সাংসদ স্টিকার লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় নেতা!

| আপডেট :  ২৫ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৫ আগস্ট ২০২১, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সাংসদদের গাড়িতে ব্যবহারের জন্য বিশেষ স্টিকার প্রদান করা হয়। আবেদন করার ভিত্তিতে সাধারণত এই স্টিকার সরবরাহ করা হয়। তবে সম্প্রতি সাংসদ স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে এক স্থানীয় নেতাকে!

তিনি মূলত একজন ঠিকাদার, জীবনে কোন দিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও অংশ নেননি। কিন্তু গাড়িতে সংসদ সদস্য লেখা স্টিকার লাগিয়ে ঘোরেন।

সেই গাড়ি নিয়ে সচিবালয় থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা সব জায়গাতেই তার অবাধ পদচারণা। এলাকায় যখন যান তখন গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে থাকা সংসদ সদস্য লেখা মনোগ্রামটি ঢেকে রাখেন। কিন্তু ঢাকায় আসলেই তা আবার দৃশ্যমান হয়ে যায়।

নাম তার মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ। সম্প্রতি তিনি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ বছরের ২৪ এপ্রিল পটুয়াখালী-৩, গলাচিপা-দশমিনা এলাকার সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদার সাথে এমপি হোস্টেলে তার সরকারি অফিসে দেখা করতে যান মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ।

তখন তিনি ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ নম্বরের গাড়ি নিয়ে জাতীয় সংসদ এলাকায় প্রবেশ করেন। গাড়ির সামনের ড্যাশ বোর্ডে সংসদ সদস্য লেখা সম্বলিত জাতীয় সংসদের একটি স্মারক ছিল। যা গাড়িতে ব্যবহারের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ সদস্যদের দেয়া হয়।

আর সামনের কাঁচে ছিল সংসদ সচিবালয় থেকে দেয়া স্টিকার। আবার ৪ মে রাতেও তিনি স্থানীয় সাংসদের সাথে দেখা করতে যান একই স্টিকার ও স্মারক লাগানো গাড়ি নিয়ে।

ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সময়ও তিনি সংসদ সদস্য লেখা গাড়িটি ব্যবহার করেন। এতে করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশ তাকে সংসদ সদস্য হিসেবেই মনে করত।

বিআরটিএ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ নম্বরের গাড়িটি মোফাজ্জেল হোসেনের নামে নিবন্ধন করা।

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় যখন তিনি পটুয়াখালীতে যান। তখন গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা জাতীয় সংসদের প্রতীক সম্বলিত সংসদ সদস্য লেখা স্মারকটি সরিয়ে ফেলেন বা ঢেকে রাখেন। তবে সংসদ সচিবালয়ের ত্রিভুজ আকৃতির স্টিকারটি লাগানো থাকে।

২৫ জুলাই গলাচিপা পৌর এলাকায় নিজ বাসায় মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ অবস্থানকালীন সময় দেখা গেছে, বাসার সামনে রাখা গাড়িতে সংসদ সচিবালয়ের স্টিকার লাগানো আছে। আর ড্যাশ বোর্ডে থাকা সংসদ সদস্যের স্মারকটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, সংসদের নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এ বিষয়ে একাত্তরকে জানান, এই গাড়িটির সন্দেহজনক ঘোরাফেরা তাদের নজরে এসেছে।

ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ গাড়িটিকে কখনোই সংসদ সচিবালয়ের স্টিকার দেয়া হয়নি। আর সংসদ সদস্য লেখা যে মনোগ্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও এখন দেয়া হয় না।

এটি একটি জাল স্টিকার বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ স্টিকারের বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা দাবী করে এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে জানান।

তবে তার গাড়ির পর্যাপ্ত ছবি আছে জানালে এগুলো ফটোশপ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। ভিডিও ফুটেজেও আছে এমনটা জানানোর পর, মোফাজ্জেল মাসুদ কিছুক্ষন চুপ করে থাকেন।

এরপর তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা এটি তাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন, তবে এখন তিনি এগুলো খুলে ফেলেছেন। এলাকায় গুঞ্জন আছে মোফাজ্জেল মাসুদের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে।

সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা এই স্টিকার মাসুদকে দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি কিভাবে স্টিকার দেবো? আমি কি স্টিকার প্রোডাকশন করি নাকি? এমপি হিসেবে সংসদের স্টিকার পেতে আবেদন করতে হয় এবং এটি গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তারপর দেয়া হয়। তাকে কেন আমি সংসদ সদস্যের স্টিকার দেবো?”

তিনি আরো বলেন, “সংসদ সচিবালয় থেকে আমার পিএ’র কাছে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি সেখানেও বলে দিয়েছি কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। আর সংসদ সদস্য না হয়েও এই স্টিকার ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ”।

এই সংসদ সদস্য আরো দাবি করেন, মাসুদের সাথে তার কোন ধরনের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব নেই।

সূত্র: একাত্তর টিভি