বাবা নেই, ছয় মাসের আয়েশা মনির ৭ তলা বাড়ির ওপর ভাড়াটিয়ার কু-নজর

| আপডেট :  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

কুয়েত প্রবাসী আব্দুল মান্নান। ২০০৮ সালে বিয়ে করেন লক্ষ্মীপুরের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন সুইটিকে। এরপর দীর্ঘদিন প্রবাসেই কাটে তার। সন্তান না হওয়ায় মাঝেমধ্যে দেশে আসতেন চিকিৎসার জন্য। ২০১৯ সালে স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার কাজে অবস্থান করার সময় মান্নানের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০২১ সালে এসে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তার। ইতিমধ্যে সাবিনা ইয়াসমিনের গর্ভে জন্ম নেয় আয়েশা মনি। প্রবাসে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ঢাকার হাজারীবাগে একটি ৭ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন মান্নান।

মৃত্যুর আগে ২ মাস বয়সী কন্যা সন্তান আয়েশার নামে বাড়িটি লিখে দেন তিনি। গত পহেলা জুন আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর ওই বাড়ির ওপর নজর পড়ে ভাড়াটিয়া নাসির উদ্দিন ও তার স্ত্রী হাসিনা আক্তারের। বাড়িটি দখলে নানা তৎপরতা শুরু করে তারা। আয়েশার মা সাবিনা ইয়াসমিনকে বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে তারা। এমনকি অন্য ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছেন তারা।

এ নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন ওই ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ দিলেও তারা কোনো জবাব দেয়নি। নিজ বাড়িতেই পরাধীন অবস্থায় বসবাস করছে আয়েশা ও তার মা। বাড়িতে আসতে পারেন না আয়েশার মায়ের পরিবারের কেউ। তাদের ফ্ল্যাটের দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রাখেন নাসির উদ্দিন। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১০ই জুন হাজারীবাগ থানায় জিডি করেন আয়েশার মা সাবিনা ইয়াসমিন।

অপরদিকে নাসির উদ্দিন ও হাসিনা আক্তারের ইন্ধনে বাড়ি দখলে আয়েশার মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণার মামলা করেছেন মৃত আবদুল মান্নানের ছোট ভাই শওকত আকবর। এতে আসামি করা হয়েছে আয়েশার মা সাবিনা ইয়াসমিন সুইটি, তার বাবা, ভাই, খালাত ভাই এবং ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তাকে। ৩০শে জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, সাবিনা ইয়াসমিন মৃত আবদুল মান্নানের সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের মেয়ে আয়েশা মনির নামে ভুয়া হেবা দলিল সম্পাদন করেছেন। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, জীবিত অবস্থায় আবদুল মান্নান আয়েশাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দেননি এবং তার পরিবারও তা মেনে নেয়নি। আবদুল মান্নান হাসপাতালে অচেতন থাকা অবস্থায় আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ও সাব- রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় ভুয়া হেবা দলিল তৈরি করেছে। তবে মামলার আরজিতে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।

সেখানে আয়েশা মনিকে আব্দুল মান্নানের সন্তান হিসেবে অস্বীকৃতি জানানো হলেও তাকে ওয়ারিশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আয়েশা মনির জন্মসনদ ও হাসপাতালের সনদে তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে আবদুল মান্নান। আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর আগে বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি বলে জানান তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনা বলেন, মৃত্যুর আগে আয়েশা মনির বাবা তার নামে ওই বাড়িটি লিখে দিয়েছেন। তখন কেউ আপত্তি করেনি। কিন্তু একটি চক্র বাড়িটি ভোগদখলের পাঁয়তারা করছে। আয়শা মনি আমাদের সন্তান কিনা তা ডিএনএ টেস্ট করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।

সাবিনা ইয়াসমিন আরও জানান, হাজারীবাগের এই বাড়ি ছাড়াও মৃত আবদুল মান্নানের বউবাজারে তিন তলা বাড়ি, লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে ১১ শতাংশ জমির উপরে ৪ তলা ইমারতবিশিষ্ট একটি বাড়ি এবং সদরে ৫ শতাংশ জমির উপরে মার্কেট আছে। এ সবকিছু তার পরিবারের লোকজন ভোগদখল করছে। স্ত্রী হিসেবে আমি কোনো সম্পত্তিই ভোগ করতে পারছি না। এমনকি বাচ্চার ভরণপোষণ কীভাবে হবে সে বিষয়ে কেউ কোনো খোঁজ রাখছে না।

এ মামলার বাদী শওকত আকবরের কাছে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করেননি। ধানমণ্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, আয়েশা মনির পরিবার তাদের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছিল। আমরা তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কিন্তু বাড়ির বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হওয়ায় এবং তদন্ত চলমান থাকায় আমরা আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, দুইপক্ষকে আমরা মীমাংসার জন্য ডেকেছিলাম। আয়েশার পরিবার আসলেও অপরপক্ষ মামলার কারণ দেখিয়ে আসেনি।