শফীকে সরাতে যেভাবে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছিলেন বাবুনগরী

| আপডেট :  ৩০ জুন ২০২১, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৩০ জুন ২০২১, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আল্লামা শাহ আহম’দ শফীকে হেফাজতে ইসলামের আমীরের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছিলেন। হেফাজত আমীর হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম এনামুল হক ফারুকী গত ৩০ মে আ’দালতে দেয়া জ’বানব’ন্দিতে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দেন। জু’ডিশিয়াল ম্যা’জিস্ট্রেট জিহান সানজিদার

আ’দালতে তিনি এ জ’বানব’ন্দি প্রদান করেন। বিকেলে আ’দালতে প্রদত্ত জ’বানব’ন্দিতে তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনার বি’ষয়কে কেন্দ্র করে বাবুনগরীর সাথে আহম’দ শফীর দ্ব’ন্দ্ব চ’রম আকার ধারণ করে। মাদ্রাসায় ১০৮ ছাত্রের ভর্তির বি’ষয়কে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রদের ক্ষে’পিয়ে তুলে বাবুনগরীর অনুসারীরা। আহম’দ শফী মা’রা যাবার তিনদিন আগে নিজের অনুসারীদের নিয়ে গো’পনে বৈঠকও করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

বৈঠকে আহম’দ শফীকে হেফাজতের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়া ও সাধারণ ছাত্রদের শফী বি’রোধী আন্দোলন কিভাবে ক্ষে’পিয়ে তোলা যায় তা আলোচনা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শফীপুত্র আনাস মাদানীকে হেফাজত থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। শফীর মৃ’ত্যুর দুইদিন পর জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক এবং একমাস পর হেফাজতের আমীর নিযুক্ত হন। মাদ্রাসা এবং হেফাজত থেকে সরিয়ে দেয়া হয় আহম’দ শফীর অনুসারীদের।

হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম এনামুল হক ফারুকী আ’দালতে দেয়া জ’বানব’ন্দিতে জানান, তিনি ২০১৫ সালে হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় দাওরা কোর্সে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রধান খাদেম হিসাবে নিযুক্ত হন। মাদ্রাসা পরিচালনার বি’ষয় নিয়ে বাবুনগরীর সাথে হেফাজত আমীর শাহ আহম’দ শফীর দ্ব’ন্দ্ব সৃষ্টি হয়। বাবুনগরী তাঁর অনুসারী আজিজুল হক ইসলামাবা’দী, জুনায়েদ আল হাবিব, মামুনুল হক, মুফতি মনির কাসেমী, আতাউল্লা হাফেজী, নুরুল ইসলাম জিহাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নাসির উদ্দিন মুনীর, আহসান উল্লাহ মাস্টার, হাবিবুল্লাহ আজাদীসহ আরো বেশ কয়েকজন অনুসারী নিয়ে নিজস্ব একটি গ্রুপ তৈরি করেন।

এনামুল হক বলেন, হাটহাজারী উপজে’লা ও পৌরসভার হেফাজত নেতা মাওলানা জাফর, জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, এমরান শিকদার, ওবায়দুল্লাহ, সোয়াইব জমিরী, মাহমুদুল হাসান, নুর মোহাম্ম’দ, রিজু’য়ান আরমান, সোহেল চৌধুরী, জানায়েদ বিন ইয়াহিয়া, আবু মুছাসহ আরো বেশ কিছু লোক নিজের দলে ভিড়ান বাবু নগরী। এসব লোকজনদের নিয়ে আহম’দ শফীকে সরানোর বি’ষয়ে গো’পনে মিটিং করতেন। এরমধ্যে জিয়া, নাদিম, শহিদুল্লাহ, আরিফ, সাকিব, রাজিব, নাছির, ওমর ফারুক, হেলাল ও সাদ নামে বেশ কিছু মাদ্রাসা ছাত্রকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বাবু নগরীর পক্ষে কাজ করতে রাজি করান তিনি নিজেই (এনামুল হক)।

জ’বানব’ন্দিতে তিনি আরো বলেন, শাহ আহম শফী মা’রা যাবার তিন দিন আগে মাদ্রাসায় ছাত্রভর্তি নিয়ে ঝামেলা হয়। তখন জরুরিভাবে নিজের অনুসারীদের নিয়ে মিটিং করেন বাবুনগরী। ছাত্র ভর্তি ইস্যুতে সাধারণ ছাত্রদের আহম’দ শফীর বি’রুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের উ’স্কানি দেয় বাবু নগরীর অনুসারীরা। আন্দোলনরত ছাত্ররা আহম’দ শফীর পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষকদের কক্ষ ভাং’চুর করে। মুফতি হারুন ইজহার ফেসবুকে আন্দোলনরত ছাত্রদের উ’স্কানি দেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের নিয়ে আহম’দ শফীর সাথে মাদ্রাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকেই আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ব’হিষ্কার করা হয়। পরদিন (১৮ অক্টোবর) সকালে শাহ আহম’দ শফি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলে বাবুনগরীর নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্রদের ক্ষেপিয়ে তোলে বৈঠক বানচাল করে দেয়া হয়। ওইদিন বিকেলে আহম’দ শফির কক্ষে মাদ্রাসার সুরা সদস্য মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা নোমান ফয়েজী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী ও ওমর ফারুক বৈঠক করে শফিকে পদত্যাগ করতে প্রস্তাব দেন।

শফি রাজী না হলে তার কক্ষ ভা’ঙচুর করা হয়। এক পর্যায়ে শফিকে পদত্যাগ করতে বা’ধ্য করা হয়। মাওলানা শেখ আহম’দ ও নোমান ফয়েজী ‘শফী স্বেচ্ছায় পতদত্যাগ করেছে’ এমনটি ঘোষণা দেন মাইকে। এরমধ্যে শাহ আহম’দ শফি অ’সুস্থ হয়ে পড়লে বাবুনগরী ও তার পক্ষের লোকজনের উ’স্কানিতে আন্দোলনরত ছাত্ররা চিকিৎসার জন্য শফিকে বাইরে নিতে বা’ধা দেয়।