হুঁশিয়ার ইসরায়েল

| আপডেট :  ২৩ মে ২০২১, ০৫:০০ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৩ মে ২০২১, ০৪:৫৪ অপরাহ্ণ

এটা শেষ হয়নি, কারণ এটা কখনো শেষ হয়নি। শুধু একটা বিরতি, এতটুকুই আশা। মাত্র ১১ দিনে ২৫০ জন নি’হত হলো। আর এখন দুই পক্ষই বিজয় দাবি করছে। হামাসের জন্য গল্পটা সরল। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে আ’টকে থেকে, শ’ত্রুর চেয়ে বহুগুণ কম সামর্থ্য নিয়ে তারা শ’ত্রুকে চমকে দিতে পেরেছে, আ’ঘাত করেছে এর বেসা’মরিক হৃৎপিণ্ডে। তাদের ছোড়া মি’সাইলগুলো আগের চেয়ে উন্নত।

এদের কিছু ই’সরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে শুধু ই’সরায়েলের সীমান্তবর্তী শহরে নয়, খোদ তেল আবিবের বুকেও এসে পড়েছে। হামাস এখন বলতে পারবে, পশ্চিম তীরের ফাতাহ নয়, তারাই জেরুজালেমের মু’সলিম তীর্থের অভিভাবক। সন্তুষ্টির সঙ্গে তারা দেখেছে, তারা ই’সরায়েলের সামাজিক বুননের মধ্যে একটা গর্ত খুঁড়তে পেরেছে। আরব-ইহুদি নাগরিকেরা যে রাস্তায় একসঙ্গে হাঁটত, সেখানে এখন তারা পরস্পরকে আ’ক্রমণ করছে।

ই’সরায়েলি জেনারেলরা আর কী বলবেন। তাঁরা বলছেন হামাসের সা’মরিক সামর্থ্য খর্ব করার কথা। বলছেন, তাঁদের হাতে নি’হতদের বেশির ভাগেই হামাস যো’দ্ধা। গত ১১ দিনে ২০৯, ২০১২, ও ২০১৪ সালের যোগফলের চেয়ে নাকি তাঁরা এবার বেশি কিছু অর্জন করেছেন। কিন্তু তাঁরা কাউকে বোকা বানাতে পারছেন না। ই’সরায়েল জানে, তারা একটা কৌশলগত বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এটাই ছিল তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ ও উদ্দেশ্যবিহীন সীমান্ত যু’দ্ধ। তারা হামাসের আ’ক্রমণের মুখে নিজেদের নাজুকতা মাপতে ভু’ল করেছে। এবং ভু’লে গেছে যে উত্তর দিকে হিজবুল্লাহও বি’ষয়টা খেয়াল করছে আর তাদের কাছে রয়েছে হামাসের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী গোলাবারুদ, তাদের পাশে রয়েছে ইরান।

ই’সরায়েল বলেছিল, গাজা ফ্রন্টে সব শান্ত। তারা এ-ও ভেবেছিল যে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে তারা নিশ্চল করে দিতে পেরেছে। ভেবেছিল, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ট্রা’ম্পের ‘আব্রাহাম চুক্তি’ ফিলিস্তিনিদের অপ্রাসঙ্গিক করে দেবে। এখন নিজেদের ভ্রান্তি তারা টের পাচ্ছে। ই’সরায়েল কৌশলগতভাবে বি’পদে পড়েছে। বিশ্ব হয়তো পরের কোনো বড় ইস্যুতে মন দেবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের অজস্র পর্যবেক্ষকের কাছে এটা ছিল এক মোড় ঘোরানো ঘটনা। তারা একে দুটি দেশের যু’দ্ধ বলে শুধু মনে করছে না, মনে করছে সরাসরি বর্ণবা’দী অবিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে। লন্ডনের বি’ক্ষো’ভের প্ল্যাকার্ডের লেখা দেখু’ন: ফিলিস্তিন দম নিতে পারছে না এবং ফিলিস্তিনি জীবনের মূল্য আছে।

ফ্রি প্যালেস্টাইন হ্যাশট্যাগ যোগ দিয়েছে মি টু ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার হ্যাশট্যাগের সঙ্গে। বৈশ্বিক প্রজন্ম ফিলিস্তিন প্রশ্নকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। শুধু রাজনীতিবিদেরাই নন, কোটি কোটি ফলোয়ারসমৃদ্ধ তারকা ফুটবল খেলোয়াড় থেকে জনপ্রিয় শিল্পী এবং ফ্যাশন-আইকনরা প্র’তিবাদ করেছেন। ইহুদি ও আরবদের সা’ম্প্রদায়িক সং’ঘাত তাদের আরও বীতস্পৃহ করেছে ই’সরায়েলের প্রতি। তারা দেখেছে পুলিশি ব’র্বরতা এবং বিচারব্যবস্থার পক্ষপাত। যারা উইঘুরের দিকে তাকায়নি, তাকায়নি উদ্বাস্তু রো’হিঙ্গাদের দিকে, কিংবা আসাদ স’রকারের গণহ’’ত্যা ও ইথিওপিয়ার সং’ঘাত যাদের মনোযোগ কাড়েনি, তারাও ফে’টে পড়েছে গাজায় হা’মলা দেখে। এপির এক সাংবাদিক যিনি আগে জেরুজালেমে নিযুক্ত ছিলেন, তিনি লিখেছেন, ‘ই’সরায়েল/ফিলিস্তিন এখন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর’। এর মানে সেখানে যে অন্যায় করা হচ্ছে, কোটি কোটি মানুষের চোখে সেটা অন্য সবকিছুর চেয়ে গু’রুতর।

কেন গাজা এত দৃষ্টি কাড়ল, তা নিয়ে আপনারা অনেক গবেষণা করতে পারেন। কিন্তু কেন গাজা এত নজর কাড়ল? এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মৃ’ত্যু ঘটেছে আরাকানে, ইয়েমেনে, সিরিয়ায় বা অন্য জায়গায়। এটাও মূল ঘটনা নয় যে ই’সরায়েল পশ্চিমের আদরের মিত্র; সেটা তো সৌদি আরবও। সম্ভবত ঘটনা এই যে ফিলিস্তিনিরা ৫৪ বছর যাবৎ (কারও কারও কাছে ৭০ বছর) ই’সরায়েলি দ’খলদারি মো’কাবিলা করে আসছে। এর পরিণতি হলো, প্রতিটি সহিসংতার সময় ইহুদি সম্প্রদায় বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়বে। ব্রিটেনে ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা আগের চেয়ে ছয় গুণ বেশি বেড়েছে এবার।

ই’সরায়েলে, এর নেতারা ভু’লের অ’ভিযোগ তুলবেন। কিন্তু ব্যাপারটা সেই পুরোনো প্রবাদের মতো, নাবিক হয়ে সমুদ্রকে দোষারোপ করা। বরং তাদের উচিত নতুন বাস্তবতার দিকে তাকানো। তাদের উচিত তাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। ই’সরায়েলের পুরোনো বন্ধু আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ ই’সরায়েলকে বর্ণবা’দী রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন। দীর্ঘদিনের ই’সরায়েলপন্থী ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্যরা ই’সরায়েলে অ’স্ত্র চালানে বিলম্ব ঘটিয়ে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান বদলালেও বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ ই’সরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছে। তাহলেও ই’সরায়েলের হুঁ’শিয়ারি সংকেত পাঠ করা উচিত। আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম, ই’সরায়েল যদি সঠিক কাজ না করে, দ’খলদারির অবসান না ঘটায়, তাহলে অচিরেই একে দু’র্বৃত্ত রাষ্ট্র বলে মার্কা মে’রে দেওয়া হতে পারে। গত দুই সপ্তাহে আর কিছু না হোক, সেই আ’শঙ্কা আরও নিকটতর হয়েছে।

দি গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ।

● জোনাথন ফ্রিডল্যান্ড ব্রিটেনের দি গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক