| আপডেট :  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:১৮ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:১৭ অপরাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ তার ৭৫ বছর পূর্ণ করলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি রাষ্ট্র পরিচালনায় নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সরকার পরিচালনা করেছেন ১৮ বছর। এই সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেই সিদ্ধান্তগুলো তাকে জননেত্রী থেকে রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্ব নেতায় উন্নীত করেছেন।

এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো তাকে অমরত্ব দান করেছে, দিয়েছে অনন্যতা। এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তিনি যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন সেই সিদ্ধান্তটা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তখন জিয়াউর রহমানের স্বৈরশাসন এবং বারবার তাকে দেশে ফেরায় বাঁধা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু সকল বাঁধা উপেক্ষা করে, সকল চোখ রাঙ্গানিকে নাকচ করে দিয়ে তিনি যেভাবে দেশে ফিরেছেন সেটি ছিল তার সাহসিকতার প্রথম পদক্ষেপ। পুরো রাজনৈতিক জীবনে তিনি এই স্বকীয়তা এবং সাহস দেখিয়ে এসেছেন।

২. ৭৫ এর পর সব সরকারকে অবৈধ দাবি: স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ৭৫ পরবর্তী সময় সবগুলো সরকারকে অবৈধ দাবি করেন এবং শেখ হাসিনার এই বক্তব্য সে সময় আওয়ামী লীগের মধ্যেই সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা তথ্য, উপাত্ত দিয়ে সেই দাবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আজকে এই দাবি সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক স্বীকৃত। শেখ হাসিনার যে অবস্থান সে অবস্থানই আজকে ইতিহাসে নির্মল সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৩. নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রস্তাব: জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৯ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ঘোষণা দেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেই রূপরেখা অনুযায়ী স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটে এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এবং দেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার ফিরে পায়।

৪. ১৯৯৬ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করা: ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে যিনি প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের মত একজন নিরপেক্ষ লোককে সেই সময় রাষ্ট্রপতি করাটা ছিলো শেখ হাসিনার অন্যতম একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি দেশের প্রতি এবং জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত রাখার যে দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন তা আজও অনন্য উদাহরণ হিসেবে থাকবে।

৫. পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং গঙ্গার পানি চুক্তি: শেখ হাসিনার অন্যতম দুইটি সাহসী সিদ্ধান্ত হলো পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং গঙ্গার পানি চুক্তি। এই শান্তি চুক্তির মাধ্যমে তিনি পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটান। আর একই ভাবে দীর্ঘ দিনের পুরনো গঙ্গার পানি সমস্যার সমাধান করেন শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি চুক্তির মাধ্যমে।

৬. সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী: শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার , আশ্রয়ণ প্রকল্প এর মতো যুগান্তকারী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্প করেছেন। যে প্রকল্প গুলো শেখ হাসিনাকে দিয়েছে অমরত্ব ও অনন্যতা। বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের কর্ম সূচি গ্রহণ করা এক সময় ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটিকে বাস্তবতা দিয়েছেন।

৭. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছিল শেখ হাসিনার আরেকটি সাহসী সিদ্ধান্ত। ২০০৮ এর নির্বাচনে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করেন। এরপর তিনি বিচারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং প্রবল প্রতিকূলতা এবং দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

৮. প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধুর বিচার: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ছিল সময়ের দাবি। আমাদের পাপ মোচনের একটি সুযোগ। আর সেই কাজটি করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা ছিল প্রচলিত আইনে বিচার করা। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল না করেই তিনি বিচারের দীর্ঘ পথ বেছে নিয়েছিলেন সাহসিকতার সাথে।

৯. বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনা সদরে যাওয়া ও বক্তব্য রাখা: দ্বিতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর একটি অস্থির পরিবেশের তৈরি হয়। আর সেই সময় নিজেকে সাহসিকতার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট সেনা সদরে যান এবং দরবার হলে বক্তব্য রাখেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার এই সেনা সদরে যাওয়াটা ছিল তার সাহসিকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ।

১০. নিজের টাকায় পদ্মা সেতু: পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিলে শেখ হাসিনা আরও একটু দূরদর্শী, সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলেন এবং সেই পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। এ রকম অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে দিয়েছে অনন্যতা। তাকে করেছে অপরাজেয়।