পদ পেতে বাবা-মায়ের পরিচয় বদলে ফেলেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি!

| আপডেট :  ২০ জুলাই ২০২১, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২০ জুলাই ২০২১, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে নিজের বাবা মায়ের পরিচয় বদলে ফেলেছেন তিনি। লুকিয়েছেন বয়সও। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে তা জমাও দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে।এমন সব বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে। এ ছাত্রলীগ নেতার জাতীয় পরিচয় পত্রের জালিয়াতির অভিযোগটির সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে ইতোমধ্যে।যুগান্তরের হাতে এসেছে মো. ইব্রাহিমের জালিয়াতির বেশ কয়েকটি প্রমাণ।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এমন ভয়াবহ জালিয়াতি করেও দলে পদ নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করা তার কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়।উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পদায়ন নিষিদ্ধ বর্নিত। এছাড়া বিবাহিতরা ছাত্রলীগের কোনো পদে থাকতে পারেন না।

তাই বয়স লুকাতে ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করেন মো. ইব্রাহীম। আর তা ২০১৮ সালের ১১-১২ মে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কাউন্সিলের আগে মহানগর উত্তরের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুসরাত জাহান নুপুরের কাছে জমা দেন। জমা দেওয়া ওই জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর – ১৯৯**********০০৪৩।

ওই জাতীয় পরিচয় পত্রে মো. ইব্রাহীমের বাবা ও মায়ের নাম দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে মো. ইউনুচ আলী ও মেহেরুন্নেসা। জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ। সে হিসেবে সম্মেলনের সময় তার বয়স ছিলো ২৮ বছর আড়াই মাস।

কিন্তু যুগান্তরে হাতে আসা এ ছাত্রলীগ নেতার প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র (যার নম্বর ১৯৮********০০০৪) বলছে, মো.ইব্রাহিমের পিতার নাম মো. আদম আলী পাত্তর। মায়ের নাম শাহানারা আক্তার। আর জন্মতারিখ ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি।যা তার পাসপোর্টের সঙ্গে মিল রয়েছে।অর্থাৎ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির বাবা ও মা দুইজন করে এবং জন্ম তারিখও দুইটি?

তবে কোনটি সঠিক তথ্য?এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে যা বেরিয়েছে, ইব্রাহিমের জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (নম্বর ১৯৯**********০০৪৩) নির্বাচনের কমিশনের সার্ভারেই নেই।নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে নেই মনোনয়নপত্রে জমা দেওয়া মো. ইব্রাহিমের সেই এনআইডিনির্বাচন কমিশনের সার্ভারে নেই মনোনয়নপত্রে জমা দেওয়া মো. ইব্রাহিমের সেই এনআইডি

অর্থাৎ ১৯৮********০০০৪ নম্বরের জাতীয় পরিচয় পত্রটিই আসল। সে হিসেবে মো. ইব্রাহিমের জন্মতারিখ ১৯৮৯ সালের ১ জানুয়ারি।সে অর্থে সম্মেলনের সময় তার বয়স ছিলো ২৯ বছর ৪ মাস ১০ দিন। বর্ণিত বয়স থেকে ২ বছর ৪ মাস ১০ দিন বেশি।যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।এছাড়া নিশ্চিত হওয়া গেছে, মো. ইব্রাহিম বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম নিশাত জাহান তমা। বাড়ি বাগেরহাট জেলার রায়েন্দা থানার তাফালবাড়ি ইউনিয়নে।

স্ত্রীর সঙ্গে তোলা ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।নিয়ম অনুযায়ী, মো. ইব্রাহিম ছাত্রলীগের কোনো পদ পেতে পারেন না। অথচ ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ঠিকই পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন।এসব গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে মো. ইব্রাহিমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তিনি কেটে দিয়েছেন।

সেজন্য তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।তবে এক গণমাধ্যমের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের জালিয়াতির বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন মো. ইব্রাহিম।

ছাত্রলীগের মনোনয়নপত্রে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ওই গণমাধ্যমে মো. ইব্রাহিম বলেছেন, ‘সবকিছুই তো জানেন। বাদ দেন না বিষয়টা। একটা ভুল হয়ে গেছে।’এরপর তিনি জানান, পদ দখলে কিছু সংখ্যক উগ্র এবং দলভ্রষ্ট কর্মীরা আমার ব্যাপারে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। বড় পদ পাওয়ার পর অনেকে আমার ‘পেছনে’ লেগেছে। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার এ নিয়ে আমি বিব্রত হয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা আমার ব্যাপারে সব জানেন।