স্কুলে ভর্তির দাবিতে অনশনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরীফ

| আপডেট :  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৪৬ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৪৬ অপরাহ্ণ

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির দাবি জানিয়ে অনশন শুরু করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের শরীফ আলী। মুন্সির হাট মাদরাসা পাড়ায় নিজ বাড়িতে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) তিনি এই অনশন শুরু করেন। শরীফ জানান, তিন বছর বয়সে তিনি চোখ হারান। পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চান না তিনি। তাই গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথমে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে সমাজসেবা কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনেকবার যোগাযোগ করেছেন।

ইতোমধ্যে আট মাস পার হয়ে গেছে। সবাই তাকে আশ্বাস দিলেও কেউই তার ভর্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন। শরীফের বাবা রমজান আলীর অভিযোগ, গত জুলাই মাসে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বিভিন্ন স্কুলে গোপনে অর্ধশত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। অথচ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভর্তির কোটা ও নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

শরীফের মা শফুরা বেগম বলেন, লেখাপড়া জানা থাকলে ভবিষ্যতে আর যাই হোক শরীফকে ভিক্ষা করে চলতে হবে না। তাই সন্তানের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা চান তিনি। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আল মামুন জানান, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হোস্টেলে শরীফ ভর্তি রয়েছে। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় হোস্টেলও বন্ধ। হোস্টেলের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও জনবল সংকটের কারণে শিক্ষাকার্যক্রম কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে শরীফের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে চেষ্টা চলছে।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিযুষ কান্ত রায় বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ থাকলেও শিক্ষক ও উপকরণ সুবিধা নেই। বিদ্যালয়ে যে চারজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে তাদেরও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শরীফের ভর্তির বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মো. আলাউদ্দীন আল আজাদ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে যে দুটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে তার সভাপতি জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কামরুন নাহার বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কমিটির আগামী সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সরকারি তথ্যানুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ১ হাজার ৬৬৮ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।