হেফাজতের সাথে আবার কেন সমঝোতা?

| আপডেট :  ৭ জুন ২০২১, ০৩:২২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ৭ জুন ২০২১, ০৩:২২ অপরাহ্ণ

আজ হেফাজতের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই জুনায়েদ বাবুনগরী এবং জেহাদীর নেতৃত্বে নতুন কমিটিকে একটি অরাজনৈতিক অবয়ব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এই নতুন কমিটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে, যারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন তাদেরকে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গতবারের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটিতে খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধর্মান্ধ মৌলবা’দী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদেরই বেশি জায়গা দেওয়া হয়েছিল।

এবার সেই জায়গা থেকে সরে আসা হয়েছে। আর এই সরে আসার প্রেক্ষিতেই অনেকে ধারণা করছেন যে, স’রকারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত হেফাজতের একটি সমঝোতা হয়েছে। সেই সমঝোতার ফসল হিসেবেই এই কমিটিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই গুঞ্জন ছিল যে হেফাজত চাইছে স’রকারের সাথে একটি সমঝোতা করতে। সেই সমঝোতার অংশ হিসেবেই নতুন কমিটি হল কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য যে, হেফাজতে সাথে সমঝোতার এই উদ্দ্যোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৩ সালের ৫ মে যখন হেফাজত বায়তুল মোকাররমসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে তা’ণ্ডব চা’লানো তখন স’রকার হেফাজতের বি’রুদ্ধে ক’ঠোর অবস্থানে গিয়েছিল। হেফাজতের একাধিক নেতাকে গ্রে’প্তার করা হয়েছিল। তাদের বি’রুদ্ধে একাধিক মা’মলাও দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স’রকার হেফাজতের সাথে এক ধরনের সমঝোতায় যায় এবং এই সমঝোতার প্রেক্ষিতে হেফাজতের বি’রুদ্ধে যে দায়ের করা মা’মলাগুলো সেই মা’মলাগুলো আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে স’রকারের প্রকাশ্য সমঝোতার লক্ষণ দেখা যায়।

এর প্রেক্ষিতেই আমাদের পাঠ্যপুস্তক সহ বিভিন্ন বি’ষয়ে হেফাজত নাক গ’লাতে শুরু করে। তবে হেফাজতের তৎকালীন আমীর আহম’দ শফীর মৃ’ত্যুর পর হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়। বিশেষ করে জুনায়েদ বাবুনগরী আমীর হওয়ার পর মামুনুল হক, আজিজুল হকের মত ধর্মান্ধ মৌলবা’দী এবং উ’গ্র আওয়ামী বি’রোধীরা হেফাজতের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং তারা নেতৃত্ব গ্রহণ করার পরপরই স’রকারকে চা’পে ফেলার কৌশল গ্রহণ করেন।

প্রথমে তারা ভাস্কর্য ইস্যুতে স’রকারের বি’রুদ্ধে কথা বলে। এরপর তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনেরও বি’রোধিতা করে। হেফাজতের এরকম আগ্রাসী অবস্থানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন এবং তার পরেরদিন ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামে তা’ণ্ডব সৃষ্টি হয়। এই তা’ণ্ডবের মূল হোতা ছিল হেফাজত। এরপরে মনে করা হয়েছিল যে স’রকার বোধহয় হেফাজতের সাথে আর কোনরকম সমঝোতা করবে না।

বরং হেফাজতের একের পর এক শীর্ষ নেতাদের গ্রে’ফতার এবং তাদের বি’রুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা জনমনে উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। স’রকার যে হেফাজতের ব্যাপারে দুর্বল নয়, স’রকারের যে হেফাজতকে নিয়ে কোনোরকম সহানুভূতি নেই সেটি স্পষ্ট হয়েছিল। বিশেষ করে স’রকারের পক্ষ থেকে যখন বলা হচ্ছিল যে, হেফাজতের কাউকে ধরা হচ্ছে না। দু’র্বৃত্ত এবং স’ন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্তদেরকে ধরা হচ্ছে। তখন বিভিন্ন মহল আশাবা’দী হয়েছিল এবার বোধহয় স’রকার নতুন করে সমঝোতা করবে না।

কিন্তু তারপরও আজকে যখন কমিটির হলো তখন অনেকে মনে করছেন যে, হেফাজত স’রকারের সাথে একটি সমঝোতার চেষ্টার অংশ হিসেবে বোধহয় এই কমিটি করছে। কিন্তু আদৌ স’রকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবেই এই কমিটি করা হয়েছে কিনা সেটি যেমন প্রশ্ন, তেমনি প্রশ্ন যে, স’রকার যখন আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে হেফাজতের বি’রুদ্ধে ক’ঠোর অবস্থানে গেছে এবং এই অবস্থান যখন জনমনে প্রশংসিত ঠিক সে সময় হেফাজতের সাথে কেন সমঝোতায় যাবে স’রকার এটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।