সেই রাতে ক্লাবে পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল, ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফাঁস

| আপডেট :  ১৪ জুন ২০২১, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৪ জুন ২০২১, ০৮:১২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা বোট ক্লাবে অভিনেত্রী পরীমণিকে ধ”ণ ও হ’’ত্যা চেষ্টার ঘটনায় ক্লাবের ভেতরে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত একটি শর্ট ভিডিও ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। ঘটনার সময় (বুধবার, ৯ জুন) রাত পৌনে ১১ টার দিকে। সেখানে থাকা এক ব্যক্তি ১৬ সেকেন্ডে এই ভিডিওটি মোবাইল ফোনে ধারণ করেছেন।

অন্ধকারাচ্ছন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা বোট ক্লাবের ভেতরের চিত্র। ভিডিওতে প্রথমেই দেখা যায়, একজন নারী হেটে চলে যাচ্ছেন। এরপর সেখানে এক ব্যক্তি অস্পষ্ট ইংরেজি ভাষায় কথা বলেছেন। অপর পাশে মাতাল কণ্ঠে অন্যজন (নাসির ইউ মাহমুদ) বলছেন, অমিকে (পরীমণীর বন্ধু) এই রুমে আনবা না। পরক্ষণে ইংরেজিতে ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘আই হার্ট ইউ’।

এরপরই উত্তেজিত হয়ে অ’শ্লীল ভাষায় গা’লিগা’লাজ দিয়ে যাচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। এসময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যদিও কারও চেহারা দেখা যায়নি ভিডিওটিতে।

এদিকে, গতকাল রোববার রাতে ঘটনার বি’ষয়ে অভিনেত্রী পরীমণি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তার এক বন্ধু (অমি) বাসায় আসেন। বাসা থেকে তাকে উত্তরার বোট ক্লাবে (ঢাকা বোট ক্লাব) নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জিমি (ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী)।

বোট ক্লাবে যাওয়ার পর সেখানে সাত/আটজনের একটা গ্রুপ ছিল। তাদের মুরব্বি ছিলেন নাসির উদ্দিন (নাসির ইউ মাহমুদ)। তিনি বোর্ড ক্লাবের প্রে’সিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।’ ওই সময় নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জো’রপূর্বক শা’রীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অ’ভিযোগ করেন পরীমণি।

সে রাতে ক্লাবে পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিলঃ দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণিকে ধ”ণ ও হ’’ত্যাচেষ্টা করা হয়েছে এবং তাকে ধ”ণ করতে না পেরে মে’রে ফেলার হু’মকিও দেওয়া হয়েছে এ অবস্থায় তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। রবিবার (১৩ জুন) রাতে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সেদিন তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল সেটাও জানিয়েছেন পরীমনি।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসে অ’ভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও পরে সাংবাদিকদের সামনেই অ’ভিযুক্তের নাম ও কখন, কোথায় তাকে শ্লী’লতাহা’নির চেষ্টা করা হয় সেসবের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

রাত সাড়ে ১০টায় বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের পরীমনি জানান, গত ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। ক্লাবটির নাম উত্তরা বোট ক্লাব। সেখানে ম’দ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নাম নাসিরউদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজেকে ক্লাবটির সাবেক প্রে’সিডেন্ট পরিচয় দেন। নাসিরউদ্দিনসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা তার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। মাধুরী দিক্ষিত বলে নাচতে বলে। এক সময় তাদের একজন হঠাৎ জো’র করে পরীমনির মুখে পানীয়র গ্লাস চে’পে ধরে এবং শ্লী’লতাহা’নির চেষ্টা করে। এ সময় মা’রধর পরীমনির সঙ্গে থাকা কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকেও মা’রধর করে তারা।

নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জো’রপূর্বক শা’রীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অ’ভিযোগ করেন পরীমনি।

পরীমনি বলেন, বুধবার রাত ১২ টার দিকে অমি নামের একজন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে উত্তরা বোট ক্লাবে যাই। সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমিও ছিলেন। তবে পরে সেখানে নাসিরউদ্দিন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি আসেন। তিনি নিজেকে উত্তরা বোট ক্লাবের সাবেক প্রে’সিডেন্ট পরিচয় দেন। সেদিন তিনিসহ চারজন ম’দ্যপ ব্যক্তি আমাকে শা’রীরিকভাবে নি’র্যাতন করেন। চড়-থা’প্পড় মা’রেন। গায়ে আ’ঘাত করেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে নে’শাদ্রব্য খাইয়ে ধ”ণের চেষ্টা করে।

এই ঘটনার পর পরীমনি বনানী থানায় অ’ভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তারা অ’ভিযোগ রেকর্ড করেননি। এরপর হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।

পরীমণি বলেন, ‘এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?’

অ’ভিযুক্তদের বি’ষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন। সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভ’য় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’

কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পরীমনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ৫ মিনিট কাঁদতে দেখছেন। কিন্তু আমি গত চারদিন ধরে কাঁদছি। ওই লোক আমাকে কি সব বিশ্রি কথা বলেছিলো। আমি বলতে পারছি না। আমি পা’গল হয়ে যাচ্ছি। আমার জায়গায় আপনারা থাকলে হয়ত কথাও বলতে পারতেন না। আমি ওইখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ওয়েটাররা ধরে আমাকে নামিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরায় সব রেকর্ড আছে। আমার মনে হয়েছে বি’ষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পিত।’

একপর্যায়ে অঝরো কাঁদতে কাঁদতে পরীমনি চি’ৎকার করে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে আপনারা জেনে রাখু’ন, আমি আত্মহ’’ত্যা করার মতো মেয়ে নই। যদি ম’রে যাই তবে বুঝবেন, আমাকে মে’রে ফেলা হয়েছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। মরলে আমি আমার বিচার নিয়ে মরব।’