নারীরা কেনো পুরুষদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচেন?

| আপডেট :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড় আয়ু বেশি। এমনকি নারীরা পুরুষদের চেয়ে রোগে আক্রান্ত কম হন এবং অধিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। আর নারীদের এই সুস্বাস্থ্য এবং অধিক গড় আয়ুর কারণ খুঁজতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।

২০১৯ সালে আমেরিকায় পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আমেরিকান পুরুষেরা গড়ে ৭৬ বছর পর্যন্ত বাঁচেন এবং নারীরা বাঁচেন গড়ে ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত। এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এইচএএলই’ সূচক দিয়ে কোনোরকম বড় দুর্ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াই নারী ও পুরুষের বেঁচে থাকার সময়কাল হিসাব করা হয়। সেখানে দেখা গেছে যে, আমেরিকান পুরুষরা ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকেন এবং এক্ষেত্রে আমেরিকান নারীরা ৭০ বছর পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেঁচে থাকেন।

নারী পুরুষের আয়ুষ্কালের মধ্যে এ পার্থক্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা পারমিন্দার সাচদব বলেন, ‘পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে বেশি ধূমপান করেন, মদ্যপান করেন এবং অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়ে যান। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তার দেখাতেও অনাগ্রহী এবং রোগ ধরা পড়লে তারা নিয়মিত চিকিৎসাও নেন না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, পুরুষেরা অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ, জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ-এসব কাজ নিজের ঘাড়ে নিয়েন নেন। এই যেমন- গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া কিংবা ঝগড়া-লড়াই বা বন্দুকযুদ্ধ।’

এসব কারণের পেছনে বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে। পুরুষের শরীরে থাকা মেল সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে তাদেরকে এরকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দিকে বেশি ধাবিত করে। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের সম্পর্ক রয়েছে।

টেস্টোস্টেরন ও ইমিউন এর কার্যক্রমের মধ্যে যোগসূত্র স্পষ্টভাবে পাওয়া না গেলেও; মিনের ল্যাবের গবেষণায় দেখা যায় যে, রোগ প্রতিরোধ করবে এমন কিছু কোষের পথ বন্ধ করে দিতে সক্ষম টেস্টোস্টেরন। অন্যদিকে, টেস্টোস্টেরনের কম মাত্রার সঙ্গে পুরুষের হৃদরোগের ও দুর্বল স্বাস্থ্যের যোগসূত্র পাওয়া গেছে একাধিক গবেষণায়। তাই টেস্টোস্টেরন ও পুরুষ স্বাস্থ্যর মধ্যকার সম্পর্ক বেশ জটিল।

সাচদেব আরও বলেন, ‘এস্ট্রোজেন হরমোন নারীদের সুরক্ষা দেয়; এর একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা আছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এন্ডোক্রিনোলজি এর ২০১৩ সালের রিভিউতে দেখা যায়, রোগের কারণ হতে পারে এমন ডিএনএ ক্ষতিকে প্রতিরোধ করতে পারে এস্ট্রোজেন। রিভিউ থেকে আরও জানা যায় যে, এস্ট্রোজেন কোষের কার্যক্রমকে স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

আর এমন নানাবিধ কারণেই পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশিদিন বেঁচে থাকেন।