ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাবে নিলে ইভ্যালির দেনা নেই : এমডি রাসেল

| আপডেট :  ২০ আগস্ট ২০২১, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ আগস্ট ২০২১, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির মোট দেনার পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। এই দেনার বিপরীতে তাদের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য মোট সম্পদ রয়েছে ৫৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা। তবে এতে অদৃশ্য সম্পদ হিসেবে ৪২৩ কোটি টাকাই দেখানো হয়েছে ইভ্যালির ব্র্যান্ড ভ্যালু মূল্যায়নের মাধ্যমে।

ব্র্যান্ড ভ্যালু হিসাবে নিলে ইভ্যালির কোনো দেনা নেই।চলতি বছর ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে চাওয়া কোম্পানির সম্পদ ও দায় বিবরণীর এমন তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল। খবর- নিউজবাংলার

১৯ আগস্টের মধ্যে কোম্পানির সম্পদ ও দায় বিবরণী সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক জবাব চেয়ে মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানাল ইভ্যালি। এর মধ্য দিয়ে তিন ক্যাটাগরির প্রথমটির জবাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইভ্যালির কাছ থেকে পেল মন্ত্রণালয়।

সম্পদ ও দায় বিবরণী সংক্রান্ত পত্রের অনুলিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা, ব্যবসায়ীক ব্যয় সংক্রান্ত দেনাসহ অন্যান্য সকল দেনাবাবদ ইভ্যালির মোট চলতি দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির এই দায়ের মোট পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তদন্ত দল প্রতিবেদনে মতামত ব্যক্ত করে জানিয়েছিল, ইভ্যালির প্রকৃত দায় আরও বেশি হতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির তাদের যে দেনার হিসাব দিয়েছে (৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা) সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দলের প্রতিবেদনের তথ্য থেকে ১৩৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা বেশি।

এদিকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাব বিবরণীপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তাদের যে দায় দেখানো হয়েছে, তার বিপরীতে মোট ৪৩৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার ৮৪১ টাকা অদৃশ্য সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ড ভ্যালু দেখানো হয়েছে, ৪২২ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার ৬৯৫ টাকা এবং শুধু অদৃশ্য সম্পদ দেখানো হয় মোট ১৫ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ১৪৬ টাকা।

অন্যদিকে উল্লিখিত দেনার বিপরীতে ইভ্যালি দৃশ্যমান সম্পদের হিসাব দেখায় মোট ১০৫ কোটি ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা। যেখানে চলতি সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে কোম্পানিটির চলতি সম্পদের মূল্য ৬৫.১৭ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ চলতি সম্পদের মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের চেয়ে ২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বেশি বলে দাবি করেছে ইভ্যালি।

এ ছাড়া দৃশ্যমান সম্পদ বিবরণীতে সম্পত্তি এবং সরঞ্জামের মূল্য দেখানো হয় আরও ১৪ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৬ টাকা। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটির ইক্যুইটির দায় রয়েছে আরও ১ কোটি টাকা।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘বিগত ৩১ জুলাই, ২০২১ তারিখে আমাদের পাঠানো পত্রে মন্ত্রণালয়ের চাওয়া তথ্যাদি যথাযথভাবে উপস্থাপনের জন্য তৃতীয় নিরপেক্ষ নিরীক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সময় চাওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত সম্পদ ও দায়ের বিবরণী অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্য সংযুক্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো।’

চিঠিতে রাসেল দাবি করেন, ‘বর্তমানে ইভ্যালিতে ই-কমার্স ছাড়াও আরও বেশ কিছু সফল ডিজিটাল প্লাটফর্ম যথা: ইফুড, ইজবস, ইবাজার, ইহেলথ, ফ্লাইট এক্সপার্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা কোম্পানির সার্বিক ব্র্যান্ড ভ্যালুকে আরও সমৃদ্ধ করছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ও সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের একই ধরনের ব্যবসায়ের মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বর্তমানে ইভ্যালির ন্যূনতম ব্র্যান্ড ভ্যালু ৫ হাজার কোটি টাকা হয়। তবে, আমাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র ব্যয়ের সমপরিমাণ অংশটুকু বিবেচনা করেছি।’

চিঠিতে শুধু গত এক মাসে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৮ কোটি পুরাতন অর্ডার সফলভাবে ডেলিভারি সম্পন্ন করার তথ্য দেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘এর বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যে ইলেকট্রনিক কমার্স অফ বাংলাদেশ ই-ক্যাবকেও পাঠানো হয়েছে।’

মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে রাসেল চিঠিতে জানান, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে, তাই ইভ্যালি গ্রাহকেদের পুরাতন অর্ডার ডেলিভারি ও সরবরাহকারীদের দেনা পরিশোধের সুবিধার্থে আগামী ২২ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পূর্ণ আকারে চালু করে দেয়া হচ্ছে ইভ্যালির অফিস।

সম্পদ বিবরণীর ব্যাখায় রাসেল ব্র্যান্ড ভ্যালুর মূল্যায়নে পাশের দেশ ভারতের ফ্লিপকার্ট ও জোমেটোর সাম্প্রতিক ব্র্যান্ড ভ্যালু মূল্যায়নের সংবাদের চিত্রের কপিও মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেশে ডিজিটাল ই-কমার্স সেল নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ‘এর মধ্য দিয়ে ইভ্যালির কাছ থেকে চাওয়া তিন ক্যাটাগরির জবাবের মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরির জবাব পেলাম।’

ইভ্যালি যে ব্যাখা দিয়েছে তাতে মন্ত্রণালয় সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা সবেমাত্র প্রথম ক্যাটাগরির ব্যাখ্যা সম্পন্ন করেছে। বাকিগুলোর ব্যাখ্যা তারা দিক, তারপর সবগুলো হাতে পেলে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। ইভ্যালির দেয়া সব তথ্য রেজিস্টার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের সঙ্গে মেলানো হবে। সরকারি এই দুই সংস্থার সঙ্গে তাদের তথ্যের মিল পাওয়া গেলেই তারা সঠিক তথ্য দিয়েছে বলে বিবেচিত হবে।’