মাশরাফিকে ব্যবহার করে যেভাবে ফাঁদ পেতে ছিল ই-অরেঞ্জ

| আপডেট :  ২৬ আগস্ট ২০২১, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৬ আগস্ট ২০২১, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন শপিংমলে লো’ভনীয় অফারের ফাঁদে পরে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ গ্রাহক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভা’রি দিচ্ছে না। আর গ্রাহকদের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাত করতে বিভিন্ন ধরনের নাট’কী’য় কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে ই-কমা’র্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

তেমনি একটি ই-কমা’র্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করতে এক অ’ভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। গত এক বছরে ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক দুটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা জমা হয়। দুই অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৫ টাকা জমা আছে।

ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের ক্ষোভ অনুমান করতে পেরে নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে গত ১১ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থা’নায় মা’মলা করেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ অ’পারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী।
জানা গেছে, ই-অরেঞ্জ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভা’রি না দেয়ায় চাপের মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহ’জাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, চিফ অ’পারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরীসহ অনেকেই।

গ্রাহকদের এতো টাকা পরিশোধ সম্ভব নয় বিষয়টি বুঝতে পেরে ১১ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থা’নায় ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যসহ চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আ’সামি করে মা’মলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী। তবে শেষমেষ রক্ষা পায়নি আমাউল্লাহ চৌধুরী।

গ্রাহকের ১,১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অ’ভিযোগে গত ১৭ আগস্ট গুলশান থা’নায় ই-অরেঞ্জের সোনিয়া মেহ’জাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, চিফ অ’পারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ মালিক-পরিচালকের বি’রুদ্ধে মা’মলা করেন তাহেরুল ইস’লাম নামের এক ব্যক্তি।

ওই দিনই সোনিয়া মেহ’জাবিন ও মাসুকুর রহমান আ’দালতে আত্মসম’র্পণ করেন। বিচারক তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান। এর পরদিন গুলশান এলাকা থেকে আমানউল্লাহকে গ্রে’প্তার করে পু’লিশের একটি দল। এই তিনজনই এখন রি’মান্ডে আছেন।

গত ১১ আগস্ট চিফ অ’পারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহ চৌধুরী মা’মলায় অ’ভিযোগ করেন, আ’সামিরা পারস্পরিক যোগসাজশ করে ই-অরেঞ্জের ৬৬৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ত’দন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রাহকের ক্ষোভ অনুমান করেই নিজেদের দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থা’নায় মা’মলা করেন আমানউল্লাহ চৌধুরী।

ওই মা’মলা ত’দন্ত করতে গিয়ে ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট যাচাই করেছে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ। এ ছাড়া সাবেক সিওও নাজমুল ইস’লাম রাসেল ও মোটরসাইকেল বিক্রির চারটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও গ্রে’প্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইস’লাম বলেন, মা’মলা’টি ত’দন্ত করতে গিয়ে দেখলাম, যে অঙ্কের টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে তা আসলে ঠিক নয়। কারণ ই-অরেঞ্জের অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের যে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ভেন্ডরদের কাছ থেকে সেসব প্রমাণ আম’রা পাচ্ছি। শিগগিরই আম’রা এ মা’মলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেব।

ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক স্টেটমেন্টের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা কর্মক’র্তা বলেন, আমানউল্লাহর করা মা’মলায় ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অ’ভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভেন্ডরকে ৩৬ হাজার ২৮১টি মোটরসাইকেলের দাম বাবদ ৬৫৮ কোটি ৯১ লাখ ৯ হাজার ৩২ টাকা পরিশোধ করে ই-অরেঞ্জ।

ভেন্ডররা এসব মোটরসাইকেল গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বাকি চার কোটি টাকার মধ্যে সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেলের স্ত্রী’ ফারিয়া সুবহার একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সাপ্লাইয়ার হিসেবে ই-অরেঞ্জের চুক্তি ছিল।

ওই প্রতিষ্ঠানে ই-অরেঞ্জের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। এর মধ্যে রাসেল ও তার স্ত্রী’ এক কোটি ৪২ লাখ টাকার মতো প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের বিল-ভাউচার আমাদের দেখাতে পেরেছেন।

ওই কর্মক’র্তা বলেন, গ্রাহকের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই ১১ আগস্ট ই-অরেঞ্জ মা’মলা’টি করেছিল। এতে ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অ’ভিযোগ করা হয়, যাতে গ্রাহকরা মনে করেন, ভেন্ডররা টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভা’রি দিচ্ছে না।