সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন ত্ব-হা, খুলে বললেন…

| আপডেট :  ১৫ জুলাই ২০২১, ০২:৫৭ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৫ জুলাই ২০২১, ০২:৫৭ অপরাহ্ণ

দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয় আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের হঠাৎ নিঁখোজ হওয়ার বিষয়টি।
‘আত্মগোপনে’ গিয়ে নতুন করে আলোচনায় আসা ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান জানিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন। দুই স্ত্রীর পরিবার নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই তার।

দেশের অন্যতম একটি অনলাইন নিউজের সঙ্গে আলাপকালে মঙ্গলবার এসব কথা জানান তিনি।
‘আত্মগোপন’ থেকে ফেরার পর এই প্রথম তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন।
ঢাকা থেকে গত ১০ জুন রাতে নিখোঁজ হন এই ইসলামি বক্তা। ১৮ জুন পুলিশ প্রথম স্ত্রীর বাবার বাড়ি রংপুর মহানগরীর আবহাওয়া অফিস মাস্টারপাড়ায় পায় ত্ব-হাকে।

ওই দিন বিকেলেই নগর পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলন করে তার নিখোঁজ হওয়ার কারণ ও উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি জানায়।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন।
কী সেই ব্যক্তিগত কারণ, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ব্যক্তিগত কারণ, আমরা সেটি এখনই পাবলিকলি না বলি। আগে ভেরিফাই করতে হবে। তবে কোনো অপরাধ ঘটেনি বলে আমাদের তারা জানিয়েছে।’

ওই রাতেই ত্ব-হা ও তার দুই সঙ্গীকে আদালতে নেয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের নিজ জিম্মায় জামিন দেন। রাতেই তারা বাসায় ফেরেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
মুখ খুললেন ত্ব-হা, বললেন পরিবারে নেই কোন ঝামেলা…………..
ত্ব-হার মা আজেদা বেগম সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ত্ব-হা দুই স্ত্রীর সংসার নিয়ে খুব অশান্তিতে ছিলেন।

এসব ঘটনার প্রায় এক মাস পর গণমাধ্যমে কথা বলেন ত্ব-হা। সেই অনলাইনের প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় তার।
ত্ব-হা জানান, তিনি এখন রংপুরে অবস্থান করছেন। কোনো অসুবিধা নেই।
তিনি বলেন, ‘সমস্যা নেই। একটা কিছু হলে তো প্রভাব থাকে। তাই না?…সেগুলো আমরা রিকভার করার চেষ্টা করছি ধীরে ধীরে… আমাদের পরিবারে কোনো ঝামেলা নেই। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি আমরা।’

কী কারণে আত্মগোপনে ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলো যেটা প্রশাসন থেকে আসছে এগুলোই যথেষ্ট আমার মনে হয়। এর বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না।
‘আমি আছি আপনাদের মাঝে, এটি সবচেয়ে বড় কথা। ওভার অল আমরা সবাই ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ সমস্যা নাই।
এখন কী করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন বলতে পারেন বেকার অবস্থায় বাসায় বসে আছি। আগের মতো সবখানে মুভ করতে পারছি না। এখন এ জন্য অনেকটা কর্মহীন অবস্থায় আছি। আদারওয়াইজ অন্য কোনো সমস্যা নাই। আল্লাহ ঠিকঠাকমতো চালাচ্ছেন।

ত্ব-হা জানান, আগের মতো ইসলামি বক্তব্য দেয়ার অবস্থায় ফেরত আসতে লেখাপড়া শুরু করেছেন তিনি।
‘আমার ইচ্ছা আছে ফের শুরু করা। তা ছাড়া আমার পড়াশোনার ব্যাপার-স্যাপার আছে। আমি পড়াশোনা শুরু করেছি। আমার জ্ঞানই তো সবকিছু। এ জন্য আরও বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে। সেটা করছি। জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলে আরও ভালো কিছু হয়তো দিতে পারব।

ত্ব-হার ইস্যুটি আদালতে কোন পর্যায়ে আছে, এ প্রশ্নের জবাবে রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে আদালতে। এখনও সেটি প্রস্তুত হয়নি। হলে আমরা সেটি দাখিল করব।’
এর আগে আদালতে ত্ব-হা আত্মগোপনের কারণ জানিয়েছেন বলে তার আইনজীবী সোলায়মান আহমেদ সিদ্দিকী বাবুর জানিয়েছিলেন।

অ্যাডভোকেট সোলায়মান বলেছিলেন, ‘ত্ব-হার দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা আছে। তিনি আদালতে সব কথা বলার পর এ কারণেই স্ত্রীদের কারও বদলে মায়ের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়।’

ত্ব-হার নিখোঁজের পর নানা কথা ছড়িয়েছেন তার অনুসারীরা। তার ভক্তরা কেউ বলছিলেন, ইহুদিবাদীদের সমালোচনা করায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে ইসরায়েল। কেউ বলছিলেন, এর পেছনে হাত ভারতের। কেউ বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা পুলিশের দিকে আঙুল তুলছিলেন।

যেভাবে ‘নিখোঁজ’ হন ত্ব-হা……………
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ত্ব-হা বলেন, ১১ জুন বগুড়ার শিবগঞ্জ ও ঢাকার সাভারে দুটি প্রোগ্রাম ছিল। এ জন্য আগের দিন বিকেল চারটার দিকে রংপুর থেকে রওনা দেন বগুড়ার উদ্দেশে। কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি আঁচ করতে পারেন, বাইকে তাকে কেউ ফলো করছে। এ কারণে বগুড়ার সাতমাথা হয়ে আরেক রোড ধরে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

তিনি জানান, কোনো এক কারণে বগুড়ার শিবগঞ্জের প্রোগ্রামটা বাতিল হয়। পরে তিনি ঢাকার সাভারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। টাঙ্গাইল পার হয়ে হেমায়েতপুরে এসে ধারণা করেন, বাইকে করে কেউ একজন তাকে আবার ফলো করছে।

তার সন্দেহ ছিল, যেহেতু তিনি ইউটিউবে ধর্মীয় বক্তব্য দেন, সে কারণেই ধর্মীয় কোনো উগ্রপন্থি তাকে ফলো করছে…।

এরপর তিনি সেখান থেকে দ্রুত ঢাকায় প্রবেশ করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে একটি পাম্পে তেল নেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সারাকে জানান যে, তিনি বাসায় আসছেন। তার অবস্থানের গুগল ম্যাপের একটি স্ক্রিনশটও শেয়ার করেন।

স্ত্রীকে বলেন, ‘আমার ১৮ মিনিট লাগবে আসতে।

কিন্তু পরে তিনি ইউটার্ন করে আবার রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। তবে রংপুরে না এসে তার স্কুলবন্ধু সিয়ামের বাসায় যান।

সিয়ামের বাড়ি গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে।

ফোন বন্ধ টাঙ্গাইলে………….

জবানবন্দি অনুসারে রংপুর ফেরার পথে টাঙ্গাইলে এসে তিনি আশঙ্কা করেন যে, কারও হাতে আটক হতে পারেন। এ জন্য সফরসঙ্গীদের মোবাইল ফোন নিজে বন্ধ করে দেন। তাদের বলেন, ফোন খুললে তিনি কারও হাতে ধরা পড়তে পারেন।

নিজের ও সঙ্গীদের সব ফোন নিজের কাছেই রাখেন ত্ব-হা।

বিষণ্নতায় ভুগছিলেন তিনি…………..

ত্ব-হা জবানবন্দিতে বলেন, তার ফিরে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখার পেছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ ছিল। তার বেশ কিছু ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা ছিল। এ কারণেই সবার থেকে একটু আলাদা থাকার জন্য সিয়ামের বাসায় আশ্রয় নেন।

সেখানে গিয়ে ত্ব-হা অসুস্থতা বোধ করেন। ছিল করোনার উপসর্গও। ফলে তিনি একবারের জন্য ফোন খোলেননি।

আদালতকে জানিয়েছিলেন, যারা তার সঙ্গে ছিলেন, তারা তার খুব নিকটজন ও বিশ্বস্ত। যে চালক গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তিনিও তার ঘনিষ্ঠ। এ কারণে তারাও তার কথা শুনেছেন।

সুস্থ বোধ করলে রংপুরে প্রথম স্ত্রীর বাবার বাসায় এসে অবস্থান করেন এবং অন্যরা সবাই তাদের নিজ নিজ বাসায় চলে যান।

এই কয় দিন কী হয়েছে, জানতেন না………………

ত্ব-হা আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে যে এত সব হয়েছে, তা তিনি ধারণাও করতে পারেননি।

ফোন বন্ধ থাকায় অনলাইনে কী লেখালেখি হচ্ছে, তা তিনি ধারণা করতে পারেননি। টেলিভিশন থেকেও দূরে থাকায় বাইরের যে পরিবেশ ছিল তিনি বা তার সঙ্গীরা আঁচ করতে পারেননি।

এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন জবানবন্দিতে। সূত্রঃ সময়ের কণ্ঠস্বর