টিকটকের ভ’য়’ঙ্কর ফাঁ’দে ৭৭ দিন যৌ’ন নি”র্যা’তনের শি’কার ত’রুণী দিলেন আরও রো’মহ’র্ষক তথ্য

| আপডেট :  ২ জুন ২০২১, ১২:৪২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২ জুন ২০২১, ১২:১৯ অপরাহ্ণ

রাজধানীর মগবাজার এলাকার এক ত’রুণীকে টিকটক স্টার বানানোর কথা বলে ভারতে পা’চার করে দেওয়া হয়। ওই ত’রুণী সেখানে ৭৭ দিন ধরে শা’রীরিক ও যৌ’ন নি’র্যাতনের শি’কার হওয়ার পর কৌশলে দেশে পা’লিয়ে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে আরও অনেক বাংলাদেশি ত’রুণীকে দেখেছেন একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে। যারা বিভিন্ন সময়ে এ চ’ক্রের মাধ্যমে পা’চার হয়েছেন।

জানা গেছে, ভারতফেরত ওই ত’রুণী মঙ্গলবার রাতে হাতিরঝিল থানায় মানবপা’চার প্রতিরোধ আইনে একটি মা’মলা দা’য়ের করেছেন। মা’মলায় ১২ জনকে আ’সামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ জন বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। মা’মলার অ’ভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়ার কালিয়ানী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রে’ফতার করা হয়। তারা হলেন মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের। এরা ভারতে প্রায় এক হাজার নারীকে পা’চারে সীমান্ত পার হতে সরাসরি সহায়তা করেছেন।

ভারতফেরত ত’রুণীকে যেভাবে পা’চার করা হয় : ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় ভু’ক্তভোগী ওই ত’রুণীর। কখনও টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে, কখনও ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে ভি’কটিমকে নানাভাবে প্রলুদ্ধ করার চেষ্টা করেন হৃদয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০ থেকে ৮০ জনকে নিয়ে টিকটক হ্যাংআউট করেন হৃদয়। পরে একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০ থেকে ৮০০ জন তরুণ-তরুনীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই ত’রুণীকে চ’ক্রের অন্যান্যদের সহায়তায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পা’চার করে দেন হৃদয়।

জি’জ্ঞাসাবাদে ওই ত’রুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ভারতে পা’চারের পর তাকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। এ সময় ভারতে এ চ’ক্রের দ্বারা পা’চারকৃত আরো কয়েকজন বাংলাদেশি ভি’কটিমকে সেখানে দেখতে পান। তাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পা’চার করা হয়েছে।

৭৭ দিনের বীভৎস নি’র্যাতন নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর কয়েকদিন পরই ওই ভু’ক্তভোগী ত’রুণীকে চেনাইয়ের এক হোটেলে ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে অ’মানবিক শা’রীরিক ও বি”কৃত যৌ’ন নি’র্যাতন করা হয় তাকে। সেখানে সামান্যতম দয়া-করুনা দেখাননি চ’ক্রের সদস্যরা।

তিনি বলেন, কৌশলে নে’শা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জো’রপূর্বক বি’বস্ত্র ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেওয়ার হু’মকি দিয়ে জি’ম্মি করে রাখা হয়েছিল ওই ভু’ক্তভোগী ত’রুণীকে। পা’চারকারী চ’ক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা ওই ত’রুণীর করা মা’মলার এজহারে ও ত’দন্তে উঠে এসেছে রোমহর্ষক বর্ণনা, যা করুন কাহিনী কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নি’র্যাতিত ওই ত’রুণীর সহায়তায় ভারতে পা’চার তিনজন দেশে পা’লিয়ে আসতে সক্ষম হন। যাদের একজন ভারতে পা’চারের ৭৭ দিন পর দেশে ফিরেছেন, তিনিই হাতিরঝিল থানায় মা’মলাটি দা’য়ের করেন। বাকি দ ‘জন ভারতফেরত ভু’ক্তভোগীর নাম-ঠিকানা জেনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ।

মা’মলায় আ’সামি ১২ পা’চারকারী : মা’মলায় উল্লেখিত চ’ক্রে জ’ড়িত ১২ জনের মধ্যে পাঁচ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রে’ফতার করা হয়েছে। অন্যতম হোতা টিকটক হৃদয় ও গ্রে’ফতার তিনজন একই চ’ক্রের সদস্য। বাকি সাত জন ভারতীয় বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিসি শহিদুল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী দাবকপাড়ার কালিয়ানী এলাকা থেকে পা’চারে জড়িত দেশীয় ওই তিন আ’সামিকে গ্রে’ফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পা’চারের ব্যবহৃত দু’টি মোটরসাইকেল, একটি ডায়েরি, চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ভারতীয় সিম কার্ড উ’দ্ধার করা হয়েছে।

গ্রে’ফতার বাবুর এক হাজার নারী পা’চার, ডায়েরিতে পাচাকারীদের তথ্য : গ্রে’ফতার মেহেদী হাসান বাবু পা’চারের শি’কার মা’মলার বা’দী ত’রুণীসহ এক হাজারের বেশি নারী পা’চারে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। সাত থেকে আট বছর ধরে পা’চারে জ’ড়িত মেহেদি হাসান বাবুর মোবাইল ফোন ও ডায়েরিতে টিকটক হৃদয়, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। তার ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ভি’কটিমের আধার কার্ড নম্বর ও ভারতে পা’চারকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভি’কটিমের নাম ও মানবপা’চারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রে’ফতার মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় পা’চারের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মিত কক্ষে ভি’কটিম’দের অবস্থানে সহায়তার পাশাপাশি তাদের মোটরসাইকেল যোগে সী’মান্তের শেষ প্রান্তে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

নজরদারিতে টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপ : ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, টিকটকের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পা’চার কেন্দ্রিক অ’পচেষ্টা শুরু হয়েছে। উঠতি বয়সী কি’শোরী ও ত’রুণীদের মডেল বা স্টার বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁ’দে ফে’লে পা’চার করছে একটি চ’ক্র। এজন্য আমরা টিকটককে নেগেটিভলি দেখছি। টিকটক কেন্দ্রিক অ’পচেষ্টা বন্ধে আমরা জ’ড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি শহীদুল্লাহ বলেন, পা’চারের শি’কার ও পা’চারকারীরা অ’বৈধভাবে ভারতে যান। তাদের কাছে ভিসা-পাসপোর্ট বা কোনধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকে না। এরপর চ’ক্রের ভারতীয়দের সহায়তায় তারা দেশের আধার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। যে কার্ড ব্যবহার করে তারা ভারতে মুভমেন্ট করে থাকেন।

পা’চারকারী চ’ক্রে কতজন জ’ড়িত জানতে চাইলে ডিসি শহীদুল্লাহ আরো বলেন, ত’দন্তের এ পর্যায়ে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আরেকটু ত’দন্তের পর সংখ্যাটি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবো। প্রথমে নি’র্যাতিত ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় আমরা নিখিল নামে একজন ভারতীয়কে সে দেশের পুলিশ কর্তৃক গ্রে’ফতারের তথ্য পেয়েছি।সূত্র : বাংলানিউজ।