নিখোঁজের ৮মাস পর পুলিশ দুলাভাইয়ের গর্ভবতী স্ত্রী হয়ে ফিরলেন তরুণী

| আপডেট :  ২৪ জুলাই ২০২১, ০৫:১৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৪ জুলাই ২০২১, ০৫:১৭ অপরাহ্ণ

একই ঘরে বসবাস ছিলো চাচাতো দুই বোনের। বড় বোনের বিয়ে হয় পুলিশের এক কনস্টেবলের সঙ্গে। সুখের সংসার তাদের। বিয়ের দুই বছরের মাথায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট বোন। তাকে খোঁজাখুঁজি করতে সহায়তা করেন বড় বোনের জামাই। খোঁজাখুঁজির ৮ মাসের মাথায় যখন ছোট বোনকে পাওয়া যায় তখন সে পুলিশ দুলাভাইয়ের স্ত্রী হয়ে ৭ মাসের গর্ভবতী। একই সময়ে ৩ মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়ে বড় বোনও।

ঢাকার ধামরাইয়ে চাচাতো দুই বোনের সঙ্গে এমন প্রতারণার কাণ্ড ঘটিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর জোনের কনস্টেবল সোলাইমান হোসেন। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে পুরো এলাকায়।

এ ঘটনায় শুক্রবার (২৩ জুলাই) কাওয়ালী পাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুই মেয়ের চাচা মো. রফিক।
প্রতারক কনস্টেবল সোলাইমান হোসেন ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের কাঁচা রাজাপুর এলাকার মো. শওকত আলী। তার পুলিশ আইডি নং- BP9716182099.
গর্ভবতী ওই তরুণী ও তার চাচাত বোন একই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের সূত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ৩ বছর আগে ৫ লাখ টাকা কাবিনে ৪ লাখ নগদ টাকা যৌতুক দিয়ে সোলাইমান হোসেনের সঙ্গে হাসনার বিয়ে হয়। এরপর থেকে সব ঠিকঠাকই চলছিল। তবে গত বছরের শেষের দিকে নিখোঁজ হয়ে যায় তার ছোট বোন। তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থানায় জিডি করা হয়। পরিবারকে নিয়ে তরুণীকে খোঁজাখুঁজি করেন দুলাভাই সোলাইমান হোসেন। অবশেষে গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় খোঁজ মেলে ওই তরুণীর। যখন তাকে খুঁজে পাওয়া যায় সে পুলিশ দুলাভাইয়ের ৭ মাসের গর্ভবতী স্ত্রী। অপরদিকে ধামরাইয়ে বাড়িতে ৩ মাসের গর্ভবতী প্রথম স্ত্রী হাসনাও। তবে স্বামীর এই কাণ্ড বের হওয়ার পরপরই গর্ভপাত হয়েছে তার।

ওই দুই তরুণীর চাচা মো. রফিক বলেন, ২০১৬ সালে সোলাইমানের চাকরির জন্যে ৪ লাখ টাকা দেই আমরা। পরে চাকরি হলে ২০১৮ সালে তার সঙ্গে আমাদের বড় মেয়ের বিয়ে দেই। তাদের সুখের সংসার ছিল। এরমধ্যে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ছোট মেয়েটা নিখোঁজ হয়। পরে আমরা ফাঁড়িতে অভিযোগ করি। পুলিশ তদন্তে জানা যায়, মেয়েটা ওই জামাইর সঙ্গে আছে। তবে সে কখনোই স্বীকার করে নাই। এভাবে খুঁজতে খুঁজতে ঈদের আগেরদিন (২০ জুলাই) আমরা জানতে পারলাম মেয়েটা ওর সাথেই আছে। এই কথা শুনে আমাদের বড় মেয়ের ৩ মাসের গর্ভপাত হয়ে যায়। পরে ওই ছেলে ছোট মেয়েসহ বাড়িতে চলে আসে।

তিনি বলেন, আমরা ভাইয়েরা এখনো এক ঘরে ভাত খাই। ওরা দুই বোন একসঙ্গেই বেড়ে উঠেছে। দেখে-শুনে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু জামাই এরকম একটা ঘটনা ঘটালো! আমার আর মুখ দেখানোর জায়গা নাই। ছোট মেয়েটাকে ফুঁসলিয়ে এটা করাইছে জামাই। এখন সব শেষ হয়ে গেল। আমরা আমাদের কোন মেয়েকেই ওর সঙ্গে রাখব না। ওর মতো প্রতারকের বিচার চাই।

এদিকে আজ ভোরেই লোকচক্ষুর আড়ালে ওই শালিকে নিয়ে ফের পালিয়ে যায় পুলিশ দুলাভাই। এরপর থেকেই তাদের দুজনের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় আজ থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন চাচা মোঃ রফিক।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সোলাইমান হোসেনের (০১৩০৪২২–০৪) ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিল না। এইটা গর্হিত কাজ। ওই মেয়ের পরিবার আসলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমিও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে নিখোঁজের ঘটনায় লিখিত অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা কাওয়ালী পাড়া বাজার তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইদ বলেন, লিখিত অভিযোগের তদন্তকালে ওই পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে কিছু জানে না বলে জানিয়েছিল। এখন তার কাছেই যেহেতু পাওয়া গেছে, পরিবার চাইলে মামলা দায়ের করলে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম-পশ্চিম) (আরআই) আব্দুল গফুর বলেন, ‘ডিউটির বাইরে আসলের সদস্যদের বিষয়ে তো আমরা সেভাবে জানি না। তবে এমন কাজ যদি করে থাকে এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।