ওসির চেয়ে বড় কর্মকর্তার ভাব নিয়ে মামলা তদন্ত করেন এসআই লাভলীর স্বামী!

| আপডেট :  ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৪:২২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ আগস্ট ২০২১, ০৪:২২ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে কর্মরত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এক কর্মকর্তা চট্টগ্রামে ইয়াবাসহ আ’টকের রেশ কাটতে না কাটতে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন একই অফিসের আরেক কর্মকর্তা এসআই লাভলী ফেরদৌসী। অফিস থেকে দায়িত্ব পাওয়া মা’মলার ত’দন্তে সঙ্গে নেওয়া তার স্বামী ‘ওসির চেয়ে বড় কর্মকর্তা’ সেজে

প্রভাব বিস্তার করছেন। মা’মলার ত’দন্ত রিপোর্ট এদিক-সেদিক করতে সুবিধামতো হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে বিবা’দীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে রিপোর্ট বা’দীর বি’রুদ্ধে দেয়ার অ’ভিযোগও প্রকাশ্যে এসেছে। মা’মলার রিপোর্ট দেয়ার বি’ষয় নিয়ে আর্থিক লেনদেনের একটি অডিও সম্প্রতি ফাঁ’স হলে আলোচনায় আসেন এসআই লাভলী। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

এছাড়াও ধার নেয়া টাকা আ’ত্মসাৎ করে প্র’তারণা ও পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে স্বামীকে দিয়ে অন্যের বসতবাড়ি দ’খল চেষ্টার অ’ভিযোগ উঠেছে তার বি’রুদ্ধে। কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেওয়া লাভলী এসআই হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পরও ডিপার্টমেন্ট পাল্টিয়ে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় দ্বিতীয় স্বামীর বাড়ি কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এ কারণে তার অ’পকর্মের ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে।

ফাঁ’স হওয়া অডিওতে শোনা যায়, বা’দীপক্ষের জনৈক ব্যক্তি দশ হাজার টাকা দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এসআই লাভলী বলেন, আমি যা আশা করছিলাম তার চার ভাগের একভাগও হয়নি। না না না, দশ হাজার দিলে হবে না। আমরা দু’দিক হাতে রেখে কাজ করি। অন্য রিপোর্ট দেওয়াও কোনো বি’ষয় না।
অডিও ফাঁ’স হওয়ার পর পিবিআই কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে, তার স্বামী-স্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সংসার ভে’ঙেছে এমন দাবি করে ঈদগাঁওয়ের ভু’ক্তভোগী রাজিয়া সুলতানা রিমি বলেন, আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির কয়েকজনের বি’রুদ্ধে আ’দালতে একটা লা’ঞ্ছনার মা’মলা করলে তা ত’দন্তে পিবিআইকে দেওয়া হয়। ওই মা’মলার আইও হন এসআই লাভলী ফেরদৌসী। কিন্তু দুঃ’খজনক হলো মা’মলার ত’দন্তে সঙ্গে আসা তার স্বামী পরিচয়ে শাহাজান নামের এক ব্যক্তি আমার পক্ষে রিপোর্ট দিতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আমার অ’সহায়ত্বের কথা তুলে ধরি। তারা চলে গিয়ে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি থেকে দাবি মতো ৫০ হাজার টাকা পেয়ে রিপোর্টটি আমার বি’রুদ্ধে দেয়।

তিনি আরও বলেন, এসব তথ্য উল্লেখ করে আমি পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে লিখিত অ’ভিযোগ দিয়ে মা’মলার ত’দন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। আর তার মি’থ্যা প্রতিবেদনের কারণে আমার সংসার ভে’ঙে গেছে এবং আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনাও চা’পা পড়ে যায়।

এছাড়া কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার ফরিদা নামে এক গৃ’হবধূ জানান, এসআই লাভলী ফেরদৌসী টুরিস্ট পুলিশে থাকা অবস্থায় একদিন আমাদের কাছে এসে বলেন, টুরিস্ট পুলিশ থেকে বদলি হতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হচ্ছে। কিছু টাকা অপূর্ণ রয়েছে উল্লেখ করে, দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সূত্রে লাভলী ফেরদৌসি ও তার স্বামী শাহজাহান আমাদের কাছে সহযোগিতা চান। আমি নিজের স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু বুঝতে পারিনি তারা স্বামী-স্ত্রী এতটা প্র’তারক। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে আমাদের ক্ষ’তি করেছে। পারিবারিকভাবে চ’রমভাবে অশান্তিতে পড়েছি। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে পিবিআইয়ের মহাপুলিশ পরিদর্শক, এআইজি ও পিবিআই এর এসপিকে লিখিত অ’ভিযোগ দিয়েছি গত ১৮ আগস্ট।

এছাড়াও পুলিশী ক্ষমতার অ’পব্যবহারে করে অন্যের বসতবাড়ি দ’খলের চেষ্টার অ’ভিযোগ উঠেছে এসআই লাভলীর বি’রুদ্ধে। স্থানীয় থানায় প্রভাব খাটিয়ে ও মি’থ্যা তথ্য দিয়ে লাভলীর স্বামী শাহজাহানের নেতৃত্বে চাচার বসতবাড়ি দ’খল চেষ্টার অ’ভিযোগ করেছেন ভু’ক্তভোগীরা। ইতোমধ্যে কয়েকবার বাড়িতে হা’মলাও করেছে বলে অ’ভিযোগ করেছেন তার (শাহজাহানের) চাচা রামুর চেইন্দা এলাকার ভু’ক্তভোগী ছৈয়দ আহম’দ।

তিনি বলেন, আমার ছেলে স’ন্তান না থাকায় ভাতিজারা প্রায় সময় চাষের জমি দ’খলের চেষ্টা চা’লায়। তাদের থেকে আলাদা হয়ে আমার বসতবাড়ি সংস্কার করতে গেলে সেখানে বা’ধা দেয় শাহাজাহান ও তার সহোদররা। আমি আইনের আশ্রয় নিতে গেলে এসআই লাভলী থানায় (রামু থানায় একসময় কর্মরত ছিলেন) প্রভাব বিস্তার করেন। ফলে ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। বর্তমানে আমার অবিবাহিত দু’মেয়ে নিয়ে চ’রম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণ কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমার ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে গত ১১ আগস্ট পিবিআইয়ের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি)সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অ’ভিযোগ দিয়েছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাভলী কক্সবাজার কোর্ট পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় রামুর চেইন্দা এলাকার বেলাল আহম’দের ছেলে সুদর্শন শাহাজাহানের সঙ্গে প’রকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সাইফুলকে স’ন্তানসহ ত্যাগ করে প্রেমিক শাহজাহানকে বিয়ে করেন লাভলী। পুলিশ কর্মকর্তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে বে’পরোয়াভাবে অ’নৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন কর্মহীন শাহজাহান। তার বি’রুদ্ধে প্র’তারণা, ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মা’মলা ত’দন্তে প্রভাব এমন কি পুলিশ কর্মকর্তা না হয়েও নিজেই স্ত্রীর মা’মলা ত’দন্ত করার অসংখ্য অ’ভিযোগ উঠে এসেছে। বি’ষয়টি নিয়ে পিবিআই কক্সবাজার শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের অনেকেই বিব্রত বলে জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন সময় মা’মলা ত’দন্তে যাওয়ার সময় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে যান এসআই লাভলী। যা আইনত তিনি করতে পারেন না। বি’ষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর।

জানতে চাইলে এসআই লাভলী ফেরদৌসী সব অ’ভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ত’দন্তের জন্য আমাকে তেমন মা’মলা দেওয়া হয় না। এরপরও আমার স্বামীর বাড়ি যেহেতু এখানে, বা’দী বিবা’দী হয়তো সুবিধা নিতে আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু, স্বামীর প্রভাব মুক্ত থেকেই কাজ করে আসছি। তবে, প্রচার পাওয়া অডিওর বি’ষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি তিনি।

এ বি’ষয়ে পিবিআইয়ের কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) সরওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, অ’ভিযোগগুলো অবগত হয়েছি। গত ৬ মাসে লাভলীকে মাত্র একটা মা’মলা ত’দন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। অ’ভিযোগ ত’দন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, বসতবাড়ি দ’খল চেষ্টার বি’ষয়টা তাদের পারিবারিক বলে জেনেছি।

এ বি’ষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই মহাপরিচালক প্রকৌশলী বনজকুমার মজুম’দার যুগান্তরকে বলেন, ওই নারী এসআইয়ের বি’রুদ্ধে উঠা কিছু অ’ভিযোগের বি’ষয়ে আমি অবগত আছি। তবে, সেকি এখনো কক্সবাজারে কর্মরত? এমন প্রশ্ন করে পিবিআই ডিজি বলেন, আজই খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রঃ যুগান্তর