ঢামেকের ওয়ার্ডবয় চট্টগ্রামে এসে হয়ে গেলো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক!

| আপডেট :  ৭ জুলাই ২০২১, ০২:২৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ জুলাই ২০২১, ০২:২৩ পূর্বাহ্ণ

তিনি নিজের পরিচয় দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার নামের পাশে লেখা থাকে বড় বড় ডিগ্রি— এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি) ও এফআরসিপি (লন্ডন)।

এমন ‘গুণধর’ ব্যক্তিটিই গত সাত বছরে কুমিল্লা, মাগুরা ও সবশেষ চট্টগ্রামে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। দুই দফায় কারাগারে ছিলেন দেড় বছর। প্রতিবারই কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবার পুরনো ‘কাজে’ জড়িয়ে পড়েন। নাম তার মো. খোরশেদ আলম (৪২)।

পড়ালেখা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কাজ করতেন ওয়ার্ডবয় হিসেবে। তবে শিক্ষার গণ্ডি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হলেও ওয়ার্ডবয়ের কাজ করার অভিজ্ঞতা দিয়ে একাধিক ভু;য়া ডিগ্রি ব্যবহার করে শুরু করেন ডাক্তারি। চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলীর এক ফার্মেসিতে বসে রোগী দেখার নামে করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রতারণা।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে নগরীর উত্তর কাট্টলীতে নিউরোমেডিসিনের ডাক্তার সেজে বসা এই প্রতারক খোরশেদ আলমকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘করোনা মেডিসিন ব্যাংকের’ সহায়তায় আটক করে আকবরশাহ থানার পুলিশ।গ্রেপ্তার খোরশেদ আলম হাটহাজারী থানার আব্দুর রহিমের ছেলে। ভু;য়া ডাক্তার পরিচয় দিয়ে থাকতেন নগরের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায়।

পুলিশ জানায়, খোরশেদ আলম মূলত ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন ওয়ার্ডবয় ছিলেন। পরে নিজেই ডাক্তার সেজে কুমিল্লায় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতেন। ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত কুমিল্লার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভু;য়া চিকিৎসক হিসেবে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর মাগুরায় স্থানীয় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিউরো মেডিসিন এবং মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দুই মাস ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে ধরা পড়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত এই ভু;য়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।

ভু;য়া ডাক্তার ধরায় পুলিশকে সহায়তা দেয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘করোনা মেডিসিন ব্যাংকের’ উদ্যোক্তা লায়ন ডা. মেসবাহ উদ্দিন তুহিন বলেন, ‘চিকিৎসাসেবার মতো মহৎ একটি পেশাকে অষ্টম শ্রেণি পাস একজন প্রতারক কিভাবে এমন নীচে নামাতে পারে ভাবতেই অবাক হই।’
আকবরশাহ্ থানার ওসি মো. জহির হোসেন জানান, নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছে বলে পরিচয় দিত খোরশেদ আলম। নামের পাশে লিখতেন এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজী) ডিগ্রী।

কিন্তু আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসবের কোনো ডকুমেন্ট প্রদান করতে পারেননি তিনি। পরে স্বীকার করেন তিনি প্রকৃতপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করতেন।