নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধ’ ‘র্ষ’ণের হু’মকি দিয়ে পাহাড় দখল করেন এমপি সামশুল হক!

| আপডেট :  ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সং’সদের হুইপ ও চট্টগ্রামের পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু সামশুর বি’রুদ্ধে এবার এ কে খান গ্রুপের পাহাড় দ’খল করার অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে। দ’খলের আগে ওই পাহাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ও’পর অ’মানুষিক নি’র্যাতন চা’লানো হয়, যা আজও ভু’লতে পারেনি তখনকার বাস্তুচ্যুত মানুষ।

জানা যায়, বিচ্ছু বাহিনীর সদস্যরা পাহাড় দ’খল করতে গিয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অ’পহরণ ও ধ”ণের হু’মকি দেয়। অন্যের সম্পদ নিজের কবজায় নেওয়ার পর শুরু হয় পাহাড় কা’টা। ওই পাহাড়ের মালিকপক্ষের অ’ভিযোগের ভিত্তিতে নগরীর ডবলমুরিং থানায় মা’মলাও করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কিন্তু বিচ্ছু সামশুর অদৃশ্য শক্তির ইশারায় হাওয়া হয়ে যায় সেই মা’মলার নথিপত্র।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকার দক্ষিণ খুলশীতে অবস্থিত পাহাড়টির মালিক দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপ এ কে খান কোম্পানি। বিচ্ছু সামশু ওই পাহাড় অ’বৈধ দ’খলে নিয়ে কা’টার ফন্দি আঁটেন এবং বসবাসকারীদের স’ন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উ’চ্ছেদ করে শুরু হয় পাহাড় কা’টা।

এ কে খান গ্রুপের পক্ষ থেকে বিচ্ছু সামশু ও তাঁর বাহিনীকে বা’ধা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর সিডিএর কাছে লিখিত অ’ভিযোগ দেওয়া হয়। অ’ভিযোগ পাওয়ার পর বিচ্ছু সামশু ও তাঁর বাহিনীর বি’রুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মা’মলা করে সিডিএ। এরপর ত’দন্তও শুরু করে পুলিশ এবং ওই বছরের ৩১ অক্টোবর (১৯৯৯) অ’ভিযুক্তদের আ’সামি করে চার্জশিট দেয়। কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তিবলে হাওয়া হয়ে যায় সেই মা’মলা।

বিচ্ছু বাহিনীর হাত থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়টি রক্ষা করতে ১৯৯৯ সালের ২৪ জুলাই সিডিএ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অ’ভিযোগ করেন এ কে খান কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি লিখিত অ’ভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘স’রকারি নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কা’টা নি’ষিদ্ধ।

কিন্তু দু’ষ্কৃতকারীরা অ’বৈধভাবে আমাদের মালিকাধীন আরএস জরিপের ১২৪১ এবং ১২৩৭ দাগের পাহাড় থেকে মাটি কে’টে নিয়ে যাচ্ছে। এ কে খানের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বা’ধা দেওয়া সত্ত্বেও তারা পাহাড় কাটে।’ তিনি পাহাড় কা’টার জন্য বিচ্ছু সামশু এবং তাঁর সহযোগী অহিদুল ইসলাম, হাত কা’টা মোশারফ, কানা সেলিম, মোক্তার এবং মজিদকে অ’ভিযুক্ত করেন।

অ’ভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ দিনের মাথায় ১৯৯৯ সালের ২৯ জুলাই নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি মা’মলা দা’য়ের করেন সিডিএর তৎকালীন সময়ের ইমারত পরিদর্শক মুহাম্ম’দ আবুল কালাম আজাদ। ওই মা’মলায় বিচ্ছু সামশুসহ তাঁর ছয় সহযোগীকে আ’সামি করা হয়। ওই মা’মলায় সিডিএর অনুমতি ছাড়া বেআইনিভাবে দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার আরএস ১২৪১ এবং ১২৩৭ দাগের অন্তর্গত পাহাড় কা’টার অ’ভিযোগ আনা হয়। নিরাপত্তার কারণে তাদের কাজে সরাসরি বা’ধা দিতে অপারগতার কথাও উল্লেখ করে দু’ষ্কৃতকারীদের গ্রে’প্তারের অনুরোধ জানানো হয়।

ওই সময় নি’র্যাতনের শি’কার পাহাড়ে বসবাসকারী এক পরিবারের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ কে খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের ও’পর নজর পড়ে বিচ্ছু সামশুর। পাহাড় কে’টে অ’বৈধ দ’খলে নিতে ওখানে বসবাসরত লোকজনের ও’পর অ’মানুষিক নি’র্যাতন করতে থাকে। মা’রধরের শি’কার হয়ে ওই পাহাড়ে বসবাসরত সবাই পা’লিয়ে যায়।’ তখনকার ঘটনা মনে পড়লে আজও আ’তঙ্কে ভোগেন উ’চ্ছেদের শি’কার অন্য এক পরিবারের সদস্য। ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছু সামশুর স’ন্ত্রাসী বাহিনী ঘর ফে’লে চলে যেতে একের পর এক হু’মকি দিতে থাকে।

যাওয়ার আর কোনো জায়গা না থাকায় তাদের কথা অগ্রাহ্য করে বসবাস করতে থাকি। একদিন রাতে বিচ্ছু বাহিনীর লোকজন তৎকালীন সময়ে নবম শ্রেণি পড়ুয়া আমার বোনকে তুলে নিয়ে যায়। ঘর ছেড়ে চলে না গেলে তাকে গণধ”ণের হু’মকি দেয়। বোনের ইজ্জত বাঁচাতে ঘর ছেড়ে চলে যাই। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে কোথাও অ’ভিযোগ করিনি।’

সামশুর চাঁ’দাবাজিতে জি’ম্মি পটিয়ার শিল্পায়ন:
স’রকারের শিল্পমুখী নীতির কারণে দ্রুত শিল্পায়ন হওয়া অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম পটিয়া। অনেকে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছেন বিনিয়োগ করতে। দ্রুতই বদলে যাচ্ছিল পটিয়ার চিত্র। কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্টিলমিলসহ অসংখ্য কারখানায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছে। নতুন নতুন এসব বিনিয়োগে ‘লোভের চোখ’ পড়েছে পটিয়ার সং’সদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও তাঁর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের।

এক টাকার কাজ পাঁচ টাকা দিয়ে করাতে হচ্ছে বলে অ’ভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পশ্চিম পটিয়ার বারাকা শি’কলবাহা পাওয়ার প্লান্ট, বাংলাদেশ অটো স্প্রিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আনলিমা পাওয়ার প্লান্ট এবং স্বনামধন্য তৈরি পোশাক কারখানা ফোরএইচ গ্রুপ নানাভাবে হুইপ পরিবারের থাবার শি’কার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিল্প গ্রুপ নতুন ঝামেলার আ’শঙ্কায় সব মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিদ্যুৎ প্রকল্পও তাঁদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সামশুল হক ও তাঁর ছেলে শারুনের থাবায় কাজ বন্ধ হয়েছিল পশ্চিম বারাকা শি’কলবাহা পাওয়ার লিমিটেড (বিএসপিএল) নামে প্রতিষ্ঠানটির।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়। জমি ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করে শুরুতেই হোঁচট খায় প্রতিষ্ঠানটি। জমি কেনা ও মাটি ভরাটে বিপত্তি শুরু হয় সামশু ও তাঁর ছেলের বা’ধায়। তাঁদের লোকদের মাধ্যমে জমি ক্রয়, বালি দিয়ে মাটি ভরাট ও নির্মাণসামগ্রী ক্রয়ে প্রতিষ্ঠানটি রাজি হচ্ছিল না। এই কারণে স্থানীয় স’ন্ত্রাসী দিয়ে বা’ধার সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশ অটো স্প্রিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪৪০ শতক জমির ও’পর স্প্রিং মিল স্থাপনের সময়ও একই কায়দায় বা’ধাপ্রাপ্ত হয়। মাটি ভরাট এবং নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ কাজে অন্যায্য সুবিধা করতে না পেরে স’ন্ত্রাসী ভুট্টো ও বুলবুলের নেতৃত্বে হা’মলা চলে।

তারা কারখানায় ব্যাপক ভা’ঙচুর চা’লায়। ওই সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা আট টাকা দরে প্রতি ঘনফুট বালি ভরাটের কাজ ঠিক করেছিল। পরে সেই বালু ১৩ টাকা দরে বিক্রির প্রস্তাব দেয় ভুট্টো ও বুলবুল। কারখানা কর্তৃপক্ষ এতে রাজি না হওয়ায় হা’মলা চা’লিয়ে কারখানা ভা’ঙচুর করে হুইপের অনুসারীরা। অটো স্প্রিং মিলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ছোটখাটো কাজগুলো ওদের (হুইপ ও শারুন) ছেলেদের দিতে বা’ধ্য হয়েছি।

এ ছাড়া প্রায় সাড়ে তিন গণ্ডা বা সাত শতক জমি ছেড়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে বা’ধ্য হয়েছি শারুনের বা’ধার কারণে। শারুন নিজস্ব ক্যাডার দিয়ে চ’রমভাবে জ্বা’লাতন করছিল।’ একইভাবে বা’ধার মুখে পড়েছিল আনলিমা পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভবি’ষ্যতে স’মস্যা হবে—এমন আ’শঙ্কায় প্রকাশ্যে দিতে রাজি হয়নি। তাঁরা বলেছেন, জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়তে চাই না। হুইপের কথার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন