গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায় ইভ্যালি

| আপডেট :  ২৩ আগস্ট ২০২১, ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ আগস্ট ২০২১, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের আস্থা অর্জন করে ফের ঘুরে দাঁড়াতে চায় বহুল আলোচিত ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। দেশে ই-কমার্সের প্রচলন খুব বেশি দিন না হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে ইভ্যালি দেশের ৭০ লাখেরও বেশি গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করেছে। শুধু তাই নয়, লকডাউন পরিস্থিতিতেও গত এক মাসে দুই লাখের বেশি পুরোনো অর্ডারের পণ্য সরবরাহ করেছে তারা।

‘ব্যবসায়িক অবস্থান থেকে বর্তমানে ইভ্যালির সময় ভালো যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতির উত্তরণে কিছু সময়ের প্রয়োজন। বর্তমানে যারা সরবরাহকারী, তারা যদি আশ্বস্ত হন, তাহলে ব্যবসার পরিধি বাড়বে। একই সঙ্গে গ্রাহকরা যদি পণ্যের ব্যাপারে আশ্বস্ত হন তাহলে অর্ডার বেশি করে করবেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগও বাড়বে। সর্বোপরি গ্রাহক ও সরবরাহকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আস্থা অর্জন করে ফের ঘুরে দাঁড়াবে ইভ্যালি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দুঃসময় কাটিয়ে আবারও ব্যবসা-বাণিজ্যে ফিরবে এই প্রতিষ্ঠান।’

রোববার (২২ আগস্ট) এক অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে আলাপকালে ইভ্যালির নির্বাহী পরিচালক (স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন) এহসান সারওয়ার চৌধুরী এ কথা বলেন।

ইভ্যালির সার্বিক সমস্যা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক এহসান সারওয়ার চৌধুরী বলেন, আজই (গতকাল) প্রথম অফিস খুলেছে। গ্রাহকদের কার কী সমস্যা তা জানার জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট সেন্টার খোলা হয়েছে। গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলে পুরোনো যে অর্ডারগুলো রয়েছে সেগুলো কীভাবে দ্রুত সরবরাহ করা যায় সেই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

‘এ লক্ষ্যে ইভ্যালির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। এজন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। এ সময়ে ভোক্তারা অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকুন, তা আমরা চাই না। সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিস্থিতি পুনরায় স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চলছে’— বলেন তিনি।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এবং সে কারণে বর্তমান পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবসার ক্ষেত্রে নিজস্ব বাজারনীতি (মার্কেটিং পলিসি) অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইভ্যালি গ্রাহকদের পণ্যের ওপর কমিশন দিয়ে এগিয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরাই লাভবান হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৭০ লাখ পণ্য ডেলিভারি হয়েছে। গ্রাহকরা লাভবান হওয়ায় তারা বিনিয়োগ করেছেন। যারা পণ্য পেয়েছেন মিডিয়ায় তাদের কথা আসেনি, আসছে কিছুসংখ্যকের কথা যারা পণ্য ডেলিভারি পাননি।

এহসান সারওয়ার চৌধুরী আরও বলেন, ইভ্যালির পণ্য সরবরাহ শুধু নিজস্ব গুদাম থেকে দেয়া হয় না, কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য সরবরাহের চুক্তি থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান নিজে পণ্য সরবরাহ করে কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য পাঠায়। কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আবার সাব-কুরিয়ার এজেন্সির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে। পণ্য সরবরাহের এ চক্রে যে কোনো স্থানে বিলম্ব হতে পারে। ইভ্যালির পণ্য কিনে কেউ বিলম্বে পেতে পারে, কিন্তু টাকা খোয়া গেছে এমনটা কেউ বলতে পারবে না।

ইভ্যালি সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনটি ধাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে তথ্য চেয়েছে। প্রথম দফায় আর্থিক দায় ও সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়। এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এটি জমা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৬ আগস্ট গ্রাহকের কাছে দায় ও ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহকারীদের কাছে দায় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে।

সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথম দফায় যে বিবরণী দিয়েছে, সেখানে তারা তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দেখিয়েছে ৪২৩ কোটি টাকা। আর ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের পাওনা ও অন্যান্য ব্যবসায়িক দেনার পরিমাণ দেখিয়েছে ৫৪৩ কোটি টাকা।

ইভ্যালি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল দাবি করেন, বর্তমানে কোম্পানির ইনট্যানজিবল অ্যাসেট বা বাস্তবে নেই এমন সম্পদ ৪৩৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ব্র্যান্ডভ্যালু, পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ককে ইনট্যানজিবল অ্যাসেট বলা হয়। ইভ্যালির এ ধরনের সম্পদের মধ্যে কোম্পানির ব্র্যান্ডভ্যালু ধরা হয়েছে ৪২২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

ইভ্যালি জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের কোম্পানিতে ই-কমার্স ছাড়াও ইফুড, ইজবস, ইবাজার, ইহেলথ, ফ্লাইট এক্সপার্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হয়েছে। কোম্পানির সার্বিক ব্র্যান্ডভ্যালু আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। এছাড়া ১০৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ট্যানজিবল বা বাস্তব সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সম্পদ ও যন্ত্রপাতি রয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকার। চলতি সম্পদ ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ও সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর একই ধরনের ব্যবসা মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ইভ্যালির ন্যূনতম ব্র্যান্ডভ্যালু দাঁড়ায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির ব্র্যান্ডভ্যালু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তারা শুধু ব্যয়ের সমপরিমাণ অংশটুকু বিবেচনা করেছে।