ভিকারুননিসায় দ্বন্দ্বের নেপথ্যে যত কারণ!

| আপডেট :  ২৮ জুলাই ২০২১, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ জুলাই ২০২১, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ৭ মাস আগে যোগ দিয়েছিলেন কামরুন নাহার মুকুল। এই ক’মাসেই তিনি দ্ব’ন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে। এই দ্ব’ন্দ্বের মূলে রয়েছে নানান স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বি’ষয়। এর মধ্যে ধানমণ্ডি এলাকায় একটি বাড়ি কেনা নিয়ে সম্প্রতি দ্ব’ন্দ্ব বাড়ে পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্যের সঙ্গে।

৬৪ কোটি টাকা মূল্যের এই বাড়ি নিয়েই পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্যের সঙ্গে দ্ব’ন্দ্ব সৃষ্টি হয় অধ্যক্ষের। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁ’স হওয়া তার একটি ফোনালাপে দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। এটি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর চার মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ফোনালাপ। এতে অধ্যক্ষের অশালীন মন্তব্যের সঙ্গে নিজের ক্ষমতা প্রকাশে নানা কথা বলতে শোনা যায়।

এতে অধ্যক্ষ এক পর্যায়ে বলেন, আমি বালিশের নিচে পি’স্তল রাখি। কোনো … বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে, আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগবো। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশছাড়া করবো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি শাখা ধানমণ্ডির ৮ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে। ভাড়া করা এই বাড়িতেই দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কার্যক্রম চলছে। বাড়ির মালিক বাড়ি খালি করার একাধিকবার নির্দেশনা দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা করেননি। পরে তিনি আ’দালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে একই এলাকায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পাশে একটি ভবন কেনার বায়না করে কর্তৃপক্ষ। এই ভবনটি ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সময়ে কিনে নেয়ার প্রস্তাব ওঠে। ৫৪ কোটি টাকা মূল্য ও ১০ কোটি টাকা রেজিস্ট্রি ব্যয় ধরা হয়। এরপর এ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে দ্ব’ন্দ্ব তৈরি হয়।

এ বি’ষয়ে অধ্যক্ষ মুকুল গণমাধ্যমে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানের জায়গা কেনায় বা’ধা দেয়ায় তাকে হু’মকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। আর গভর্নিংবডির সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা কমিটিতে তিন মাস আছি। প্রতিষ্ঠানের নামে জমি কিনলে প্রতিষ্ঠানের থাকবে এতে আমাদের বলার কিছু নেই।

কামরুন নাহার মুকুল মানবজমিনকে বলেন, যোগ দেয়ার পরই প্রথম শ্রেণিতে অ’বৈধভাবে ভর্তির জন্য চা’প দেন গভর্নিংবডির সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন, খোকন, ওয়াহিদুজ্জামান মন্টু ও অভিভাবক ফোরামের নেতারা। আমি এতে রাজি না হওয়ায় আমাকে অ’পদস্থ করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আসার তিনদিনের মাথায় তারা আমাকে গালাগাল করেন। তাদের কথামতো চলার হু’মকি দেন। আমার বাসায় ঢিল মে’রেছেন, আমার দরজায় লা’থি মে’রেছেন। লা’থি মে’রে আমার চেয়ারও ফে’লে দিয়েছেন তারা। তারা চান যেন আমি কিছু আসন ফাঁকা রাখি, যাতে তারা ভর্তি বাণিজ্য করতে পারেন।

জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির মোট আসনের মধ্যে থেকে ভর্তির লটারির সময় ১২০টি সিট খালি রাখা হয়। এছাড়া ভর্তির সুযোগ পেয়ে আরও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০-১৬০ সিট খালি আছে। এসব সিটে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে একটি পক্ষের দ্ব’ন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

গভর্নিংবডির সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, এই দু’র্নীতির অ’ভিযোগ সম্পূর্ণ মি’থ্যা। এই প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ গণ্যমান্যদের জন্য কোটা আছে। সেই কোটা নিয়ে অনুরোধ করলেও অধ্যক্ষ অ’পমান করেন। তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ নিয়মিত অফিস করেন না। অফিস না করায় প্রতিষ্ঠানটি ধ্বং’সের পথে যাচ্ছে।

সূত্রগুলো বলছে, প্রতিষ্ঠানটির বি’রুদ্ধে গত এক বছরে সংঘটিত নানা অনিয়ম-দু’র্নীতির ত’দন্ত করছে শিক্ষা ম’ন্ত্রণালয়। অ’ভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির মাধ্যমিক শাখার সদস্য (অভিভাবক প্রতিনিধি) সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করলেও কাজের এক কোটি ৫৯ লাখ টাকার বিল-ভাউচার জমা দিচ্ছেন না। এই বিল-ভাউচার জমা দিতে ৮ই এপ্রিল তাকে চিঠি দেন অধ্যক্ষ। পরে ১৭ই মে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অ’ভিযোগ করেন মুকুল। এছাড়াও অ’ভিযোগ আছে অর্থ উপার্জনের জন্য গভর্নিংবডির সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে অভিভাবকদের আপত্তিতে হাট উঠিয়ে দেয়া হয়।

শিক্ষা ম’ন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের স’চিব মো. মাহবুব হোসেন সার্বিক বি’ষয়ে বলেন, বি’ষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ বি’ষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।