খুলছে হাওরের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

| আপডেট :  ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কিশোরগঞ্জের হাওর। দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ, মেঘ এবং হাওরের জলরাশি যে কাউকে রোমাঞ্চিত করবে। প্রতি বছর পর্যটকরা মিঠামইন অষ্টগ্রাম ও ইটনা হাওরের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। এবার হাওরের সৌন্দর্যের সঙ্গে দেখা মিলবে অভিজাত এক রিসোর্টের। শুক্রবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রিসোর্টটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।

মিঠামইন উপজেলার আগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৩০ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্ট। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। রিসোর্টে ১০টি কটেজ রয়েছে। ৪০টি পরিবার একসঙ্গে থাকতে পারবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এতদিন কিশোরগঞ্জ শহরে থেকেই হাওর ঘুরতে হতো ভ্রমণপিপাসুদের। দিনে গিয়ে আবার দিনে ফিরতে হতো। পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা ছিল না। এসব কথা মাথায় রেখে মিঠামইন উপজেলার আগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৩০ একর জায়গায় দ্বীপের মতো গড়ে তোলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট।

রিসোর্টটিতে রেস্টুরেন্ট, পার্টি সেন্টার ও শিশুদের জন্য খেলার জোন করা হয়েছে। ওপর থেকে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বানানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। বিশাল আয়তনের পুকুরে রাখা হয়েছে বোট। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা লাগানো হয়েছে রিসোর্টের চারপাশে। এসব কিছু নির্মাণ করা হয়েছে আট মাসে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মাস থেকে পর্যটকরা এখানে থাকতে পারবেন। বুকিং নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রিসোর্টের ভাড়া নির্ধারণ হয়ে গেছে। তবে ভাড়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, একদিনের জন্য ভাড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে তা মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। অভিজাত পরিবারগুলোর পক্ষেই কেবল রিসোর্টে রাত্রিযাপন সম্ভব হবে। মধ্যবিত্তদের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি।

রিসোর্ট কর্তৃপক্ষর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রিসোর্টে একরাত থাকার জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা। সর্বোচ্চ ভাড়া ২৮ হাজার টাকা। তবে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য নিঃসন্দেহে এই রিসোর্ট হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যম। বর্ষায় পানির ওপর রোদবৃষ্টির খেলা, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা, ডিঙি নৌকা, ট্রলার কিংবা স্পিডবোটের ভ্রমণ দেখতে পারবেন।

মিঠামইন উপজেলার চারপাশে আরও তিনটি হাওরবেষ্টিত উপজেলা রয়েছে। সেগুলো হলো নিকলী, অষ্টগ্রাম ও ইটনা। রিসোর্টে থেকে হাওরগুলো ঘুরে দেখা যাবে। তিনটি হাওরে পাঁচ-ছয় মাস পানি থাকে। বাকি সময় পানি না থাকলেও জায়গাগুলো সুন্দর।

ময়মনসিংহ থেকে কয়েকজন বন্ধু হাওরে ঘুরতে এসেছেন। তাদের মধ্যে রিয়াদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কক্সবাজার ছাড়া এত দিগন্ত বিস্তৃত পানি, এত বড় বড় ঢেউ অন্য কোথাও আছে হাওরে না এলে জানতাম না। ময়মনসিংহ থেকে মোটরসাইকেলে আট বন্ধু চামড়া বন্দরে এসেছি। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে মিঠামইন হয়ে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট দেখতে এলাম। সত্যিই অসাধারণ এবং দৃষ্টিনন্দন। খুব ভালো লাগলো। ভবিষ্যতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে থাকার পরিকল্পনা করবো।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এ.বি.এম শাহরিয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আমরা আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ রিসোর্টটি গড়ে তুলেছি। তিন তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। রুম কোয়ালিটি ও ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় নিয়ে ভাড়া ও প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেকোনো পরিবার নিরাপদে অবকাশ যাপন করতে পারবেন।’

মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পি.এস মহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য এই রিসোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে পর্যটকদের প্রত্যাশার সঙ্গে সমন্বয় রেখে যদি রিসোর্টটি পরিচালনা করা হয়, তবে পর্যটক বাড়বে। এখন হাওরের অলওয়েদার সড়ক দেখতে পর্যটকরা ভিড় করছেন। এরই মধ্যে রিসোর্ট নিয়ে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কাজেই পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।’

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। শুক্রবার (০২ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তার থাকার কথা রয়েছে।

যেভাবে যাবেন:

মিঠামইন হাওর ও প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট দেখতে দেশের যেকোনো জায়গা থেকে আসতে হবে কিশোরগঞ্জ শহরে। সেখান থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা কিংবা চামটা বন্দর যেতে হবে সিএনজি কিংবা অটোরিকশায়। সময় লাগবে ৩০-৩৫ মিনিট। তারপর ট্রলার কিংবা স্পিডবোট ভাড়া করে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে যেতে পারবেন।