সচিবের মায়ের সেবা করতে হাসপাতালে ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী!

| আপডেট :  ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের মা। তার সেবায় নিয়োজিত থাকছেন উপসচিবসহ ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের তিন দিনে চারটি শিফটে ৬ ঘণ্টা করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এ সংক্রান্ত একটি লিখিত নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি টেলিভিশন, “চ্যানেল ২৪”- এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব সমন্বয় করছেন। লিখিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সচিবের মায়ের সার্বিক অবস্থা সার্বক্ষণিক জানাতে হবে পিএসকে, চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ, টেস্ট করানোর ও তা দ্রুত সংগ্রহ করা এবং হোয়াটসঅ্যাপে সচিবের পিএসকে রিপোর্টের কপি পাঠাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকতে হবে রোগীর কাছাকাছি, রোগীর এটেন্ডেটের কাছে জানান দিতে হবে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি।

নির্দেশনাটিতে আরও বলা হয়েছে, ২৩ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম এনালিস্ট মো. ইলিয়াস হোসেন ও অফিস সহায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) এনিমেল প্রোডাকশন অফিসার আলী রেজা আহমেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান বিভূ চন্দ, রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তরের (ডিওএফ) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রেইনি সহকারী সানোয়ার হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন।

২৪ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডিওএফ এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ পাভেজ এবং অফিস সহায়ক মো. নাজির হোসেন পারভেজ, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রোগ্রামার নূর মোহাম্মদ ও অফিস সহায়ক মো. আব্দুল কাদের, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক মিয়া ও ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. শহিদ উল্যাহ দায়িত্ব পালন করবেন।

২৫ আগস্ট ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপ-সচিব পুলকেশ মন্ডল ও ট্রেইনি সহকারী জগদীশ চন্দ্র দাস, দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম ও ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ডিওএফ এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম পাটওয়ারী ও অফিস সহায়ক মো. মফিজ হোসেন, রাত ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম নিয়াজ মোর্শেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান জিএম শাহিনুর ইসলাম দায়িত্ব পালন করবেন।

দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ৩ দিনের জন্য শিফট করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মতো তারা দৈনিক ছয় ঘণ্টা করে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে এ বিষয়ে ওই সচিবের একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। সচিব রওনক মাহমুদ জানান, আমার ৯৫ বছর বয়সী অসুস্থ মাকে দেখতে যাচ্ছে- এ নিয়েও প্রতিবেদন লেখা হলে কিছু করার নেই।

এসময় তিনি লিখিত কোনো নির্দেশনা দেননি বলেও জানান। তিনি বলেন, “লিখিত নির্দেশনা দেই, এটা বললে আপনারা বলবেন আমি অস্বীকার করছি। ফলে এ বিষয়ে আমাকে আর জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আপনারা সরেজমিনে গিয়ে দেখেন। আমার কাছে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। যেটি বাস্তব পাবেন সেটি লিখেন।” সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন