আমি অন্যায় করার মানুষ না, ভুল করি প্রচুর : পরীমণি

| আপডেট :  ১০ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১০ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সাবলীলভাবেই সে দিন বোট ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন পরীমণি। গাড়ি থেকে বের হয়ে রিসিপশন পেরিয়ে সোজা ক্লাবের ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পরই তড়িঘড়ি করে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় বের করা হয়। বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজে এমনটাই দেখা যায়। ওই দিন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শি’কার হন পরী। ক্লাবে ধ”ণ ও হ’’ত্যাচেষ্টার অ’ভিযোগ এনে থানায় মা’মলা করেন এই অভিনেত্রী। প্রধান আ’সামি নাসির ইউ আহমেদকে গ্রে’ফতারের পর নেয়া হয় রি’মান্ডে। ২৯ জুন জা’মিনে বের হয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পরীমণিকে দো’ষী সাব্যস্ত করেন তিনি। কিন্তু পরী কথার খেলা খেলতে চান না। এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন। বলেছেন ভ’য়ঙ্ক’র সেই অভিজ্ঞতার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আলমগীর কবির

সম্প্রতি অনেক বড় একটি দু’র্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন, এখন আপনি কেমন আছেন?
চারদিকে যে হারে ক’রোনা সং’ক্র’মণ বাড়ছে তার মধ্যে তো চাইলেও ভালো থাকা যায় না। প্রতিনিয়ত আ’তঙ্ক কাজ করে। আর আমি যে ভ’য়াবহ দু’র্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম, সে কথা চিন্তা করলে ভ’য়ে শিহরিত হই। এই অবস্থা কতটা ভ’য়ঙ্কর সেটা কেবল একজন মেয়েই বলতে পারবে। সবচেয়ে খা’রাপ লাগে যখন কেউ ঘটনা না জেনে মন্তব্য করে বসে। এতে করে আমরা না বুঝে অন্যের অনেক বড় ক্ষ’তি করে ফেলি। এতে ভি’কটিমের ক্ষ’ত আরো গাঢ় হয়। অন্যায়ের প্র’তিবাদ না করে নিজেকে লুকিয়ে রাখার পথ খোঁজা শুরু হয়। সবার ভালোবাসায় এই জায়গাটায় আমি এখনো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

ওই ঘটনার পর আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বি’ষয় কী মনে হচ্ছে?
ন্যায়বিচার পাওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অ’ভিযোগকারী শুধু একজন পরীমণি নয়, নি’র্যাতিত সব নারী। আমি যে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম অনেক নারীর সাথেই এরকমটা ঘটে। নিজের সামাজিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে এসব বি’ষয়ে মুখ খুলতে চান না তারা। অনেকে ক’ষ্ট বুকে চা’পা রেখে আত্মহ’’ত্যা করেন। আমি আত্মহ’’ত্যায় বিশ্বাসী নই। অন্যায়ের বি’রুদ্ধে লড়তে চাই। তার জন্যই এই প্র’তিবাদ। আজকে আমি যদি ন্যায়বিচার পাই, অ’পরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তি হয়, ভবি’ষ্যতে সব নি’র্যাতিত নারী প্র’তিবাদ করতে সাহস পাবেন। তারা আমার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারবেন।

আপনার করা মা’মলায় যাকে প্রধান আ’সামি করা হয়েছে তিনি সম্প্রতি জা’মিনে মুক্ত হয়েছেন এবং ওই ঘটনার জন্য আপনাকেই দায়ী করেছেন। আপনার মতামত কী?
এখানে মতামত দেয়ার কিছু নেই। আমি মা’মলা করেছি এখন বি’ষয়টি দেখবে আ’দালত। এ নিয়ে আমি কথার খেলা খেলতে চাই না। আমার আইনজীবী আছেন এ বি’ষয়ে তিনি কোর্টে কথা বলবেন।

সে দিন এত রাতে আপনি বোট ক্লাবে কেন গিয়েছিলেন?
এ বি’ষয়টি নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন। আমি কেন এত রাতে সেখানে গিয়েছিলাম। উত্তরটা হলো- আমি বোট ক্লাবেই যাইনি, আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই দিন আমার বাসায় একজন বেড়াতে এসেছিল। নাম বহ্নি। কথা ছিল আমার এখানে কয়েক দিন থাকবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই দিন রাতে ওর মা অ’সুস্থ হয়ে যায়। খবরটি যখন আমরা শুনি তখন রাত ১১টার মতো বাজে। বহ্নিকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আমি এবং জীম বের হই। তখন আমাদের সাথে জীমের বন্ধু অমিও ছিলো। সে আগে থেকেই আমাদেরকে বোট ক্লাবে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অমি নিজেই পুলিশের কাছে এটা স্বীকার করেছে। আমরা সেটা আগে বুঝতে পারিনি। আমি শুধু চিন্তা করেছি বহ্নি এবং অমি দু’জনের বাসাই যেহেতু উত্তরা তো গেলে স’মস্যা কি।

আমাদের গাড়ি যখন উত্তরায় পৌঁছে অমি তখন বলেছিল এক জায়গায় যেতে হবে ১০ মিনিটের মতো লাগবে। এরপর আমাদের গাড়ি এক জায়গায় থামে, জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় এসেছি? উত্তরে অমি বলল, বোট ক্লাব। বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, বুথ নাকি বোট? ও তখন বলল, বোট মানে নৌকা। ক্লাবের পরিবেশটা বেশ সুন্দর। কিন্তু ম’দ্যপ অবস্থায় কিছু লোক দেখে আমার আ’তঙ্ক তৈরি হয়, কারণ তারা তখন স্বাভাবিক ছিল না। এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা হয়ে গেছে এত দিনে। আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ ওই ক্লাবের বয়দের প্রতি। তারা না থাকলে আমার অবস্থা হয়তো আরো খা’রাপ হয়ে যেত। আরেকটা কথা, আমি কোনো ক্লাবেই এর আগে যাইনি। এটা আজবভাবে হইছে আমার সাথে। আমিও বোকা হই ভাবলে। মানুষের উপকার করতে বের হয়ে নিজেকে এভাবে ফেস করতে হচ্ছে।

অল কমিউনিটি ক্লাবের আসল ঘটনাটা কী?
অল কমিউনিটি ক্লাবের ঘটনাটার সাথে আমার কী সম্পর্ক সেটা আমিও জানি না। একটা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, আমি কয়েকজনের সাথে ক্লাবে প্রবেশ করছি। কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে যাচ্ছি। পরে আরেকটি ফুটেজে কিছু ভাঙা গ্লাস দেখানো হয়েছে। গ্লাসগুলো কে ভাঙল এটা কিন্তু দেখানো হয়নি। আর সেখানে যদি অপ্রীতিকর কিছু করতাম তাহলে তো ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমার নামে মা’মলা দিতে পারত। আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ভিডিওটা ছড়ানো হয়েছে বোট ক্লাবের মা’মলাটা দুর্বল করার জন্য।

তাহলে ক্যামেরার সামনে ভাঙা গ্লাসগুলো কিভাবে এলো?
গ্লাস যারা ভাঙছে তাদের তো আমি চিনি না। ওখানে লোকদের ঝ’গড়া দেখে তো পুলিশে কল করে তাদের হেল্প নিয়ে বের হয়ে যাই। আমি অন্যায় করার মানুষ না, ভু’ল করি প্রচুর। কিন্তু এমন কোনো ভু’লও করিনি যেখানে আমাকে কেউ চে’পে ধরে একদম অ’পরাধী বানিয়ে ফেলবে। আমি সত্যি বলতে ভ’য় পাই না।

ক্যারিয়ারের অল্প সময়ে আপনি এত দামি বাড়ি-গাড়ি কিভাবে করলেন সেটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।
কেউ যখন আমার নামে অতিরঞ্জিত কিছু বলে আমি উত্তর দেই না। দূর থেকে শুধু শুনি। এবার যখন বোট ক্লাবের ঘটনায় মা’নসিকভাবে বি’ধ্বস্ত তখনই আমার দামি, বাড়ি-গাড়ি নিয়ে অনেকে কথা বলতে শুরু করেন। সবচেয়ে ক’ষ্ট লেগেছে শোবিজ অঙ্গনের কয়েকজন যখন এ বি’ষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তাই আমিও প্রতিজ্ঞা করেছি, মানুষ আমার যে পরিমাণ সম্পত্তির কথা বলেছে, আমি সেটা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে দেখিয়ে দেবো ইনশাআল্লাহ।

কাজে নিয়মিত হচ্ছেন কবে?
এখন মা’নসিক অবস্থা আরেকটু স্ট্রং করার চেষ্টা করছি। লকডাউন শেষ হলেই আশা করি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারব। কাজ ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না। তাই সবাইকে বলব, আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন পৃথিবীটা যেন দ্রুত সুস্থ করে দেন। আমরা সবাই যেন দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারি।