নতুন কমিটি নিয়েও হোঁচট খেলেন বাবুনগরী

| আপডেট :  ১৬ জুন ২০২১, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৬ জুন ২০২১, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আহম’দ শফীর মৃ’ত্যুর পর হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব নিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। আহম’দ শফী পন্থীদেরকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছিলেন হেফাজত থেকে। দ’খল করেছিলেন সব গুরুত্বপূর্ণ মাদ্রাসাগুলো। জামায়াত-বিএনপি এবং স্বাধীনতা বি’রোধীদেরকে একাট্টা করেছিলেন হেফাজতের ছায়াতলে এবং তাদেরকে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেই কমিটি ত’ছনছ হয়ে গেছে। হেফাজতের নেতাদের নানা অ’পকর্ম এবং অপ্রীতিকর ঘটনার ফলশ্রুতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী জনরোষের মুখে ওই কমিটি বাতিল করতে বা’ধ্য হন। গঠন করেছিলেন একটি আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর তিনি সম্প্রতি একটি নতুন কমিটি গঠন করেছেন। কিন্তু এই নতুন কমিটি গঠন করেও হোঁচট খেয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

প্রথমত, নতুন কমিটির যারা সদস্য তাদের একটি বড় অংশই এ কমিটিতে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজত বি’তর্কি’ত হয়েছে এবং একটি রাজনৈতিক অভিনাশ পূরণের জন্য হেফাজত কাজ করছে। এই বাস্তবতায় তারা এ ধরনের কমিটির সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, হেফাজতের যে মূল লক্ষ্য এবং আদর্শ ছিল সেই লক্ষ্য এবং আদর্শ থেকে হেফাজত বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই তারা এই বি’তর্কি’ত কমিটির সঙ্গে থাকতে চান না।

দ্বিতীয়ত, এই কমিটিতে বিভিন্ন ঘটনায় অ’ভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তি স্থান পেয়েছেন যারা গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামের তা’ণ্ডবের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কাজেই এই বি’তর্কি’ত ব্যক্তিদের রাখায় হেফাজতে যারা সত্যিকারে আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষক তারা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছেন।

তৃতীয়ত, হেফাজতের নির্বিবা’দী এ যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন তারা মনে করছেন জুনায়েদ বাবুনগরী নিজেই একজন বি’তর্কি’ত ব্যক্তি এবং তার কিছু অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। সেজন্যই তিনি তড়িঘড়ি করে এই কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছেন। সে জন্য তারা এই কমিটিকে গ্রহণ করেনি।

চতুর্থত, আহম’দ শফী পন্থীরা এই কমিটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, জুনায়েদ বাবুনগরী সকলের মতামত না নিয়ে গঠনতন্ত্র অনুসরণ না করে এই কমিটি গঠন করেছেন। কাজেই এই কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়।

পঞ্চমত, দু’র্নীতিবাজদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া। হেফাজতের বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন যে, প্রথমবার যখন কমিটি গঠন করা হল তখন মামুনুল হক সহ বিভিন্ন বি’তর্কি’ত ব্যক্তিদের নেয়া হয়েছিল। যখন তাদের বি’রুদ্ধে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক, নৈতিকস্খলন জনিত অ’পরাধের অ’ভিযোগ আসলো তখন জুনায়েদ বাবুনগরী এদের বি’রুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এটি কখনো একটি ধর্মভিত্তিক, মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের কাজ হতে পারে না। এখন যে সমস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের বি’রুদ্ধেও নানারকম বি’তর্কি’ত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অ’ভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। আর এই বাস্তবতায় হেফাজতের অনেকেই এই কমিটি গঠনের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন।

সবচেয়ে বড় কথা হল যে, হেফাজতের অধিকাংশ মানুষই মনে করছেন হেফাজতের স্বার্থে জুনায়েদ বাবুনগরী কমিটি গঠন করেনি। বরং কমিটি গঠন করেছেন তার নিজের বাঁচার জন্য। আর তাই শুরুতেই এই কমিটি নিয়ে হোঁচট খেলেন বাবুনগরী। একদিকে যেমন এই কমিটি মাদ্রাসার অধিকাংশ আলেম-ওলামার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি তেমনিভাবে এই কমিটিতে বি’তর্কি’ত ব্যক্তিদের রাখার কারণে এ নিয়ে মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটির মধ্যেও বিভক্ত সুস্পষ্ট হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জুনায়েদ বাবুনগরীর সামনে অনিশ্চিত পথ।