জনসংখ্যার চেয়ে জন্ম নিবন্ধন এক কোটি বেশি!

| আপডেট :  ১৯ জুন ২০২১, ০২:২৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৯ জুন ২০২১, ০২:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই একই ব্যাক্তি একাধিকবার জন্ম নিবন্ধন করছেন। নিয়মিত হালনাগাদ করে বাদ দেয়া হচ্ছে না মৃত ব্যক্তিদেরও। আর এসবের জেরে দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার তুলনায় জন্ম নিবন্ধনকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি বেশি।

জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৮ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। কিন্তু আদমশুমারির চলতি বছরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২০ লাখ ৯৪ হাজার। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রকৃত জনসংখ্যার চেয়ে জন্ম নিবন্ধনের সংখ্যা ৯৯ লাখ ছয় হাজার বেশি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জন্ম নিবন্ধন নির্ভুলভাবে করা হচ্ছে না। এক ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধন, জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন না হওয়া, তথ্য যাচাইয়ে দুর্বলতা, মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন বাতিল করে তালিকা সংশোধন না করায় এমন অস্বাভাবিক হিসাব দেখা দিয়েছে।

দেখা গেছে, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের অনলাইনে কাজ করার জন্য অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের কাজ শেষ হয়নি। নিবন্ধনের আবেদন, মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদন করতে গেলে সহজে করা যাচ্ছে না। ফেসবুক পেজটিরও গত বছর ৭ অক্টোবরের পর কোনো আপডেট নেই। আইন অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মোট জন্ম নিবন্ধনের তুলনায় জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার খুবই কম।

এছাড়া, কোনে তথ্য হালনাগাদ করতে হলেও ভোগান্তির শেষ নেয়। বার বার ছুটে বেড়াতে হয় সিটি কর্পোরেশন অফিস এবং ডিসি অফিসে। ফলে অনেকেই এই ভোগান্তি এড়াতেও জন্ম নিবন্ধনে কোনো ভুল হলে সেটি সংশোধন না করে পুনরায় নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করেন। এর ফলে অনেকসময়ই একই ব্যক্তির দুইবার জন্ম নিবন্ধন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, মূলত বয়স ও নাম পরিবর্তনের জন্য যেতে হয় ডিসি অফিসে। নিবন্ধনের অন্য কাজগুলো করে সিটি করপোরেশনের জোনাল অফিস। এ বিষয়ে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জোন ৯-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. খায়রুল হাসান বলেন, ‘দরকার না হলে অনেকে জন্ম নিবন্ধন করেন না। একটা সময় করার জন্য ততটা জোরও ছিল না। জন্ম নিবন্ধন আইন থাকলেও আগে সেটি কার্যকর ছিল না। যেহেতু ম্যানুয়ালি এখন জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয় না, তাই দুই জায়গা থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই। কিছু বিষয় আমাদের হাতে নেই। যেমন বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে ডিসি অফিসে একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিষয়টি দেখে থাকেন।’

খায়রুল হাসান বাড়তি নিবন্ধন হওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘জটিলতা তো কিছু আছে। কিছু বিষয়ের কারণে আদমশুমারির সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সমান হওয়ার কথা নয়। দেখা গেল, একজনের গ্রামের বাড়ি এক জায়গায়, কিন্তু তিনি থাকেন অন্য জায়গায়। এখন তাঁর সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে গেলে সমস্যা হয়। তিনি ঢাকায় থাকেন, কিন্তু তাঁর ভোটার আইডিতে বর্তমান ঠিকানা থাকার কারণে গ্রামের বাড়ির ঠিকানার জন্য তাঁকে জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। জন্ম নিবন্ধন একদিকে যেমন জরুরি অন্যদিকে আবার জটিলও। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়।’

প্রসঙ্গত, জন্ম নিবন্ধন হালনাগাদ করার পেছনে গত তিন দশকে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৬টি অত্যাবশ্যক পরিষেবা পেতে জন্ম নিবন্ধন সর্বপ্রথম প্রয়োজন হয়।