তিন বোকার শিক্ষনীয় গল্প, সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল

| আপডেট :  ২৯ মে ২০২১, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ মে ২০২১, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

এক গ্রামে ছিল তিন বোকা। তারা বোকা বলে বোকা, একেবারে বোকার হদ্দ। তাদের বাড়ির লোকজন একদিন তিন জনকেই এক সাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল। বেচরা বোকা তিনজন গ্রামের বাইরে এসে একটা বড় ছাতিম তগাছের ছায়ায় এসে বসল।

তারপর তিন জন মিলে ঠিক করল তারা দূ’র দেশে চলে যাবে সেই মত তিন বোকা নদী-নালা-মাঠ পেরিয়ে নতুন এক গ্রামে গিয়ে হাজির হল। নতুন গ্রামে এসে তারা একটি বেশ বড় সড় বাড়ি দে’খতে পেল।
তিন বোকা খোঁ’জ নিয়ে জানতে পারল সেটা এক মাষ্টার মশাইয়ের বাড়ি। মাষ্টারমশাই ঠিক তখনই স্কুল যাবার জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিন বোকা তাঁর পায়ে প’ড়ে পা চে’পে ধ’রল।

মাষ্টারমশাই বললেন, ওরে ছাড় ছাড়, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বোকা তিনজন তবু পা ছাড়ে না। বলল, মাষ্টারমশাই আম’রা ভিন-গাঁ থেকে এসেছি। আমাদের আপনি একটা ব্যব’স্থা করে দিন।
মাষ্টারমশাই বললেন, আচ্ছা আচ্ছা। সব ব্যব’স্থা ফি’রে এসে হবে। বাড়িতে মা রয়েছে। তোরা তার কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেয়ে নিবি।তারপর বাড়িএ কিছু কাজক’র্ম সেরে রাখবি।

আমি ফি’রে এসে তোদের ব্যব’স্থা করব। এই বলে তিনি স্কুলের প্পথে হন্ হন্ করে হাঁটতে লাগলেন। বোকা তিনজন বুড়িমায়ের কাছে পান্তা ভাত মুড়ি কাঁচা লঙ্কা মেখে পে’ট ভরে খেয়ে নিল।
তারপর বলল, বলুন বুড়িমা কি কাজ ক’রতে হবে? বূড়িমা বলল, যা তোরা নদীতে স্নান সেরে ঘানি থেকে তিন হাঁড়ি সরষের তেল নিয়ে আয়। বোকারা সেই মত নদীতে স্নান সেরে তেল আনতে চলল।

মাটির ছোট ছোট হাঁড়িতে তেল নিয়ে তারা বাড়ির পথে ফিরছে এমন সময় পথে দেখল একটা প্রকান্ড বট গাছ।সেই বট গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে তারা তেলের হাঁড়িগুলো মাটিতে রাখল।
তারপর জিরিয়ে টিরিয়ে যেই হাঁড়িগুলোর দিকে তাকিয়েছে অমনি দেখে তিনটি হাঁড়িতেই চো’র ঢুকে বসে আছে। আ’সলে হাঁড়ির মধ্যে ছিল তেল আর ঐ তেলেই তারা নিজেদের ছায়া দে’খতে পেয়েছে।

নিজেদের ছায়াগুলোকে চো’র ভেবে তারা দুম দাম করে লাঠি দিয়ে পিটাতে লাগল। লাঠির ঘায়ে মাটির হাঁড়িতো ভাঙ্গলই সাথে সাথে তেলটাও গড়িয়ে পড়ল। অবশেষে তিন বোকা খালি হাতে বাড়ি ফি’রে এল।
মাষ্টারমশাই সন্ধ্যে বেলায় বাড়িতে ফি’রে সব কথা শুনে বলল, কাল তোরা তিনজন বনে গিয়ে তিন বোঝা শুকনো কাঠ নিয়ে আসবি, এটা পারবি তো ? বোকারা অনেকখানি ঘাড় কাত করে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল।

পরদিন মাষ্টারমশাই স্কুলে চলে গেলে বোকা তিনজনও বনের পথ ধ’রল। তারপর তিনজন তিনটি বেশ বড়সড় কাঠের বোঝা মাথায় চা’পিয়ে বুড়িমা’র কাছে ফি’রে এল।
বুড়িমা তখন খোলা পাতে মুড়ি ভাজছিল। গরমে তার মেজাজ ছিল সপ্তমে। আর ঠিক তখনই বোকা তিনজন চিৎকার জুড়ে দিল, কাঠ এনেছি, রাখবো কোথায় ?

তিন বোকা একই কাথা বলায় বুড়িমা রেগে-মেগে বলল, কাঠ রাখার জায়গা পাচ্ছিস না ? আমা’র মাথায় রাখ। এই কথা শেষ হতেই বোকা তিনজন তিন বোঝা কাঠ বুড়িমা’র মাথায় ফে’লে দিল আর তাতেই বুড়ি মা’রা গেল।
মাষ্টারমশাই ঘরে ফি’রে দেখল অনর্থ হয়ে গেছে। কেন যে তিনি বোকাদের আশ্রয় দিলেন ? তারপর কান্না-কাটি থামিয়ে বোকাদের নি’র্দেশ দিলেন, যা তোরা মা-কে নিয়ে গিয়ে নদীতে সৎকার করে ফেল। এতে যদি তোদের কিছুটা পাপ কমে।

বোকারা তখন একটা তালপাতার চাটায়ের মধ্যে বুড়িমা’র দে’হটা গুটিয়ে নদীতে নিয়ে চলল। যেতে যেতে কোনসময় বুড়ির দে’হটা চাটাই থেকে বাইরে প’ড়ে গেছে তারা খেয়ালই করে নি।
নদীতে পৌঁছে দেখল বুড়িমা নেই। কোথায় গেল ? বোকা তিন জন তখন ভাবল, বুড়িমা নিশ্চয়ই জ্যান্ত হয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ছে। তাই তারা বুড়িকে ধ’রে নিয়ে আসতে আবার গ্রামের পথে পা বাড়াল।

যেতে যেতে তারা অন্য একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছল। সেই গ্রামে একটি বুড়ি ঝাট দিয়ে উঠোন প’রিষ্কার করছিল। বোকা তিনজন তাকে দে’খতে পেয়ে হৈ হৈ করে এল।
তারপর তাকে জো’র করে ধ’রে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দিল। সন্ধ্যায় বোকারা মাষ্টার মশাইয়ের কাছে এসে বলল, আজ আমাদের খুব পরিশ্রম গেছে।

বুড়িমা তালপাতার চাটাই থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আম’রা তাকে জো’র করে ধ’রে নিয়ে এসে সৎকার করে দিয়েছি। মাষ্টারমশাই বোকাদের কথা শুনে তো একেবারে হাঁ হয়ে গে’লেন। অনেক হয়েছে।
এরা শুধু বোকা নয়, একেবারে বোকার হদ্দ। এদের কিছুইতেই ঘরে রাখা যাবে না। রাখলেই পদে পদে বি’পদ। এই ভেবে তিনি তাদের তাড়িয়ে দিলেন। তিন বোকা আবার ভিন-গাঁয়ের পথে হাঁটতে লাগল।