গৃহকর্মীর মৃত্যুতে অভিনেত্রীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

| আপডেট :  ১৫ জুলাই ২০২১, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৫ জুলাই ২০২১, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

ঘরের কাজে সহযোগিতার জন্য অনেজ পরিবারেই গৃহকর্মী রাখা হয়। বেশিরভাগ সময় গৃহকর্তারা এসকল গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের কারণেই সংবাদের শিরোনাম হন। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি।

সম্প্রতি নিজের বাসার গৃহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিনেত্রী খুশি। নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) দুপুরে স্ট্যাটাসটি দেন খুশি।

খুশি লেখেন, ‘আজকের এই করোনা দুর্যোগের ভয়াবহতায়, বেশির ভাগ পরিবারে যা ঘটছে, তাতে করে, আমার এ পোস্টে কারো হয় তো বিরক্তি আসতে পারে। কাজের মানুষকে নিয়ে কেন আবার পোস্ট? জীবন, আমাকে সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা শিখিয়েছে। সেটা রক্তের সম্পর্কের অনেক ঊর্ধ্বে। যারা আমার রক্তের কেউ না হয়েও, আমার আত্মা স্বজন হয়েছে। এই মেয়েটা আমার জীবনে নতুন এক স্বজন হয়ে ধরা দিয়েছিল ৯টা বছর। আমার দায়িত্ব/কষ্ট/সকল অপারগতা সব ভাগ করে নিয়েছিল। আমার বাসায় যারা এসেছে/থেকেছে, সবাই তার মায়াবি আতিথেয়তা পেয়েছে!’

স্মৃতি রোমন্থন করে খুশি লেখেন, ‘আমার বড় ছেলেটার সাথে সেদিন খুব তর্ক লেগে গেল, আমি বড়ই বিরক্ত হয়ে বললাম, দিব্য, তুমি এমন করতে থাকলে তো, আমরা কেউই তোমার সাথে ভবিষ্যতে থাকবো না। সে অবলিলায় বললো, তোমরা না থাকলে আর কি বলবো, তবে প্লিজ, আমাকে কুলসুম আন্টিকে ঠিক করে দিও। কুলসুম থাকলে আর কিচ্ছু লাগবে না!! এটা তার প্রতি আমাদের প্রেম, অনুরক্ততা! আমার বাসার সবার জন্ম তারিখ তার মুখস্ত ছিল। আমি পরম নির্ভরতায় তার কাছে আমার সংসার রেখে কাজে গেছি। বিদেশে গেছি একাধিক বার। কেবল সেই জানতো, আমার দিব্য-সৌম্যর পছন্দ, গতি প্রকৃতি। এই সংসারে/ সন্তানে আমার দরদ কতটুকু! ছোটবেলা ওরা খুব মারামারি করতো দুই ভাই। আমি চড় থাপ্পড়ে সেটার সমাধান করতাম। সে রান্নাঘরে বসে কাঁদতো। জিদ করে দুদিন কাজ কামাই দিত। বললে বলতো, ওগো রে গায়ে হাত দিলে আমার সহ্য হয় না আফা!’

সবশেষে খুশি লেখেন, ‘আমার এই ভরসার পরম আত্মীয় আজ সকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল! না! করোনায় না। সাধারণ অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনে। অপারেশনের ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে কোমায় চলে যায়! নিষেধ করেছিলাম এ সময় অপারেশনটা করতে! কত ছোট্ট ভুল সিদ্ধান্ত, প্রতিদিন আমাদের জীবনকে থামিয়ে দিচ্ছে চিরতরে। নির্লোভ/মায়াবি এবং প্রখর আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন হাসিখুশি এ মেয়েটা কোনোদিন জানবে না, আমার ভেতরে কোন হাহাকার তুলে দিয়ে চলে গেল এ পৃথিবী ছেড়ে! সংসারে সব সত্যটা জানে, সংসারে, নিত্য আসা কাজের সাহায্যকারী। (বুয়া)। ৯ বছরের এ যাতায়াতে সে আমার পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছিল। আমার পরিবারের দিনমান থেমে গেল আজ! আমরা তোমাকে অনেক ভালোবাসি কুলসুম। সারাজীবন তোমাকে মনে রাখবো। আমি তোমাকে সঠিক সম্মান দিয়েছি, তুমি দিয়েছো অপার মায়া, যা আমাকে আর কেউ দেয়নি। যেখানে গেলা, সেখানে শান্তিতে ঘুমাও।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে ভর্তি হন খুশির গৃহকর্মী কুলসুম। কিন্তু অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় তিনি কোমায় চলে যান এবং একপর্যায়ে না ফেরার দেশে চলে যান।