কোরআন প্রশিক্ষক বিধবা সায়েরা বানুর দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে

| আপডেট :  ১৭ জুলাই ২০২১, ০১:২১ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৭ জুলাই ২০২১, ০১:২১ পূর্বাহ্ণ

বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিয়ে সংসার চলতো সন্তানহারা বিধবা বৃদ্ধা সায়েরা বানুর (৬৫)। সম্প্রতি করোনার কারণে তাও বন্ধ। তাই দুটি এতিম নাতনি ও পুত্রবধূসহ অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছেন শহরের দোয়ারপাড় এলাকার সন্তানহারা বিধবা সায়েরা বানু। সরকারি হটলাইন নম্বর ৩৩৩ এ কয়েকদিন চেষ্টা করে ব্যর্থ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সকাল-বিকাল করে এড়িয়ে যান।

স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত ছেলের দুটি অবোধ শিশু ও পুত্রবধূসহ খাবারের অনিশ্চয়তায় রীতিমত পাগলপ্রায় সায়েরা বানু। করোনার কারণে দীর্ঘ লকডাউনে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত ওলিয়ার মল্লিকের স্ত্রী সায়েরা বানুর দুর্দশা দেখতে কেউই এগিয়ে আসেনি। এ অবস্থায় তিনি কার কাছে যাবেন কীভাবে নিজের মৃত ছেলের রেখে যাওয়া দুটি কন্যাসন্তান ও পুত্রবধূর মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেবেন তা নিয়েই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সায়েরা বানু জানান, ৫ বছর আগে একমাত্র ছেলে মিঠুন মিয়ার স্ত্রী ও দুটি শিশুকন্যা রেখে পানিতে ডুবে মারা যায়। তার শোকে কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী ওলিয়ার মল্লিকও মারা যায়। মিঠুনের স্ত্রী নুপুর ও তার দুটি কন্যাসন্তান মিনু ও তনুকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন সায়েরা বানু। এ সময় নিজের কোরআন শিক্ষার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে কোরআন প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন তিনি। এতে মোটামুটি চলছিল তার সংসার।

সম্প্রতি করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার সেই প্রশিক্ষণের কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে না পারা আবার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। সায়েরা বানু বলেন, এলাকার অধিকাংশ মানুষই গরিব। এ অবস্থায় তাদেরই পেট চলে না। আমাকে সাহায্য করবে কে? কয়েকজনের পরামর্শে সরকারি হেল্পলাইন নম্বর ৩৩৩ এ ফোন দিয়ে সংযোগ পেতে বারবার ব্যর্থ হয়েছি। এলাকার পৌর কাউন্সিলরের বাড়িতে বারবার গিয়ে একই অবস্থা।

শেষমেশ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফোন করে নিজের কষ্টের কথা বললে তিনি পরে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ১০ দিন চলে গেলেও কোনো খোঁজই নেননি। মানুষের বাড়িতে বারবার ধর্ণা দিতে আত্মসম্মানেও বাধে। আমার তো ৪টি প্রাণ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মাঝে শুধুমাত্র জেলা যুবলীগের হটলাইন টিম এর নেতা ফজলুর রহমানের কাছ থেকে সামান্য কিছু খাবার পাওয়া ছাড়া কোনো সহায়তাই পাইনি। এখন যে কি অবস্থা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে শিশু নাতনিদের মুখে সামান্য সেমাই তো দূরের কথা এখনই দুমুঠো ভাত তুলে দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সহায়তা আশা করেন।