ভারতীয় না’রীর সঙ্গে প’রকীয়া, বেরিয়ে এলো আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য

| আপডেট :  ১৩ মে ২০২১, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ১৩ মে ২০২১, ০৬:২০ পূর্বাহ্ণ

৫ বছর পর আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হ’’ত্যাকাণ্ড নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। স্ত্রী হ’’ত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। হ’’ত্যার ঘটনা ত’দন্ত করে পিবিআই বলছে, তিন লাখ টাকায় খু’নি ভাড়া করে বাবুল আক্তার এই হ’’ত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন। মূলত ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে প’রকীয়াকে কেন্দ্র করেই বাবুল ও মিতুর মধ্যে দাম্পত্য ক’লহ তৈরি হয়।

একই অ’ভিযোগ করেছেন তার শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। বুধবার (১২ মে) তিনি নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মা’মলা দা’য়ের করেন। মা’মলায় মোশাররফ হোসেন অ’ভিযোগ করেছেন, গায়েত্রী নামে জনৈক ভারতীয় এনজিও কর্মকর্তার সঙ্গে অ’নৈতিক সম্পর্কের জেরে দাম্পত্য ক’লহ থেকে বাবুল নিজেই তার স্ত্রীকে খু’নের পরিকল্পনা করেন ও নির্দেশ দেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খু’ন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। খু’নিরা গু’লি করার পাশাপাশি ছু’রিকাঘাতে তাকে হ’’ত্যা করে। ঘটনার সময় বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন। হ’’ত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার নিজে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অ’জ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আ’সামি করে মা’মলা করেন।

ওই মা’মলা ত’দন্ত করতে গিয়ে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। এ ঘটনায় বুধবার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আ’দালতে জমা দেয় পিবিআই। প্রতিবেদনে পিবিআই বলছে, মিতু হ’’ত্যা ছিল কন্ট্রাক্ট কিলিং। বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটি সংঘটিত হয়। মিতুকে হ’’ত্যার জন্য তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে তার জানান।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ মে) সাক্ষ্য আইনে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যা’জিস্ট্রেট শফীউদ্দিনের আ’দালতে জ’বানব’ন্দি দেন দুই ব্যক্তি। জ’বানব’ন্দিতে বাবুল আক্তারের পূর্বপরিচিত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক জানিয়েছেন, মিতু হ’’ত্যার ৩ দিন পর তিনি বাবুল আক্তারের নির্দেশে গাজী আল মামুনের মাধ্যমে মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসাকে তিন লাখ টাকা দেন। গাজী আল মামুন সেই মুসার আত্মীয়। মামুনও জ’বানব’ন্দি দিয়ে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

বিকাশের মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন হয়েছে বলে দাবি করেছেন পিবিআই এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআই চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ত’দন্তে নিশ্চিত হওয়ার পরই তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ আনা হয়েছে। বিকাশে তিন লাখ টাকা লেনদেনের স্লিপ আমাদের হাতে আছে। এর বাইরে যাদের মাধ্যমে টাকাগুলো লেনদেন করা হয় তারাও স্বীকার করে আ’দালতে জ’বানব’ন্দি দিয়েছেন।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুম’দারও এক সংবাদ সম্মেলনে ত’দন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ার বি’ষয়টি জানিয়েছেন। বুধবার সকালে ঢাকায় আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাবুল আক্তার শুরু থেকে ত’দন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। হ’’ত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে জ’ঙ্গিবি’রোধী কার্যক্রমে আ’হত হওয়ার কথা বলেছিলেন বাবুল। সে কারণে তিনি যখন স্ত্রী হ’’ত্যায় জ’ঙ্গিদের জ’ড়িত থাকার স’ন্দেহের কথা বলেছিলেন, তখন পুলিশ সেটা বিশ্বাস করেছে। আবার স্ত্রী নি’হতের পর উনি আপনজন হা’রানোর মতোই আচরণ করেছেন। তার কথা তখন সবাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু ত’দন্ত করতে গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তার পরিকল্পনায় এই হ’’ত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নিজের সোর্স মুসাকে দিয়েই সে এই হ’’ত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

হ’’ত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গায়েত্রী নামে এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে প’রকীয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। গায়েত্রী ভারতীয় নারী, ২০১৩ সালে তিনি কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এ কাজ করতেন। ঘটনার ৫ বছর পর বুধবার মোশাররফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মা’মলাটি দা’য়ের করেন। মা’মলায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আ’সামি করে আট জনকে আ’সামি করা হয়েছে। বাবুল আক্তার ছাড়া অন্য সাত জন আ’সামি ঘটনার সময় দা’য়ের করা মা’মলায়ও অ’ভিযুক্ত হয়েছিলেন।

মা’মলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বাবুল আক্তার কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় গায়েত্রী ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার (প্রটেকশন) হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গায়েত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে গায়েত্রীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবুল আক্তার। বাবুল আক্তারের মোবাইলে গায়েত্রী মেসেজ পাঠিয়েছিল। মোবাইলটি বাসায় রেখে যাওয়ায় ওই মেসেজগুলো মিতু দেখতে পায়। তখন তাদের মধ্যে দাম্পত্য ক’লহ চ’রমে ওঠে। ওই ঘটনার জের ধরেই বাবুল তাকে পরিকল্পিতভাবে হ’’ত্যা করে।

এজাহারে আরও বলা হয়, হ’’ত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে বাবুল চীনে এক প্রশিক্ষণে গেলে মিতু দুটি বই পান, সেগুলো ওই গায়েত্রী বাবুলকে দিয়েছিল। ওই বই দুটির দুটি পাতায় ওই নারী ও বাবুলের লেখায় তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে। ‘তালিবান’ নামে একটি বইয়ের শেষ পাতায় বাবুল আক্তার নিজে গায়েত্রীর সঙ্গে তার পরিচয়, সমুদ্র সৈকতে হাঁটাসহ কা’টানো কিছু মুহূর্তের কথা লিখে রাখেন। একই বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়েত্রীও বাবুলকে উদ্দেশ করে একটা মেসেজ লিখেন।