নি‌র্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হ‌বে না, বাবুনগরীর সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

| আপডেট :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৬ জুলাই ২০২১, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ণ

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে বৈঠ‌ক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ব‌লে‌ছেন, লকডাউ‌নে বন্ধ থাকা মাদ্রাসা খু‌লে দি‌তে এবং মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক‌দের গ্রেপ্তার না করতে সরকা‌রকে অনু‌রোধ ক‌রে‌ছেন হেফাজত আমির। তা‌কে বলা হ‌য়ে‌ছে, ক‌রোনা প‌রি‌স্থি‌তি পর্যা‌লোচনা ক‌রে মাদ্রাসা খোলার বিষ‌য়ে সিদ্ধান্ত নে‌বে সরকার। আর নি‌র্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হ‌বে না। সোমবার রাত ১১টার দিকে সমকালকে ফোনে এ কথা বলেন তিনি।

এর আগে রাত পৌ‌নে ৯টায় মন্ত্রীর ধানম‌ন্ডির বাসায় যান হেফাজত আমির। সংগঠন‌টির মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী এ সময় তার স‌ঙ্গে ছি‌লেন। রাত ১০টার দি‌কে তারা মন্ত্রীর বাসভবন থে‌কে বে‌র হন।

এ সময় তারা অপেক্ষমান সাংবা‌দিক‌দের স‌ঙ্গে কথা ব‌লেন‌নি। মন্ত্রীর বাসা থে‌কে গা‌ড়ি‌তে ক‌রে বে‌রি‌য়ে সরাস‌রি খিলগাঁও‌য়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় চ‌লে যান বাবুনগরী। কী কার‌ণে বৈঠক হ‌লো ত‌া নি‌য়ে কথা ব‌লেন‌নি হেফাজ‌তের কো‌নো নেতাই।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এরপর বারডেম হাসপাতালে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান তিনি।

বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জানতে বারবার চেষ্টা করেও হেফাজতের মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার জনসংযোগ সচিবও এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে হেফাজত সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, তিনটি দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যান জুনায়েদ বাবুনগরী। সেগুলো হলো- লকডাউনে বন্ধ থাকা মাদ্রাসা খুলে দেওয়া। হেফাজতের কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি। মাদ্রাসাগুলোকে সরকারি নিবন্ধনের আওতায় আনতে গত ২১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে। ২০১৮ সালের আইনে পরিচালিত কওমি মাদ্রাসার নিবন্ধনের বিরোধী হেফাজত। এ দাবিও মন্ত্রীকে জানাবেন হেফাজত আমির।

২০০৯ সালে গঠিত হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে রাজপথে নেমে আলোচনায় আসে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গত নভেম্বরে এর নেতৃত্বে আসেন মাওলানা বাবুনগরী। আহমদ শফী সময়ে সংগঠনের নেতৃত্ব সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চললেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে গত ডিসেম্বরে আবারও আলোচনায় আসে হেফাজত। গত মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে রাজপথে নামে হেফাজত। স্বাধীনতা দিবসে সহিংসতা হয় মোদিবিরোধী কর্মসূচিতে।

পরে হেফাজতের ডাকা বিক্ষোভ ও হরতালে তাণ্ডব ও সংঘর্ষে সরকারি হিসাবে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতের অর্ধশত সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাসহ ছয় শতাধিক কর্মী-সমর্থক গ্রেপ্তার হয়েছেন। ধরপাকড়ের মুখে গত ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন মাওলানা বাবুনগরী। গত ৭ জুন রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট এবং মামুনুল হকসহ কারাগারে থাকা সব বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে এ কমিটি করা হয়।

এ কমিটি আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তার সমর্থকরা প্রত্যাখান করেছেন। তারা পাল্টা কমিটির ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে গেছেন। হেফাজতের নতুন কমিটিকে নমনীয় অবস্থান নিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই দফা নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে সংগঠনটির প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।