হেলেনার অ’পকর্মের যেন শেষ নেই!

| আপডেট :  ২৭ জুলাই ২০২১, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ জুলাই ২০২১, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ণ

অনলাইন টিভি জয়যাত্রায় নিয়োগ দিয়ে বেতন না দেওয়া, জে’লা-উপজে’লা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বার্ষিক চাঁ’দা নেওয়া, সংবাদ প্রকাশের জন্য টাকা নেওয়া, উ’গ্র আচরণ, জমি দ’খলসহ নানা অ’ভিযোগে আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন মহলে তাঁর পরিচয়ও ভিন্ন ভিন্ন, কখনো তিনি শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, লেখক, অনুমোদনহীন আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রে’সিডেন্ট। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মহিলাবি’ষয়ক উপকমিটি থেকে ব’হিষ্কার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের পরিচিতি একজন র’হস্যময় নারী হিসেবে।

হাওয়া ভবন ও বিএনপি কার্যালয়ে তিনি পরিচিত ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বান্ধবী হিসেবে। সেই পরিচয়ে দাপুটেও ছিলেন বিএনপি মহলে। অ’ভিযোগ রয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর জাতীয়তাবা’দী মহিলা দল ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। দাপট দেখাতে গিয়ে ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে মির্জা আব্বাস গ্রুপের হাতে প্রহৃত হয়ে তিন দিন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর মালয়েশিয়ায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের অনুসারীদের মধ্যস্থতায় দেশে ফিরে এসে মহিলা দলে সক্রিয় হন।

২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে তিনি আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। নিজেকে নিরাপদে রাখতে সাংবাদিক পরিচয় ধারণ করেন। একটি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করে নিজের ফেসবুকে কার্ডের ছবি পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েন। তিনি কিভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পেলেন, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন মূলধারার একাধিক সাংবাদিক। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলও এ নিয়ে সে সময়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টিভি ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অন্যতম পরিচালক ছিলেন জি এম শাহজাহান, তিনি নিজেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ২০১৬ সালে হেলেনা জাহাঙ্গীর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেওয়া জি এম শাহজাহানকে দিয়ে মিরপুর কালশী সড়কে রাজউকের জায়গা দ’খল করে রাতারাতি বিপণিবিতান নির্মাণ করে ভাড়া দেন।

জমি দ’খল করায় রাজউক জি এম শাহজাহানের বি’রুদ্ধে মা’মলা করে এবং বিপণিবিতানটি ভে’ঙে দেয়। ওই সময়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন দাদন ফকির। তিনি রাজউকের জায়গা বুঝে পেতে সহায়তা করায় হেলেনা জাহাঙ্গীর জি এম শাহজাহানকে দিয়ে দাদন ফকিরের নামে মা’মলা করে দীর্ঘদিন তাঁকে হ’য়রানি করেন। এরপর হেলেনা জাহাঙ্গীর জি এম শাহজাহানকে দিয়ে রূপনগর এলাকায় রাজউকের দুটি প্লট দ’খল করেন।

বিএনপি নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের হঠাৎ করে আওয়ামী লীগার হয়ে ওঠা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবেদক জিয়াউর রহমানকে হ’’ত্যার হু’মকি দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিয়াউর রহমান রাজধানীর পল্লবী ও শাহবাগ থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

কয়েক মাস আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টিভির ভোলা প্রতিনিধি তুহিনের সঙ্গে প্রধান কার্যালয়ের একজন নারী কর্মকর্তার কথোপকথন ভাইরাল হয়। দেখা যায়, জয়যাত্রা টিভির প্রধান কার্যালয়ের নারী কর্মকর্তা বলছেন, ‘টাকা না পাঠালে কোনো সংবাদ প্রকাশ হবে না। টাকা না দিতে পারলে আপনাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে নেওয়া হবে।’ অ’ভিযোগ রয়েছে, এভাবে সারা দেশে জে’লা-উপজে’লা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৫ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়ে।

জয়যাত্রা টিভির জে’লা-উপজে’লা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়। ওই গ্রুপের আদান-প্রদান করা খুদে বার্তায় দেখা যায়, একাধিক বিকাশ নম্বর দিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে, যেখানে বার্ষিক চাঁ’দা উপজে’লা প্রতিনিধি দুই হাজার ও জে’লা প্রতিনিধিকে তিন হাজার টাকা পাঠাতে হবে। এ ছাড়া প্রতিনিধিরা সংবাদ পাঠালে বার্তা দিয়ে বলা হয়, বিকেলের আগে টাকা না পাঠালে ৮টার সংবাদে নিউজ প্রচার হবে না। এখানে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি, এটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমার্শিয়াল ধার্য।’

অ’ভিযোগ রয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টিভিতে কর্মী নিয়োগ দেন, তবে বেতন দেন না। নিয়োগের পর তিন থেকে চার মাস সময়কে পরীক্ষামূলক সময় বলা হয়, এরপর বেতন দাবি করলেই নানা দোষত্রুটি খুঁজে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

বর্তমানে একটি জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেলে কর্মরত একজন নারী সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমিও চার মাস কাজ করে খালি হাতে ফিরেছি। তবে সে লজ্জার কথা এখন বলতে চাই না।’

তাঁর অনেক বি’তর্কি’ত কর্মকাণ্ডের খোঁজ পাচ্ছে গো’য়েন্দারা
হেলেনা জাহাঙ্গীরের বি’তর্কি’ত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর অনেক আর্থিক দু’র্নীতির খোঁজ পেয়েছেন স’রকারের একটি বিশেষ গো’য়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গতকাল এক গো’য়েন্দা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে হেলেনার নানা বি’তর্কি’ত কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগের শেষ নেই। বিভিন্ন সময় তাঁর মাধ্যমে ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়েছেন এ রকম ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া দলের নাম ভাঙিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অ’ভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে এক গো’য়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামেও তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে ত’দন্তে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের চলাফেরার ও’পরও নজরদারি অব্যাহত আছে। দলের ভাবমূর্তি ন’ষ্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা সময়ে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ধরেও ত’দন্ত চলছে।

বিশেষ করে স’রকারবি’রোধী একাধিক গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে দেশের বাইরে থাকা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তাঁর যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাঁর বি’রুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে পাওয়া তথ্য আরো যাচাই-বাছাই চলছে। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ