পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ছেলে সোলাইমান হলেন উপজেলার প্রথম বিসিএস ক্যাডার!

| আপডেট :  ২৮ মে ২০২১, ০৩:৩২ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৮ মে ২০২১, ০৩:৩২ অপরাহ্ণ

৮ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় মোহাম্মদ সোলাইমান সিকদার । আর্থিক অস্বচ্ছলতা, লজিং থেকে টিউশনি করা অভাবী সেই ছেলেটিই শত-প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখন BCS ক্যাডার। যা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রথম।

এর আগে ৩৬তম BCS নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ পেয়ে’ছিলেন শিক্ষক হিসেবে। মোহাম্মদ সোলাইমান সিকদার বর্তমানে কর্ম;রত আছেন আদর্শগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। সদ্য প্রকাশিত ৩৮তম BCS(শিক্ষা) ক্যাডারে সুপারিশ*প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপ;জেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দূর্গম আলীক্ষ্যং গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরি’বারের সন্তান সোলাইমান। তার পিতার নাম আলতাফ হোসেন। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় চতুর্থ শ্রেণীর কর্ম’চারী (পরিচ্ছন্ন কর্মী) হিসেবে কর্মরত। সোলাইমান এর সংগ্রামী জীবনের গল্প এখন নাইক্ষ্যংছড়ি তথা বাইশারী ইউনিয়নের মানুষের মুখে মুখে।

এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে অকপটেই সোলাইমান জানিয়েছে তার জীবনে নানা চড়াই উৎরাই এর কথা। তার পিতা ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের চতুর্র্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং মা গৃহিণী। প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুতের আলো না থাকায় হারি’কেনের আলোয় ভাঙ্গা ঘরে করেছেন পড়াশোনা। নিজ গ্রামে

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর পার্শ্ব’বর্তী রামু উপ;জেলার ঈদগড় AMB উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। বাইশারীর আলীক্ষ্যং থেকে ঈদগড় এএমবি উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৬ কি:মি। যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত থাকায় রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় করে প্রতিদিন ১২কি:মি কাঁদা;মাটির দূর্গম পথ ভেঙ্গে যেতে হতো হাই স্কুলে। শৈশব-কিশোর এভাবে কাটিয়ে সবকিছুকে জয় করে

এবং জীবনের সকল বাঁধা অতি’ক্রম করে তিনি এখন সফল মানুষ। ছোট বেলা থেকে নরম, ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের ছিলেন সোলাইমান। তার ভদ্র’তার জন্য এলাকা ও শিক্ষক মহলের পাশা*পাশি বর্তমান কর্মস্থলেও বেশ প্রশংসিত। জীবনের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছা’নোর বিষয়ে তিনি বলেন- “আর্থিক অ-স্বচ্ছলতার কারণে ৮ম শ্রেণি থেকে HSC পাস পর্যন্ত ঈদগাহ, কক্সবাজারে লজিং থেকে লেখাপড়া করেছেন। বাবার ছোট চাক’রির সামান্য বেতনেই

তার পরিবার চলতো। এই আর্থিক অ-সচ্ছলতার মাঝেও বাবা সাধ্য’মতো সহযোগিতা করেছেন। ৩৮তম বিসিএস-এর মাধ্যমে সুপারিশ*প্রাপ্ত হওয়া সোলাইমান ২০০৫ সালে ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন থেকে SSC এবং ২০০৭ সালে ঈদগাহ ফরিদ আহমেদ কলেজ থেকে HSC পাশ করেন।

পরে চট্টগ্রাম বিশ্ব;বিদ্যালয় এর “ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি” বিভাগ থেকে যথাক্রমে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যা;লয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিজেকে মেলে ধরেছেন। স্বপ্নজয় বিষয়ে তিনি বলেন, “আসলে ছোট বেলা থেকে এ-পর্যন্ত

আসতে নানা দুর্গম পথ অতি’ক্রম করে এসেছি। অসচ্ছল পরিবারের ছেলে হয়েও কখনো ভেঙে পরিনি। জীবনের স্বপ্ন থাকলেও, ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের প্রতি অ-মনোযোগী ছিলেন তিনি। বর্তমানের স্বপ্ন পূরণের সাফল্যের পেছন

পরিবার থেকেই অনু’প্রেরণা পেয়েছেন। তার প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস বাবা-মা এবং ‘বাবার সংগ্রামী জীবন’। ছাত্র অবস্থায় লেখালেখি শুরু করে’ছিলেন সোলাইমান। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বহুল পঠিত শাহ মোঃ আবদুল হাই এর ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সংগঠন ও পররাষ্ট্রনীতি’ গ্রন্থের সহ-লেখক হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট ও ভূ-রাজনীতি, ফিলিস্তিন

সংকট, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা, ইরাক ও কুর্দিস্তান সংকট ও কোরিয়া উপদ্বীপ সংকটঃ দুই কোরিয়া পুনঃএকত্রী-করণের ভবিষ্যৎ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি, বৈশ্বিক পরিবেশ ও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার। এই জন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে গবেষণা এবং শিক্ষকতার মহান ব্রত নিয়ে দেশ-মাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চান তিনি। একজন গ্রামের ছাত্রের সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে

নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো: শাহ আলম বলেন- “নাগরিক সুবিধা বিহীন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে একজন ছাত্র উঠে আসানিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে সোলাইমান। তিনি জানান- “সফলতার জন্য প্রতিভার পাশাপাশি প্রয়ো’জন ধৈর্য, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম। একজন ছাত্র প্রতিযোগিতা-মূলক শহরে না থেকেও

গ্রামের ন্যাচারাল মেধা নিয়ে সফলতা বয়ে আনতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ এটি। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রথম বিসিএস ক্যাডার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর অনুভূতির অংশি;দারের একজন বলে মনে করেন তিনি। এদিকে মোহাম্মদ সোলাইমান সিকদারের বেড়ে উঠা এলাকা বাইশারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও আলীক্ষ্যংমৌজা প্রধান মংথোয়াই হ্লা মারমা বলেন, সোলাইমান তার

পিতার স্বপ্ন পুরণ করেছেন। আমাদের বিশ্বাস ওর বনাঢ্য কর্মজীবনে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সহযোগিতায় অবদান রাখবেন। এই সফলতায় বাইশারী তথা পুরো নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষের মুখ উজ্জল হয়েছে বলে জানান তারা।