আমলাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য: কিসের আলামত

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২১, ০৩:২০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২১, ০৩:২০ অপরাহ্ণ

জাতীয় সংসদে গতকাল একযোগে সংসদ সদস্যরা আমলাদের ধুয়ে দিলেন। আমলাদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠলো জাতীয় সংসদ। তোফায়েল আহমেদ থেকে শুরু করে কাজী ফিরোজ রশীদসহ রুস্তম ফরাজী`র মতো এমপিরাও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেন এবং তারা অভিযোগ করলেন সরকার আমলানির্ভর হয়ে গেছেন। রাজনীতিবিদরা এখন সাইডলাইনে।

গত কিছুদিন ধরেই আমলাদের বিরুদ্ধে নানা রকম কথাবার্তা বলা হচ্ছিল এবং সরকারকে আমলা কুক্ষিগত করে ফেলেছে বা আমলা নিয়ন্ত্রিত সরকার চলছে এমন কথাবাত্রা বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল। বিশেষ করে করোনা মোকাবেলা যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকে জেলার দায়িত্ব সচিবদের দেওয়া, জেলা প্রশাসকদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করা, জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব ইত্যাদি নানা ইস্যুগুলো ক্রমশ দানা বেঁধে উঠেছিল এবং গণমাধ্যমেও গত কিছুদিন ধরে লাগাতারভাবে আমলাদের খবরদারির কথা প্রকাশিত হচ্ছিলো।

আর এইরকম প্রেক্ষাপটে কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী আমলাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এরও আগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদের উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী আমলাদের বাড়াবাড়ি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু এই সমস্ত বিক্ষিপ্ত সমালোচনা এবং শঙ্কা গতকাল যেনো এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছিল। গতকাল জাতীয় সংসদে আমলাদের মধ্যে একটি সম্মিলিত কণ্ঠস্বর ছিল এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্য লক্ষ্য করা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে আমলাদের বিরুদ্ধে এই রাজনৈতিক ঐক্য কিসের আলামত?

এটি কি স্রেফ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কথাগুলো বলেছেন নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে? বাংলাদেশে ৭৫ এর পর থেকেই একটা বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চলমান। বিভিন্ন সময়ে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে সরব হতে দেখা গেছে। সর্বশেষ উদাহরণ ছিল ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন। সেইসময় রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণ করে রাজনীতি বিবর্জিত একটি সরকার দু`বছর দেশ চালিয়েছিল।

অনেকে অভিযোগ করেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের সেই ধারাবাহিকতায় এখন আমলাদের বিকাশ ঘটছে এবং রাজনীতিবিদদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এই মতের সঙ্গে অনেকে একমত নন। গতকালকে যে রাজনৈতিক ঐক্য হয়েছিল তারা সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তারা যখন এই আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করলেন সেটির একাধিক ব্যখ্যা থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

আমলাদেরকে জেলার দায়িত্ব দেওয়া বা জেলা প্রশাসকদের কর্তৃত্ব বাড়ানো বা আমলাদের দিয়ে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করা ইত্যাদি সবই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। তাহলে তোফায়েল আহমেদ, কাজী ফিরোজ রশীদরা কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তেমনটি মনে করছেন না। বরং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই হয়তো আমলাতন্ত্রের বোঝা সরকারের ঘাড় থেকে নামাতে চাইছেন এবং এটি নামানোর জন্য রাজনীতিবিদদেরকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।

রাজনীতিবিদরা এই সবুজ সংকেত পেয়েই হয়তো আমলাদের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করতে পারছেন। তাছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো সংসদ সদস্যদের মনোভাবটা শুনলেন এবং এটির ফলে তিনি নতুন করে তার নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম সাজাবেন। গত এক বছর ধরে আমলাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা হচ্ছে কিন্তু কখনোই কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে কথা বলেননি।

ওয়ান-ইলেভেনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একক কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত ছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ ধরনের কথা বলবেন এটি অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। এরকম বাস্তবতায় আমলাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য রাজনীতিকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করার একটি প্রয়াস কিনা সেটাই দেখার বিষয়। সূত্রঃ বাংলা ইন্সাইডার