কাদায় ভিজে ভিক্ষা করা সেই সালেমুন নেছার পুনর্বাসন হয়নি আজও

| আপডেট :  ১৯ জুলাই ২০২১, ০৯:১১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জুলাই ২০২১, ০৯:১১ পূর্বাহ্ণ

গত বছর বছরের জুন মাসের কথা। চারিদিকে যখন ক’রো’না আ’তং’ক। চলছে ল’কডা’উন। এমন সময়ে ৪ জুন বৃহস্পতিবার সকালে হালুয়াঘাট বাজারে ভি’ক্ষা করতে আসেন সালেমুন নেছা নামে ৭২ বছর বয়সী এক নারী। এসময় হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়। বাজারের সব মানুষ দৌড়ে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু এসময় বৃদ্ধা সালেমুন নেছা রাস্তার পাশে বসে বৃষ্টিতে ভিজেই

ভি’ক্ষার থা’লা নিয়ে বসেছিলেন। আশপাশের লোকজন এমন দৃশ্য দেখে আ’বেগতা’রিড়ত হয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদা-পানিতে এ’কাকার হয়েছিল। ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় বসেছিলেন ওই বৃদ্ধা। এ অবস্থায় মুখটা কা’পড় দিয়ে ঢেকে নিয়ে ভি’ক্ষার থালার দিকে চেয়েছিলেন সালেমুন নেছা। তখন পর্যন্ত কেউ তাকে চিনতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা একেঅপরকে বলতে ছিলেন- ঘরে কতটা অ’ভাব থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার ড্রেনের

পাশে কাদা-মাটির মধ্যে ভি’ক্ষার জন্য বসে থাকতে পারেন একজন বৃদ্ধা? সেদিন সেই দৃশ্যটি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেড়ে দেন সুমন আহমেদ নামে একজন। পরে অল্প সময়ের মধ্যেই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমন দৃশ্য দেখে ক্ষু’ব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি তখন নজরে আসে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের। তিনি উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে দ্রুত খোজ খবর নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। অল্প সময়েই

পরিচয় মেলে ওই বৃদ্ধার। তার বাড়ী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ৪নং সদর হালুয়াঘাট ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া (শাপলাবাজার) গ্রামে। পরে ইউএনও রেজাউল করিমের নির্দেশে সালেমুন নেছাকে হালুয়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করানো হয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে চাল, ডাল, কাপড় প্রদান করা হয়। খবরের কাগজেও তাকে নিয়ে প্রতিবেদন হয়। সালেমুন নেছাকে সরকারী ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার ভাগ্যে জুটেনি বলে

জানিয়েছে সালেমুন নেছা। রোববার তারসঙ্গে সঙ্গে কথা হলে তিনি দুঃ’খ করে বলেন, আমাকে আশা দিয়েও ঘর দিলোনা। এখনও ভি’ক্ষা করে চলছেন তিনি। বর্তমানে ভি’ক্ষার টাকায় ওমর ফারুক নামে একজনের বাড়ীর এক কোণায় ছোট্ট একটি কুড়েঘর বানিয়ে সেখানেই রাত্রি যাপন করেন তিনি। জানা যায়, তার স্বামী হাফিজুর রহমান ১২ বছর আগে মা’রা যান। তখন থেকে

সালেমুন নেছার জীবনযু’দ্ধ শুরু হয়। এখন বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তবুও প্রতিদিন রাস্তায় না নামলে তার পেটে খাবার জোটে না। প্রতিদিনই তাকে ভি’ক্ষা করতে হয়। ভিক্ষুক সালেমুন নেছাকে পুনর্বাসন না করায় ক্ষো’ভ প্রকা’শ করে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই গ্রামের মাসুদ করিম (৩৬) ও ওমর ফারুক বলেন, এক বছর আগে সালেমুন নেছার আইডি কার্ড ও তথ্য নিলো। কিন্তু ঘর দেয়ার

প্রতিশ্রুতি দিয়েও আজও ঘর দেয়নি। এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, সালেমুন নেছার বিষয়টি মাথায় রয়েছে। তাকে কিভাবে পুনর্বাসন করা যায় সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে জানান তিনি। বলেন, তার কেউ না থাকায় ঘর প্রদান করা যায়নি। তার পক্ষ থেকে কাউকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে সালেমুন নেছার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।