ঈদের পরও খুলছেনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আগস্টে পরীক্ষার পরিকল্পনা, দুশ্চিন্তায় এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

| আপডেট :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৫:২৯ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৫:২৯ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা থাকলেও আপাতত সেই উপায় নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা থাকলেও। দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভারত টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এতে টিকা সংকটে পড়েছে দেশ।

বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু মে মাসের মধ্যে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে উপর মহলে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ‘করোনার পরিস্থিতি কেমন, তা তো সবাই দেখছেন। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কী করা যাবে তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। করোনার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এদিকে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দৈনিক করোনা সংক্রমণ বর্তমান সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ কমছে এর ধারা আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ঈদে মানুষের চলাচল বেড়ে গেলে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী, ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। কবে খুলবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। সবকিছুই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

টিকা প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই টিকা নিয়েছেন। যারা বাকি আছেন, তাদের বিষয়ে সরকার মনযোগী। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে কোনো সমস্যার হওয়ার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এক লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর সবাইকে টিকা দিতে পারিনি। কারণ সবার এনআইডি নেই। কতজন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে সে তথ্য আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই।’

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি’র সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান জানান, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অফিসিয়ালি আমাদের জানায়নি। তবে শুরু করেছে জেনেছি। পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিকা দিচ্ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেবে। ৯০ শতাংশ শিক্ষককে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হয়েছে বলে জেনেছি।’

এসএসসি-সমমানের পরীক্ষার্থী দুশ্চিন্তায়, আগস্টে পরীক্ষার পরিকল্পনা
বিজ্ঞানের ছাত্র রোবায়েত ফেরদৌস গত বছর মাত্র তিন মাস ক্লাস করতে পেরেছিলেন। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রভাতী উচ্চ বিদ্যা নিকেতনের দরজা খোলেনি। দশম শ্রেণির পাঠের বহু কিছুই বাকি রয়ে গেছে। ফেরদৌসের বাবা হাবিবুর রহমান

জানালেন, স্কুল খোলা থাকলে যেমন ক্লাস হতো, তেমনি বিদ্যালয়েই অতিরিক্ত ক্লাস (কোচিং) হতো। এতে উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের মতো কঠিন বিষয়গুলো তার মেয়ে আয়ত্ত করতে পারত। এখন করোনার কারণে না হচ্ছে ক্লাস, না পাঠানো যাচ্ছে কোচিং সেন্টারে। লকডাউনের কারণে প্রাইভেট টিউটররাও বাসায় আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। সব মিলিয়ে পড়াশোনা বন্ধই প্রায়। ফেরদৌসের মতো সারাদেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ২৩ লাখ মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষার্থী দিশেহারা।

কবে নাগাদ স্কুল খোলা হবে, কবে থেকে পরীক্ষা শুরু হবে- এসব প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেন না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ অবস্থায় গত রোববার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমদের সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক শিক্ষাডটকম। তিনি জানিয়েছেন, যখনই বিদ্যালয় খুলে দেওয়া সম্ভব হবে, তার পর থেকে ৬০ কর্মদিবস ক্লাস নেয়া হবে। এর পর আরও ১৫ দিন সময় দিয়ে তবেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হবে।

চেয়ারম্যান বলেন, এরই মধ্যে এ বছরের পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ওই সিলেবাসের ওপরই এসএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। চেয়ারম্যান বলেন, ক্লাস না নিয়ে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হবে না। সারাদেশে এবার প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। এখনও ফরম পূরণ চলছে। লকডাউনের কারণে সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ২৩ মে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৩ মে স্কুল-কলেজ এবং ২৪ মে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। এর পর ৬০ কর্মদিবস পাঠদান শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিতে চায় সরকার। সব মিলিয়ে আগস্টের শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যেভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নতুন করেও ভাবতেও হতে পারে ছুটির বিষয়ে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবারের এসএসসি ও এইচএসসির একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। তা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোও হয়েছে। বিদ্যালয় যখনই খোলা সম্ভব হবে, ওই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে শেষ করে, আরও অন্তত দু’সপ্তাহ সময় দিয়ে তবেই পরীক্ষা নেয়া হবে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনও একই কথা বলেন। তিনি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ঘরে বসেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন,

পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। অনলাইন ক্লাসগুলো ঠিকভাবে করতে হবে। পরীক্ষা আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডর চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তীও। শতভাগ প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিয়েই শিক্ষার্থীদের ফল দিতে চাই। সে লক্ষ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্কুল খোলার পর ৬০ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের কথা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে আছি। লকডাউনের পর এ ব্যাপারে মন্ত্রীর সঙ্গে বোর্ডপ্রধানদের বৈঠকের কথা রয়েছে।’

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রমা বিজয় সরকার সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যথাসময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। সিলেট বোর্ডে এসএসসিতে আনুমানিক সোয়া লাখ এবং এইচএসসিতে ৮০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এ বছর পরীক্ষা দেবে