ছা’ত্রীর সঙ্গে শা’রীরিক সম্পর্কের পর মায়ের স’ঙ্গেও অ’নৈতিক স’ম্পর্ক, ছাড়েননি ছোট বোনকেও

| আপডেট :  ২১ জুন ২০২১, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২১ জুন ২০২১, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

পুরান ঢাকার কদমতলীতে বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুনের হাতে মা, বাবা ও বোনের খু”ন হওয়ার ঘটনায় নানা চা’ঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। পারিবারিক ক’লহে মা-বাবা ও বোনের ও’পর চ’রম ক্ষু’ব্ধ ছিলেন মেহজাবিন। তাদের হ’’ত্যার পরিকল্পনা করেন

ছয়মাস আগেই। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে একটি-দুটি করে ঘুমের ও’ষুধ সংগ্রহ শুরু করেন। হ’’ত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে স্বামী ও স’ন্তানকে নিয়ে কদমতলীতে মায়ের বাড়িতে আসেন মেহজাবিন। শুক্রবার (১৮ জুন) রাতে সঙ্গে আনা ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়া চা, কফি ও পানিতে মিশিয়ে দেন। সেগুলো খেয়ে সবাই অ’চেতন হয়ে পড়লে ওড়না পেঁ’চিয়ে শ্বা’সরো’ধে বাবা-মা ও বোনকে হ’’ত্যা করেন। রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুর

এলাকার বাসায় তিন খু’নের ঘটনায় মেহজাবিন মুন প্রাথমিক জি’জ্ঞাসাবাদে হ’’ত্যার দায় স্বীকার করে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার দুই মাস আগেও মেহজাবিন তরমুজের জুসে ঘুমের ও’ষুধ মিশিয়ে পরিবারের সদস্যদের হ’’ত্যার চে’ষ্টা চালান বলে জানায় পুলিশ। এর আগে গত শনিবার সকালে নিজেদের বাসা থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে তিনজনকে হ’’ত্যার

কথা জানান মুন। পরে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে তার বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমী ইসলাম ও ছোট বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীর হা’ত-পা বাঁ’ধা লা’শ উ’দ্ধার করে। অ’চেতন অবস্থায় পাওয়া যায় মুনের স্বামী শফিকুল ও তাদের মেয়ে মারজান তাবাসসুম তৃপ্তিকে। শনিবার রাতে তার বি’রুদ্ধে কদমতলী থানায় হ’’ত্যা মা’মলা করেন তার চাচা সাখাওয়াত হোসেন। এতে তার স্বা’মী শফিকুল ইসলামকেও আ’সামি করা হয়েছে। পরে চি’কিৎসাধীন শফিকুলকেও এ মা’মলায় গ্রে’প্তার দেখানো হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, ছোটবেলা থেকেই বে’পরোয়া ছিলেন মেহজাবিন ইসলাম মুন। বাবা মাসুদ রানা বিদেশে থাকায় তাকে শাসন করার মতো কেউ ছিল না। খা’রাপ বন্ধুদের সঙ্গ অল্প বয়সেই মেহজাবিনকে বি’পথে নিয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে মিশে মা’দকাস’ক্ত হয়ে পড়েন।একাধিক পু’রুষের শ’য্যাসঙ্গী হওয়া ছিল স্বাভাবিক বি’ষয়। মেহজাবিন মুনের এই বে’পরোয়া জীবনে অ’তিষ্ঠ ছিল এলাকার সবাই। পরিবারটির সদস্যদের মধ্যে জটিলতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে ত’দন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, বিয়ের আগে

আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবক মেহজাবিন মুনকে প্রাইভেট পড়াতেন। এ সময় ছা’ত্রীর সঙ্গে তার প্রেম ও শা’রীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই গৃহশিক্ষক ছা’ত্রীর মা মৌসুমীর স’ঙ্গেও অ’নৈতিক স’ম্পর্কে জ’ড়িয়ে পড়েন। দু’জনের সঙ্গে অ’ন্তরঙ্গ স’ম্পর্কের ভিডিও করে রেখেছিলেন আমিনুল। সেটি হয়ে ওঠে তার হাতিয়ার। ভিডিও প্রকাশের ভ’য় দেখিয়ে তিনি মা-মে’য়েকে জি’ম্মি করে অ’নৈতিক স’ম্পর্ক চা’লিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি তিনি মেহজাবিনের ছোট বোন জান্নাতুল ও তার এক আত্মীয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেন।

এই বহুমুখী জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের একপর্যায়ে মেহজাবিন মুনকে শফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন মৌসুমী। এতে ক্ষি’প্ত হয়ে আমিনুল তার সঙ্গে অ’ন্তরঙ্গ মু’হূর্তের ভিডিও মেহজাবিনের স্বামীকে দেখান। এতে তাদের সংসারে দা’ম্পত্য ক’লহ শুরু হয়। অন্যদিকে মৌসুমীও তখন আমিনুলের ও’পর বি’র’ক্ত। শেষে শফিকুল, মৌসুমী ও তার এক বোন মিলে আমিনুলকে ডেকে নিয়ে হ’’ত্যা করেন। ওই ঘটনায় মুন আ’সামি হলেও পরে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ অপর তিনজনের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগপত্র দেয়।

পুলিশের ত’দন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পড়ালেখায় ভালো ছিলেন মুন। এসএসসি পরীক্ষায় তার জিপিএ ৫ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মা আগেই দুই মে’য়েকে অ’সামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত হতে বা’ধ্য করেছেন। এমনকি পরীক্ষা চলাকালেও তাকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এ কারণে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৮ পান মুন। কৈশোরে অ’সামাজিক কার্যকলাপে জ’ড়িত করায় তিনি মায়ের ও’পর ক্ষু’ব্ধ ছিলেন। আবার তার বাবা মাসুদ রানা প্রবাসে আরেকটি বিয়ে করেছেন, দুই মেয়ের ব্যাপারে তিনি কোনো মনোযোগ দেননি।

মায়ের নি’র্যা’তন থেকে মেয়েদের বাঁ’চাতে কোনো ভূমিকা না রাখায় তার প্রতিও ক্ষো’ভ জমে ছিল মুনের। আর শ্যালিকা জান্নাতুলের সঙ্গে অ’নৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শফিকুল। এতে সং’সার ভা’ঙার উপক্রম হওয়ায় ছোট বোনকেও দুনিয়া থেকে স’রানোর পরিকল্পনা করেন মেহজাবিন মুন। সে অনুযায়ী দুই মাস আগে প্রথমবার তিনি মা-বাবা-বোনকে হ’’ত্যার চেষ্টা চালান। সেদিন মা ও বোন ঘুমের ও’ষুধ মেশানো জুস খেয়ে অ’চেতন হয়ে পড়েন। তবে ডায়াবেটিস রো’গী হওয়ায় খেতে রাজি হননি বাবা মাসুদ। ফলে পরিকল্পনা সফল হয়নি।

ওই ঘটনা পর মেহজাবিন সিদ্ধান্ত নেন, এত অল্প মাত্রার ও’ষুধে হবে না। হ’’ত্যা করতে হলে মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। এ কারণে তিনি শুক্রবার দুই মিলিগ্রাম মাত্রার ৪০টি ট্যাবলেটের গুঁড়া পানীয়তে মেশান। অথচ এই ও’ষুধ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ চার মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেন। ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘মেহজাবিনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, বাবা দেশে না থাকায় তার মা তাকে এবং তার ছোট বোনকে (নি’হত জান্নাতুল) দিয়ে দে’হ ব্যবসা করাত। এসব নিয়ে প্র’তিবাদও করেছিল সে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’

তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ছোট বোনকে দিয়ে ব্যবসা চলছিল। এর মধ্যে তার স্বামী ছোট বোনের সঙ্গে স’ম্পর্ক গড়ে তোলে। এ ছাড়া মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা ওমানে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এসব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষো’ভ থেকে পরিবারের সবাইকে হ’’ত্যার প’রিকল্পনা করেন বলে মেহজাবিন পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে নি’হতদের স্বজনদের দাবি, মেহজাবিন মুনের একার পক্ষে এই নি’র্মম হ’’ত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। সঙ্গে তার স্বামী শফিকুলও জ’ড়িত। একই ধারণা পুলিশেরও। কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘মেহজাবিনের স্বামীকেও আমরা স’ন্দেহের বাইরে রাখছি না। তাকেও জি’জ্ঞাসাবাদ করা হবে। সম্পত্তির বি’ষয়ও এখানে রয়েছে। ত’দন্তে এসব আসবে।’

এদিকে মা, বাবা ও বো’নকে হ’’ত্যার ঘটনায় করা মা’মলায় মেহজাবিন ইসলাম মুনের চারদিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেছেন আ’দালত। রবিবার (২০ জুন) মুনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আ’দালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর হ’’ত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মা’মলার সুষ্ঠু ত’দন্তের জন্য তাকে সাতদিনের রি’মান্ডে নিতে আবেদন করেন মা’মলার ত’দন্তকারী কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক জাকির হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তার চারদিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেন। সুত্রঃ কালের কণ্ঠ