মা-ছেলেকে অ’পহরণ করা সেই এএসপি’র কোটি টাকার বাড়ি!

| আপডেট :  ২৭ আগস্ট ২০২১, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ আগস্ট ২০২১, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশ: বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। টানাপড়েনের সংসার। এর পরও স’ন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে প্রা’ণপণ চেষ্টা করেন। একসময় তিনি সফল হন। ছেলে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে বিবিএ, এমবিএ শেষ করে ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পান।

সেই ছেলে রংপুরে অ’পরাধ ত’দন্ত বিভাগের (সিআইডি) এএসপি (সহকারী পুলিশ সুপার) সারোয়ার কবির, যাঁকে গত মঙ্গলবার দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা ও ছেলেকে অ’পহরণ করে মু’ক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় তিন সহযোগীসহ আ’টক করা হয়। গত বুধবার তাঁদের গ্রে’প্তার দেখিয়ে আ’দালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক জে’লহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, সারোয়ার কবির ওরফে সোহাগ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কালারামজোত এলাকার স্কুল শিক্ষক মতিউর রহমানের ছেলে। তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দীন গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক বিএসসি শিক্ষক মতিউর। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সারোয়ার ছিলেন মেধাবী। ২০১৬ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের এক ওসির মেয়েকে বিয়ে করেন সারোয়ার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, সারোয়ার কবির চাকরিতে যোগদানের কয়েক বছরের মাথায় তেঁতুলিয়া উপজে’লা সদরের ডাঙ্গিবস্তি এলাকায় কোটি টাকার বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাঁর বি’রুদ্ধে আগে থেকেই মা’দক গ্রহণের অ’ভিযোগ রয়েছে। তবে এ বি’ষয়ে সারোয়ারের পরিবারের কারো সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

‘ভালো ছেলে’ আহসান : দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মা ও ছেলেকে অ’পহরণ করে মু’ক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় গ্রে’প্তার সিআইডির কনস্টেবল আহসান উল ফারুকের বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজে’লার দলগ্রামে। তাঁর ডাকনাম পুলক। তিনি রংপুরে চাকরি করলেও বাড়ি থেকে যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিনেও বাড়ি থেকে সেখানে গিয়েছিলেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আহসান। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক না টেকায় দুই দশকেরও বেশি সময় আগে তিন ভাইকে নিয়ে তাঁর মা দলগ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান। শিক্ষকতা করে সেখানেই স’ন্তানদের বড় করেন তিনি। এসএসসি পাস করার পর আহসান যোগ দেন পুলিশে। তাঁর ছোট ভাই কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক। আরেক ভাই একটি বেস’রকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ওই কনস্টেবলের স্ত্রী স্বা’স্থ্য বিভাগে কর্মরত। আহসানের মামা রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। মূলত তিনিই মানুষ করেছেন আহসানসহ অন্য ভাইদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার দিন ছুটিতে বাড়িতেই ছিলেন সিআইডির ওই কনস্টেবল। এএসপি সারোয়ার কবিরের ডাকেই নিজের মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে চিরিরবন্দরে তাঁর মাইক্রোবাসটিই আ’টক হয়। স্থানীয় লোকজন আহসানুল হককে ‘ভালো’ ছেলেই হিসেবেই জানে। এর আগে তাঁর বি’রুদ্ধে এ ধরনের কোনো অ’ভিযোগ কেউ শোনেনি বলে জানিয়েছে তারা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। গত বছর টাকা জমা দিয়েও ক’রোনার কারণে হজে যেতে পারেননি।

আহসানের স্ত্রী শামীমা জাহান বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। বদলিজনিত কারণে তিনি বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু এএসপি তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।’

টাকার গরমে বে’পরোয়া হাসিনুর : সিআইডির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাসিনুর রহমানের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজে’লার বিজোড়া ইউনিয়নের রসুল সাহাপুর গ্রামে। ওই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফার ছেলে তিনি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হাসিনুরের বাবা খুব ভালো মানুষ। তবে হাসিনুরের আচরণের কারণে এলাকায় কেউ তাঁকে পছন্দ করে না। তিনি গ্রে’প্তার হওয়ায় খুশি গ্রামবাসী। কারণ হাসিনুর নিজ গ্রামের মানুষকে ‘মানুষ মনে করতেন না কখনো’।

বিজোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন হাসিনুর। ছেলেবেলা থেকে এমনিতে এলাকার কেউ তাঁকে পছন্দ করে না। তার ও’পর চাকরিতে যোগদানের পর থেকে টাকার গরমে হাসিনুর হয়ে ওঠেন আরো বে’পরোয়া।

দায় নেবে না সিআইডি : তিন সদস্য গ্রে’প্তারের দায় সিআইডি নেবে না বলে জানিয়েছেন রংপুর সিআইডির এসপি (পুলিশ সুপার) আতাউর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁরা আমার অনুমতি না নিয়ে চিরিরবন্দরে অ’ভিযানে গেছেন। তাঁদের মধ্যে এএসআই ও কনস্টেবল ২১ আগস্ট থেকে ১০ দিনের ছুটিতে ছিলেন। তাঁরা একটি অ’ভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে যান।

স’রকারি গাড়ি ব্যবহার না করে এবং অনুমতি ছাড়াই তাঁরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে অপারেশনে যান। তাঁদের অ’পকর্মের দায়ভার সিআইডি নেবে না।’ তাঁদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।