নবীর কার্টুন এঁকে বিতর্ক সৃষ্টি করা সেই ডেনিশ কার্টুনিস্ট মারা গেছেন

| আপডেট :  ১৯ জুলাই ২০২১, ০৩:৫৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জুলাই ২০২১, ০৩:৫৭ অপরাহ্ণ

ড্যানিশ কার্টুনিস্ট কার্ট ওয়েস্টারগার্ড ইসলামের নবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকার কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলমান সম্প্রদায়ের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তিনি ৮৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার পরিবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বার্লিংস্কে পত্রিকা রবিবার এই খবর জানিয়েছে।

ওয়েস্টারগার্ড ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে রক্ষণশীল পত্রিকা জিলল্যান্ডস-পোস্টেন- এর কার্টুনিস্ট ছিলেন।
তবে তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান ২০০৫ সালে। ওই পত্রিকায় ইসলামের নবীর বিতর্কিত কার্টুন আঁকার জন্য।
ওয়েস্টারগার্ড কার্টুনে দেখানো হয় একজনের মাথায় পাগড়ির মতো বোমা বাধা।
পত্রিকাটিতে তার প্রকাশিত ১২টি কার্টুনের মধ্যে এটি একটি ছিল।
এর মাধ্যমে মূলত ইসলামের সেলফ-সেন্সরশিপ এবং সমালোচনার বিষয়টি সামনে আনা হয়।

কার্টুন নিয়ে কেন বিক্ষোভ?
ইসলামের নবীর প্রতিকৃতি আঁকার বিষয়টিকে ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসাবে দেখা হয় এবং কিছু মুসলমানের জন্য যা অবমাননাকর।
পত্রিকার এই কার্টুনগুলোর কারণে পুরো ডেনমার্কে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ নিয়ে ডেনমার্ক সরকারের কাছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাষ্ট্রদূতরাও অভিযোগ করে।
এই বিক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। গোটা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ।

ড্যানিশ দূতাবাসে হামলা চালানো হয় এবং ওই সহিংসতায় মারা যান অনেকে।
পরবর্তীতে এ ধরণের কার্টুন প্রকাশ অব্যাহত থাকে।
ফরাসী ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর অফিসে ২০১৫ সালেএক হামলায় ১২ জন নিহত হন।
ওই পত্রিকাটি এ ধরণের কার্টুন প্রকাশ করতো।

কার্টুন প্রকাশের পর তার কী হয়েছিল?
কার্টুনগুলো প্রকাশের পরে ওয়েস্টারগার্ড অসংখ্যবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন এবং তাকে লক্ষ্য করে কয়েকবার হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল।
তিনি প্রথমে আত্মগোপনে চলে যান। তারপর ডেনমার্কের আহারাস শহরের বেশ সুরক্ষিত কাঠামোর একটি বাড়িতে স্বাধীনভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।

ড্যানিশ গোয়েন্দা সংস্থা ২০০৮ সালে ওয়েস্টারগার্ড হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়।
এর দুই বছর পরে ড্যানিশ পুলিশ ওয়েস্টারগার্ডের বাড়িতে ছুরি হাতে ২৮ বছর বয়সী সোমালি নাগরিককে ধরে ফেলে।
উনত্রিশ বছর বয়সী মোহাম্মদ গিলির বিরুদ্ধে সে সময় হত্যার চেষ্টা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হলে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং ২০১১ সালে তাকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এরপর ওয়েস্টারগার্ডকে পরবর্তী বছরগুলোয় গোপন ঠিকানায় দেহরক্ষী সাথে নিয়ে থাকতে হয়েছিল।

ওয়েস্টারগার্ড-এর কি অনুশোচনা ছিল?
সংবাদ সংস্থায় রয়টার্সকে ওয়েস্টারগার্ড ২০০৮ সালে বলেন যে, তাঁর ব্যঙ্গাত্মক চিত্র আঁকা নিয়ে তাঁর মধ্যে কোন আফসোস নেই।
তিনি বলেছিলেন যে, কার্টুনটি ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোয় ইসলামের স্থান সম্পর্কে “গুরুত্বপূর্ণ” আলোচনার জায়গা তৈরি করেছে।

“আমার মনে হয় আমি আবার একইভাবে কার্টুন আঁকবো, কারণ আমি মনে করি যে এই কার্টুনের সংকট মানুষকে ইসলামী জীবনধারার প্রতি উৎসাহিত করতে কোন না কোনভাবে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।”
“আমরা দুটি সংস্কৃতি, দুটি ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছি, যা আগে কখনও হয়নি এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ।”