মুনিয়ার নি”ম্নাঙ্গ ছিল র’ক্তা”ক্ত, গ”লায় ছিল ক্ষ”তচি”হ্ন

| আপডেট :  ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:০২ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে উ’দ্ধার কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার গ’লায় ক্ষ’তচিহ্ন, নিম্নাঙ্গ র’ক্তাক্ত ছিল বলে সু’রতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা গুলশানের ওই ভবনের ক্লোস সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে। অপরদিকে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান বলছেন, মুঠোফোনের মাধ্যমে তাকে নানা ধরনের হু’মকি দেওয়া হচ্ছে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় কলেজছাত্রী মুনিয়ার লা’শ উ’দ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বা’দী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বি’রুদ্ধে আত্মহ’’ত্যায় প্ররোচনার অ’ভিযোগ এনে একটি মা’মলা দা’য়ের করেন। মা’মলার অ’ভিযোগে বলা হয়েছে, সায়েম সোবহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। ১ লাখ টাকা ভাড়ার ওই ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত করতেন করতেন সায়েম সোবহান। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতেন। মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া অ’ভিযোগ করেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন আনভীর। একটি ছবি ফেসবুকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান তার বোনের ও’পর ক্ষি’প্ত হয়। মুনিয়াকে হ’’ত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে অ’ভিযোগ করেন তিনি।

মুনিয়ার নি’হতের ঘটনাটি হ’’ত্যা নাকি আত্মহ’’ত্যা, সে বি’ষয়ে এখনও পরিস্কার কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। ময়নাতদ্ন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এ বি’ষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ম’রদেহের সুরতাহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ’লার বাম পাশে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির গভীর কালো দাগ আছে। যৌ’নাঙ্গ দিয়ে র’ক্ত বের হওয়ার আলামত মিলেছে বলেও উল্লেখ আছে। এদিকে গত মঙ্গলবার রাত থেকে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাতকে মুঠোফোনে কল দিয়ে হু’মকি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অ’ভিযোগ করেছেন। নুসরাত বলেন, ‘অগনিতবার ফোন করে আমাকে খা’রাপ খা’রাপ কথা বলছে। নম্বরগুলো নোট করে রেখেছি আমি। ফোন অফ করে দিয়েছি আমি।’

অপরদিকে মুনিয়ার মৃ’ত্যুর বি’ষয়টি নিয়ে স্ব’রা’ষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমি একটি ব্যাপারে পরিস্কার, আইন তার নিজের অনুযায়ী চলবে। যে-ই অ’পরাধী হবে, তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এটা ত’দন্তনাধীন রয়েছে, ত’দন্তের পরই আমরা বলতে পারব।’ এর আগে গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়া নুসরাতের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেখানে তিনি তার বোনের প্রেম-সম্পর্ক-ম’রদেহ উ’দ্ধারের বি’ষয়গুলো ছাড়াও মুনিয়ার সঙ্গে তার শেষ কথোপকথনের বি’ষয়গুলোও তুলে ধরেন।

অভিনেতা বাপ্পির সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন:
ছোট বোন মুনিয়ার সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা বাপ্পি রাজের প্রেমের যে সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে নুসরাত বলেন, ‘এগুলো কেউ রটাচ্ছে, মি’থ্যা কোনো কথা। পরিচয় মানুষের থাকতেই পারে, আপনার সাথে আমার থাকতে পারে, আরেকজনের সাথে থাকতে পারে। এর মানে হচ্ছে এটা না। আমার কথা হচ্ছে আমার বোন চলে গেছে এখন ওর চরিত্র নিয়ে অনেক কিছু আসবে আমি এটা জানি। আমার বোন মা’রা গেছে, আমার স’ন্তান মা’রা গেছে। এখানে তার চরিত্র কি ছিল, তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রমাণ করুক কেউ, ওর চরিত্র খা’রাপ ছিল। ও ম’রে গেছে। এ রমজান মাসে ওরে মাইরা ফেলছে, না হয় ম’রে গেছে, না হয় বা’ধ্য করছে। যেটাই করুক ওইটারই বিচার চাই। যেই করেছে আমি চাই বিচার হোক। আমি আপনাদের মাধ্যমে স’রকারকে বলতে চাই।’

মুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি নুসরাত:
বড় বোন হয়েও ছোট বোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি নুসরাত। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। আমি পাঁচদিন কথাও বলি নাই। সে ঢাকায় যাবে, সে বাসা নেবে। ইন্টার পরীক্ষাও দিবে আমাকে খুশি করতে বলছে। আনভীর ওকে বিয়েও করবে। বলতেছে আপু এটা কাউকে বলা যাবে না, আনভীর নিষেধ করছে। আমি বলছি এটাতো আমি রাজি না, এটা হয় না। এটা কীভাবে হবে? বলে যে না কিছুদিন গো’পন রাখতে হবে বলছে, বিয়ে করে। বিয়ে করে পরে বাইরে নিয়ে স্যাটেল করবে। আমি পারিনি… আনভীরকে সে অনেক ভালোবাসতো।’

অডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে নুসরাত যা বললেন:
একটি অডিও রেকর্ডে ৫০ লাখ টাকা বি’ষয়ে দুইজনের কথোপকথন শোনা যায়। মুনিয়া কোনো টাকা নিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে বড় বোন বলেন, ‘মুনিয়া টাকা নিয়েছিল কিনা টাকার এটা আমরা শুনার পর ধারণা করেছি, বিয়ের কথা আসায় আনভীর এমন ব্লেম দিয়েছে। যেন সে চলে আসে। এটা হতে পারে, তবে আমার বোন টাকা নেয়নি। সে আনভীরকে ভালোবাসতো। তাকে ফুঁসলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

আমি নাকি আনভীরকে ফাঁ’সাতে মুনিয়াকে ব্যবহার করেছি- এ কথা উল্লেখ করে নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমায় একটা নাম্বার থেকে ফোন করে টাকার জন্য। আমাকে অনেক নোং’রা কথা বলেছে। আমি নাকি ওরে দিয়া ব্যবসা…। ফোনে বলে এখন মিডিয়া করতেছি, কথা বলতেছি এগুলো টাকা নেওয়ার জন্য করতেছি। বোনকে দিয়ে বিজনেস করানোর জন্য আনভীরকে ফাঁ’সাচ্ছি। এরপর ফোন কে’টে দিছি।’

মুনিয়ার আত্মহ’’ত্যা নিয়ে স’ন্দেহ:
ছোট বোনের আত্মহ’’ত্যা নিয়ে স’ন্দেহ পোষণ করে নুসরাত বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে হ’’ত্যা। ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিল। তাহাজ্জুদ পড়ত, পাঁচ ওয়াক্ত যে নামাজ পড়ে সে কীভাবে সু’ইসাইড করে? যদি সু’ইসাইড করেও থাকে এমন কিছু অ’পমানজনক করা হয়েছে যা সে নিতে পারেনাই। এখানে অনেক সিন্ড্রোম ছিল যে মার্ডার করা হয়েছে। আমার মনে হয় না, সে সু’ইসাইড করতে পারে। আমরা তো ঝু’লন্ত পেয়ে আত্মহ’’ত্যা ভাবছি। পরে মাথায় আসলো একটা মানুষ যদি ঝুলে যায়, তা পা ছ’টফট করে তাহলে একটা সিট সাজনো ছিল। সিটটা নিচে পড়ে যাওয়ার কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ সেন্স আর কি যেটা ওই সময় আমার হিতাহিত জ্ঞানে আসে নাই। যেটা আমি পরে ভেবেছি। সব পরিপাটি ছিল যেটা আমি ও পুলিশ অবজার্ভ করেছি। পুলিশও শতভাগ বলতে পারবে না যে এটা সু’ইসাইড ছিল। ওনারা এ রকম অনেক কেস ডিল করেন, আমার চেয়ে ওনারা বেশি অভিজ্ঞ। হয়তো তাকে মে’রে ঝু’লিয়ে রাখা হয়েছে।’

ঘটনার দিনের ব্যাপারে নুসরাত যা বলেছেন:
আত্মহ’’ত্যার দিন সকালে বি’পদের আভাস দিয়েছিলেন মুনিয়া- একথা উল্লেখ করে নুসরাত জানান বলেন, ‘সোমবারে সকাল বেলায় কথা হয়েছে লাস্ট। সোমবার যে কথা হয়েছে, আমাকে ফোন করে, ওর ফোনের কা’ন্নায় আমার ঘুম ভাঙে, ও ফোন দিয়া বলে আমাকে ধোকা দিয়েছে, আপু আনভীর আমাকে ধোকা দিছে। সে আমায় বলে আপু আমি অনেক বি’পদে আছি, অনেক বি’পদে আছি তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমি তাকে বুঝাই, বলি তুমি একটু রেডি হও, তোমাকে আপু এসে নিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লা নিয়া আসব, পরে বলে যে আমি তো তোমার সাথে অভিমান করে চলে আসছি, এখন কীভাবে আসব। ওর লজ্জা কাজ করছিল তো আমি ওকে নরমাল করি। ১১টার দিকে সে আমায় কল করে বলে আপু আমার অনেক বি’পদ তুমি কখন আসবা যেকোনো সময় কিছু একটা হয়ে যাবে আপু।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাওয়ার পর ওরে অনেকবার কল করেছি ও ধরেনি। সেখানে গিয়াও ওরে যখন পাচ্ছিলাম না তখন বাসার মালিকের ওয়াইফকে কল করি। সে জানায় এক্সট্রা কোনো চাবি নাই। পরে মালিক আমাকে পরামর্শ দেন মিস্ত্রি এনে তালা ভাঙার। যখন তালা ভাঙতেছি তখনো ওর কোনো আলাপ না দেখে আমরা ভ’য় পাই। ও কোনো রেসপন্স করতেছে না, আমরা ভ’য় পাচ্ছি কি হচ্ছে কি হচ্ছে, তালা ভে’ঙে দেখি ও ঝু’লন্ত। এরপর পুলিশকে কল করি, ইফতারের পর পুলিশ আসে।’

নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আসলে উপরে যাই, যাওয়ার পর দেখলাম ও ঝু’লন্ত অবস্থায় আছে কিন্তু তার পা বিছানায়। পা দুটা হালকা বিছানায় বাঁকা। বিছানা খুব পরিপাটি ছিল, বিছানায় যদি সেই শুইতো বা উঠে দাঁড়াতো একটু সিন্ড্রম, মানে খুব পরিপাটি ছিল। একটা সিট ছিল সেটাও পরিপাটি ছিল। পরে পুলিশ ওরে নিচে নামায়।’

মুনিয়ার মৃ’ত্যুর ঘটনায় পুলিশ সহযোহিতা করেছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করতে বা’ধ্য ছিল। সব কিছু প্রমাণ ছিল ওই বাসায়। আমার বোনের সাথে ছবি, ও প্রতিনিয়ত ওই বাসায় যেত। তাকে নিয়ে অগণিত লেখা, ছবি আঁকতো, সব কিছু হাতে। তার মোবাইলে অনেক কিছু আছে, যা পুলিশের কাছে। ডায়েরিতে সব লিখেছে কী কী করছে।’

এ ছাড়া নুসরাত আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযো’দ্ধা ছিলেন। অনেক সৎ ছিলেন। আমাদের শহরের সবাই জানে ওনারা কেমন ছিলেন। ওনারা নেই, ওনাদের স’ন্তান, এতিম একটা মেয়ে। তার সাথে যা হয়েছে। আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই। বাংলাদেশের সবকিছুর ঊর্ধে তিনি, তার কাছে আমার স’ন্তানের মতো বোনের অপমৃ’ত্যুর বিচার চাই। সে হয়তো অনেক বড় কিছু… তাই বলে কি বিচার পাবো না (কা’ন্না)? আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো কিছু চাওয়ার নাই এটা ছাড়া।’ সুত্রঃ আমাদের সময়