লাখ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে আমবাগানে কোটিপতি

| আপডেট :  ৮ জুন ২০২১, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৮ জুন ২০২১, ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বেকারত্বের হার বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বেকারত্ব প্রভ দেশ। সাধারণত অধিকাংশ বাংলাদেশী যুবক পড়ালেখা সম্পন্ন করে চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়। তবে চাকরি ছাড়া উদ্যোক্তা হয়েও যে সফল হওয়া যায় তার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন সেলিম সরকার নামের এক যুবক।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের কাতলমারি গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে সেলিম সরকার উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন।নিজের স্বপ্ন অনুযায়ী পড়াশোনা শেষে উচ্চ বেতনের চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বাবার মৃত্যু সবকিছু বদলে দেয়। পরবর্তীতে দেশে ফিরে প্রত্যন্ত গ্রামে নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন ‘রাও ফার্ম ফ্রেশ’ অ্যাগ্রো ফার্ম। সেখান থেকে এখন প্রতি মাসে আয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। নিজের বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি সেলিমের প্রতিষ্ঠানে এখন আরও ৪৫ যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

কাতলমারি গ্রামে প্রায় ১৩ একর জমির ওপর গড়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির আম, ড্রাগন, মালটার বাগান ও নার্সারি। পাশাপাশি রয়েছে গরু, গাড়ল ও ভেড়ার খামার। এছাড়া রয়েছে চিনিগুঁড়া ধান ও সরিষার আবাদ। সেলিমের ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৫ জন যুবকের।

সেলিন জানান, ২০০৭ সালে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। লন্ডনের বেডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর মাসে তিন লাখ টাকা বেতনে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি) কোম্পানিতে অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে যোগ দেন। কিন্তু এর মাঝেই ২০১২ সালে বাবা মৃত্যুবরণ করায় ফিরে আসেন গ্রামের বাড়ি। এরপর তার মায়ের অনিচ্ছায় আর লন্ডনে যাওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেন গ্রামেই এমন কিছু করবেন যা দিয়ে বিদেশের চেয়ে বেশি আয় করা যায়। আর সে উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৪ সালে গরুর ফার্ম শুরু করেন।

এরকিছুদিন পর নিজেদের ১০ একর জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে হাড়িভাঙা, আম্রপালি, মিশ্রিভোগ, বারি-৪, ফজলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির তিন হাজার গাছের আমের বাগান গড়ে তুলে। এরপর ড্রাগন, মালটা ফলের বাগান তৈরি করেন। ২০১৭ সালে তার আমবাগানে প্রথম ফলন হয়। প্রথমবার ফলনের পরিমাণ কম থাকায় পাইকারি ফল ব্যবসায়ীদের কাছে বাগানের আম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরা পুরো বাগানের আম সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে চাইলে হতাশ হন।

পরে কৌতূহলবশত বাগান নিয়ে ফেসবুকে লাইভ শুরু করেন। আর ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি তার আম বাগান সম্পর্কে জেনে আম কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং যেই আমবাগান পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাঁচ হাজার টাকা দাম বলেছিলেন সেই বাগান এক লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এরপরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি তার ফার্মে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করবেন। এরপর এভাবেই তিনি পরের বছর ২০১৮ সালে ১৮ লাখ টাকার আম, ড্রাগন এবং মালটা বিক্রি করেন। সর্বশেষ গত বছর ৫০ লাখ টাকার আমসহ অন্যান্য ফল বিক্রি করেচেন। আার আশা করছেন, চলতি বছর এক কোটি টাকার আমসহ অন্যান্য ফল বিক্রি করবেন।

সেলিম আরও জানান, তার বিক্রি করা ফল খেয়ে ক্রেতারা ওসব ফলের গাছের খোঁজ করেন। সেই তাগিদ থেকে ২০১৮ সালে নার্সারি করেন। গত বছর তিনি পাঁচ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছের চারা বিক্রি করেছেন। গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু বিক্রি করে গত বছর আয় করেছেন পাঁচ লাখ টাকা। আসছে কোরবানির ঈদে ৪০টি গরু বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন সেলিম।

নিজের সফলতা সম্পর্কে সেলিম জানান, সততাই তার সফলতার মন্ত্র। তার পন্যগুলোর অধিকাংশ বিক্রি হয় অনলাইন মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত অনলাইনে গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হলেও সে জায়গায় রাও ফার্ম ফ্রেশ শতভাগ সততার সঙ্গে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করছে। ফলে গ্রাহকরাই এখন রাও ফার্ম ফ্রেশের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে রাও ফার্ম ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।