স্বা’স্থ্যম’ন্ত্রীর বোনের বি’রুদ্ধে গ্রে’ফতারি প’রোয়ানা

| আপডেট :  ১ জুন ২০২১, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১ জুন ২০২১, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

শত শত গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করায় সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান স্বা’স্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বোন অধ্যাপক রুবিনা হামিদসহ সাতজনের বি’রুদ্ধে কুষ্টিয়ার আ’দালতে একাধিক প্র’তারণা মা’মলা দা’য়ের করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত ৯ মা’মলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান (স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর বোন), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজনের বি’রুদ্ধে গ্রে’ফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মা’মলা সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৩০ কোটি টাকার বেশি পাওনা হয়েছে গ্রাহকদের। কুষ্টিয়া ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নড়াইলসহ আরও কয়েকটি জে’লায় কোম্পানির কর্মকর্তাদের বি’রুদ্ধে একাধিক মা’মলা দা’য়ের করা হয়েছে। সেসব মা’মলার কয়েকটিতে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছে।

ভু’ক্তভোগীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকে তাদের বীমা দাবি টাকা পরিশোধ না হওয়ায় তারা বা’ধ্য হয়ে মা’মলা দা’য়ের করেছেন। তবে মা’মলা দা’য়ের হলেও বীমা কোম্পানিটির মালিক স্বা’স্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাদের বি’রুদ্ধে প্রশাসন কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অ’ভিযোগ ভু’ক্তভোগীদের।

অ’ভিযোগ উঠেছে, বছরের পর বছর ধর্না দিয়েও গ্রাহকরা বীমার টাকা আদায় করতে পারছেন না। উল্টো গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হু’মকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে।
সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১০ বছর মেয়াদি জীবনবীমা পলিসি করেছেন এমন একজন হলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মনিরুজ্জামান ডাবলু। মেয়াদপূর্তির পর এক টাকাও পাননি তিনি। আ’দালত ও বীমা কোম্পানিতে ঘুরতে ঘুরতে চার বছর পার হয়েছে।

তার মতো আরেক ভু’ক্তভোগী দৌলতপুর উপজে’লারই মুক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে ১০ বছর মেয়াদি জীবনবীমা পলিসি করেছিলাম। মেয়াদপূর্তির পর তারা টাকা দিচ্ছে না। কথা ছিল মেয়াদপূর্তি হলে একবারে ডাবল (দ্বিগুণ) টাকা দেবে। কিন্তু এখনো কোনো টাকা দেয়নি, উল্টো হ’য়রানি করছে। তাদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে যখন কোনো কাজ হলো না তখন বা’ধ্য হয়ে আ’দালতের শরণাপন্ন হয়েছি।’

অপর এক ভু’ক্তভোগী নাম প্রকাশ না করে শর্তে বলেন, ‘পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রায় সাত বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো এক টাকাও পাইনি। ডাবল টাকা তো দূরের কথা, আসল টাকাই ফিরে পাচ্ছি না।’

‘বাংলাদেশের অনেক বীমা কোম্পানি ভুয়া। ভেবেছিলাম স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর পরিবারের সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স হয়তো নিরাপদ হবে। কারণ, তিনি স’রকারের মন্ত্রী। এজন্য কোম্পানির অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বীমা করেছিলাম। কোম্পানির কর্মীরাও আমাদের বুঝিয়েছিল যে, স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর এখানে কোনো স’মস্যা হবে না। পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হলেই পাওয়া যাবে ডাবল টাকা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলে এখন টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। অনেক সময় হু’মকির সম্মুখীনও হতে হচ্ছে’—যোগ করেন ওই ভু’ক্তভোগী।

এ নিয়ে কুষ্টিয়া জু’ডিশিয়াল ম্যা’জিস্ট্রেট (দৌলতপুর) আ’দালতে দৌলতপুর উপজে’লার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের হাকিম জোয়ার্দ্দারের ছেলে বশির আহমেদ, একই ইউনিয়নের মো. শামসুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান ও মনিরুজ্জামান ডাবলু বা’দী হয়ে বিভিন্ন সময় পৃথক তিনটি মা’মলা দা’য়ের করেন।

এসব মা’মলার আ’সামিরা হচ্ছেন-সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুবিনা হামিদ (স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর বোন), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম রেজা, অডিট অফিসার মো. সাইদুর রহমান খান ও কোম্পানি স’চিব মো. রবিউল ইসলাম। এছাড়া মা’মলায় আরও দুজনকে আ’সামি করা হয়েছে যাদের নাম জানা যায়নি।

ওয়ারেন্টভুক্ত আ’সামিদের অফিস রাজধানীর বনানীতে। কুষ্টিয়া থেকে বনানী থানায় ওয়ারেন্ট গেলেও একটিরও তামিল হয়নি বলে অ’ভিযোগ করেন বা’দীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন খন্দকার।

এ বি’ষয়ে বা’দীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন খন্দকার বলেন, ‘গ্রাহক প্র’তারণায় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও স্বা’স্থ্যমন্ত্রীর বোন অধ্যাপক রুবিনা হামিদসহ সাতজনের বি’রুদ্ধে কুষ্টিয়ার আ’দালত গ্রে’ফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ-সংক্রান্ত মোট ১১টি মা’মলা আছে। মোট গ্রাহক ৪৯৭ জন। মোট অর্থের পরিমাণ ৯০ লাখ ৬২ হাজার ৯২৬ টাকা। নয়টি মা’মলায় তাদের বি’রুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। দুটি মা’মলা লকডাউনের জন্য স্থগিত আছে। এরমধ্যে ছয়টি মা’মলার ওয়ারেন্ট সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।’

অ’ভিযোগ প্রসঙ্গে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্ম’দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মা’মলার বি’ষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ক’রোনার কারণে কিছু ল্যাকিং (ঘাটতি) তৈরি হয়েছিল। আশা করি আগামী (জুন) মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এসব স’মস্যার সমাধান করে ফেলব।’

তিনি দাবি করেন, ‘কোম্পানির আগের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে বেশকিছু বীমা দাবি আ’টকে ছিল। আমরা ইতোমধ্যে ৩-৪টি মা’মলার দাবিগুলো পরিশোধ করেছি। লকডাউনের কারণে কিছু মা’মলার দাবি পরিশোধ করতে পারিনি। শুনেছি, আমাদের বি’রুদ্ধে গ্রে’ফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা দ্রুত এ বীমা দাবিগুলো পরিশোধ করব।’

এদিকে, শত শত গ্রাহকের দাবি করা অর্থ পরিশোধ না করায় চ’রম অস্বস্তিতে রয়েছেন বিমা কোম্পানিটির মাঠকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানিটির কয়েকজন কর্মী বলেন, এ এলাকায় শত শত গ্রাহক বছরের পর বছর টাকা পাচ্ছেন না। গ্রাহকরা দলবেঁ’ধে কখনো অফিস ঘেরাও করছেন, কখনো আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। কখনোবা টাকা আদায়ে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী বা প্রভাবশালীদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। অবস্থা এমন, পাওনাদার গ্রাহকদের সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন ব্রাঞ্চ ই’নচার্জ ও সার্ভিস সেল ই’নচার্জরা। প্রতিদিনই অফিসে ভিড় করছেন শত শত গ্রাহক।

‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বললে তারা বলেন, সামলান। নতুন প্রিমিয়াম নেন, গ্রাহকদের টাকা দেন। প্রধান কার্যালয়ে গ্রাহকদের তালিকা নিয়ে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হয় না। আমরা তো মালিকদের কাছে যেতে পারি না। কী করব, আমরা এর কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না’—যোগ করেন তারা।