যেভাবে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন ইভ্যালির রাসেল!

| আপডেট :  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:২৫ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:২৫ অপরাহ্ণ

চটকদার সব পণ্যের অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল প্রায় শত কোটি টাকা কয়েকটি দেশে পা’চার করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ত’দন্তে উঠে এসেছে। ওই টাকা তিনি পা’চার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। তার সঙ্গে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার দুইজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর যোগসাজশ পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সুমন ও আব্দুল মান্নান।

রাসেল ধরা পড়ার আগেই তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টাকা পা’চারের বি’ষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। রাসেল গ্রে’প্তার হওয়ার পর তার ইভ্যালি থেকে প্র’তারণার শি’কার গ্রাহকদের পাশাপাশি তাকে যারা সরাসরি পণ্য সরবরাহ করতেন তারাও পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

তিনটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কাছে কমপক্ষে ২২৫ কোটি টাকা পাবে। ওই টাকা উ’দ্ধারে তারা এখন শঙ্কায় আছে। বি’ষয়টি নিয়ে তারা বাণিজ্য ম’ন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও রাসেল ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১১ বার বিদেশে গেছেন। বিদেশে যাওয়ার তার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, ইভ্যালিকে অন্য দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো। যাতে তারা সহজেই তাকে পণ্য সরবরাহ করে। বিদেশের একাধিক প্রকল্পে তার বিনিয়োগ রয়েছে।

তার এ কাজে সহযোগিতা করেছে তার এক বন্ধু। তিনি চীন থেকে মোবাইল ফোন এনে থাকেন। তিনি দেশে এলে তাকে জি’জ্ঞাসাবাদ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিদেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পা’চারের ক্ষেত্রে ওই বন্ধুর হাত রয়েছে বলে রাসেলকে রি’মান্ডে নিয়ে জানতে পেরেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্ম’দপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও নাসরিনকে গ্রে’প্তার করে র‌্যা’ব। গুলশান থানায় ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মা’মলার প্রেক্ষিতে তাকে র‌্যা’ব গ্রে’প্তার করে।

পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আ’দালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রি’মান্ড প্রার্থনা করেন। পরে আ’দালত তাদের তিনদিন করে রি’মান্ড মঞ্জুর করেন। তারা এখন গুলশান থানায় পুলিশের রি’মান্ডে আছেন বলে জানা গেছে। এ বি’ষয়ে র‌্যা’ব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন গতকাল মানবজমিনকে জানান, ‘রাসেলকে র‌্যা’ব প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদ করেছে। তার তথ্যগুলো ত’দন্তাধীন।’

পুলিশ জানায়, কাওরানবাজারে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় রাসেল ই-কমার্স বিজনেস করার পরিকল্পনা করেন। এতে যুক্ত করেন তার স্ত্রী নাসরিনকে। মূলত তার এ কোম্পানিকে পারিবারিক বিজনেসে রূপান্তরিত করার জন্যই তিনি তার স্ত্রীকে যুক্ত করেন।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে টাকা পাঠালে তিনি বিতর্কের মধ্যে পড়তে পারেন এজন্য তিনি হুন্ডিকে বেছে নেন। হুন্ডির মাধ্যমে নির্বিঘ্নে তিনি গ্রাহকদের টাকা এবং ইভ্যালি থেকে আয়কৃত টাকা দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন।

মা’মলার ত’দন্তকারীদের আ’শঙ্কা যে, ওই টাকা দেশে আনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এতে বড় ক্ষ’তিগ্রস্ত হবেন যারা ইভ্যালিতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সূত্র জানায়, রাসেল প্রথম থেকেই সরাসরি কোম্পানি থেকে পণ্য কিনে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা শুরু করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জি’জ্ঞাসাবাদে তিনি এটিকে ‘ডাইরেক্ট সেল’ হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু, এতে তিনি পণ্য থেকে কীভাবে লাভ করতেন তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

সূত্র জানায়, যেসব গ্রাহকেরা তার কাছে কোনো পণ্য পেতেন না তারা রাসেলের ইভ্যালির অফিসে ধরনা দিতেন। তার লোকজন কৌশলে ওইসব গ্রাহকদের ই- মেইল নিয়ে ফেসবুকে ইভ্যালির অন্য গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ছবি সেন্ড করতেন। পরে যেসব গ্রাহক পণ্য পায়নি তারা আশায় ছিলেন যে, তারা হয়তো পণ্য ডেলিভারি পাবেন। এভাবে রাসেল প্র’তারণা করে ইভ্যালির ব্যবসাকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন।

এছাড়াও টেলিভিশন, পত্রিকা এবং গুগলসহ ইউটিউবে গ্রাহক টানার জন্য তিনি বিজ্ঞাপনে মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ রাখতেন। সূত্র জানায়, রাসেল ও তার স্ত্রী নাসরিনকে গ্রে’প্তার করার পর র‌্যা’ব তাদের দু’জনকে উত্তরার সদর দপ্তরে নিয়ে প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদ করে। র‌্যা’ব’র জি’জ্ঞাসাবাদে অনেক কিছুই তিনি অকপটে উত্তর দিলেও কিছু তথ্য গো’পন করেছেন।