স্ত্রী গর্ভবতী জেনে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরছে জামাল

| আপডেট :  ১২ জুলাই ২০২১, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১২ জুলাই ২০২১, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

স্ত্রী প্রথমবারের মতো গর্ভবতী হয়েছে জেনে যারপরনাই দুশ্চিন্তা ভর করেছে ২৫ বছর বয়সী জামাল হোসেনের মনে। স’ন্তান জন্মের দিনক্ষণ যতো এগিয়ে আসছে, ততই চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন জামাল। অনাগত স’ন্তানের অনিশ্চিত ভবি’ষ্যতের কথা চিন্তা করে আত্মহ’’ত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এজন্য প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে বি’ষের বোতল নিয়ে গেছেন আত্মহ’’ত্যা করবেন বলে। তবে, বি’ষয়টি বুঝতে পারেন তার প্রতিবেশীরা। কারণ, কী’টনাশক ব্যবহার করার মতো জামালের কোনো ফসলি জমি নেই। এরপর তারাই জামালকে বুঝিয়ে আত্মহ’’ত্যা করতে দেননি।

ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মান্দা উপজে’লার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে। জানা গেছে, সাবাই হাটের পার্শ্ববর্তী আবদুল্লাহ ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন বালু বিক্রয়কেন্দ্রে ট্রাক্টরে বালু তোলা ও নামানোর কাজ করতেন জামাল হোসেন। কিন্তু চলমান ক’রোনাভা’ইরাস ম’হামা’রিতে লকডাউনের ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায় তার।

জামাল হোসেন বলেন, কয়েকমাস ধরে তেমন একটা কাজ নাই। লকডাউনের কারণে কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ধান কা’টার কাজ করে যা টাকা পেয়েছিলাম, তার সবটাই শেষ হয়ে গেছে। এর ও’পর আবার এনজিওতে মাসিক তিন হাজার টাকা কিস্তি আছে। আগে কাজ করে কিস্তি দিতাম। এখন কাজ না থাকলেও ধারদেনা করে কিস্তি দিতে হচ্ছে। সামনের কিস্তি কিভাবে দেবো তাই নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি।

জামাল আরো বলেন, আমরা ছোট থাকতে আব্বা আরেকজনকে বিয়ে করেছে। তারপর থেকে আজ অবধি মা কিংবা আমাদের তিন ভাইবোনের খোঁজ নেয়নি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে মা আমাদের তিন ভাই-বোনকে বড় করেছে। কেউই পড়তে পারিনি। বোনের বিয়ে হলেও তার স্বামী তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সেও এখন আমার কাছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মায়ের নামে সামান্য একটা ডোবা ছিল। সেই ডোবা ভরাট করে ছোট দুইটা ঘর তুলেছেন জামালরা। তার মধ্যে এক ঘরে জামালের মা, বোন ও বোনের দুই ছেলে-মেয়ে থাকে। আরেক ঘরে থাকে জামাল আর তার স্ত্রী। বাড়ির ছাগল আর হাঁস-মুরগিও থাকে তাদের থাকার ঘরেই।

জামাল বলেন, থাকার জায়গা নাই বলে আমার ছোট ভাই এখানে আসে না। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। ভাগ্নে-ভাগ্নির অনিশ্চিত ভবি’ষ্যত দেখে খুব খা’রাপ লাগে। আমার বউয়ের বাচ্চা হবে শুনেই টেনশনে পড়ে গেছি। বোঝা যাচ্ছে, বাচ্চা হলে সেও তো আমার ভাগ্নে-ভাগ্নির মতোই লা’থিগুতা খেয়ে বড় হবে। এসব আর সহ্য হয় না। নিজেরাই খাবার জোটাতে পারছি না, বাচ্চা হলে তার খরচ কিভাবে চালাবো? সেজন্য নিজের জীবনই শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জামাল আরো বলেন, কোনো জায়গায় কাজ পাচ্ছি না। এজন্য একটা ভ্যান কেনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাছে কোনো টাকা নাই। কেউ ধারও দিচ্ছে না। ধার পেলে ধীরে ধীরে শোধ করে দিতাম। আগের কিস্তি শোধ না হলে এনজিও থেকেও ঋ’ণ দেবে না। মহা মুসিবতে আছি।

তিনি আরো বলেন, বউয়ের পেটের বাচ্চা পাঁচ মাসে পড়ল। এখন পর্যন্ত ডাক্তার দেখাতে পারিনি। যদি বাচ্চা হওয়ার সময় সিজার করা লাগে, মা’রা যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই।

আবদুল্লাহ ফিলিং স্টেশনের মালিকের ছেলে মো. লিটন হোসেন বলেন, জামাল ছেলেটা খুবই পরিশ্রমি। কিন্তু লকডাউনে ট্রাক্টর বন্ধ। কোনো কাজ নাই। আর এলাকায় সেরকম কোনো কাজও নেই যে সে করবে। একটা ভ্যান কিনবে বলছিল। সম্ভবত টাকা জোগাড় করতে পারেনি। সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে এসে ছেলেটাকে একটা ভ্যান কিনে দিতে পারলে ভালো হতো। পাঁচ-ছয় জনের জীবনের দুঃখ কিছুটা হলেও ছেলেটা লাঘব করতে পারতো।

জামাল হোসেনকে সাহায্য করতে চাইলে ০১৮৩৮ ০৮৫৪২৬, ০১৭৬৪ ৬৩৮৯৮৬ (বিকাশ পার্সোনাল)।