মামুনুলের মোবাইল ফোনে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

| আপডেট :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫৮ অপরাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৪:২৯ অপরাহ্ণ

গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্ম’দপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রে’প্তার করা হলেও সে সময় তার মোবাইল ফোন জ’ব্দ করা যায়নি। পুলিশ শুরু থেকেই বলছে, মামুনুলের ফোনের ভেতরে অনেক ক্লু লুকিয়ে রয়েছে। সেটি উ’দ্ধার করা গেলে অনেক নতুন তথ্য সামনে আসবে।

শেষ পর্যন্ত তার লুকানো ফোনটি উ’দ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ। মোহাম্ম’দপুরের মাদরাসার একটি কক্ষ থেকে সেটি উ’দ্ধারের পর ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে তার মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাটিং লিস্ট থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সূত্র থেকে তার কাছে লাখ লাখ টাকা আসার তথ্য মিলেছে।

পুলিশ বলছে, মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে। ভারতের বাবরি মসজিদ, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষা ও হেফাজতে ইসলামের নাম করে মামুনুল মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন। সেসব টাকা বিভিন্ন উ’গ্রবা’দী না’শকতামূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

মোবাইল ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকের হিসাব নম্বরে এসব অর্থ তার কাছে পৌঁছাত। ঢাকায় ‘বাবরি মসজিদ’ নির্মাণ করেছেন মামুনুল। এই মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্তান থেকে টাকা আনার প্রমাণও মিলেছে। মামুনুলের মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য যাচাই করে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। ‘শি’শু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীর মতো মামুনুলের ফোনেও চমকপ্রদ কিছু পাওয়ার আভাস দিয়েছেন ত’দন্তসংশ্নিষ্টরা।

মা’মলার ত’দন্ত তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মামুনুলকে জি’জ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার ফোনটির খোঁজ পাওয়া যায়। মাদরাসা থেকে ফোনটি উ’দ্ধারের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক সোর্স থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহের তথ্য ফোন থেকেই আমরা পেয়েছি। সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংক তার অর্থের বি’ষয়গুলো আরো বিশদভাবে দেখবে’।

নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টকাণ্ডের পর একের পর এক ফোনালাপ ফাঁ’সের মাধ্যমে মামুনুলের আসল চরিত্র উন্মোচিত হয়। সে সময় মামুনুলকে ছি’নিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশের নীতিনির্ধারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার মোবাইল ফোনটি তখন জ’ব্দ করা গেলে আরো অনেক তথ্য সামনে আসত বলে মনে করেন তারা।

এদিকে, মোহাম্ম’দপুর থানায় হা’মলা ও চু’রির মা’মলায় সাত দিনের রি’মান্ড শেষে গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আ’দালত না’শকতার দুই মা’মলায় মামুনুলের আরো সাত দিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেছেন। গো’য়েন্দা পুলিশের (ডি’বি) হেফাজতে তাঁর জি’জ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।

আ’দালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তা’ণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানার মা’মলা এবং চলতি বছরের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের তা’ণ্ডবের ঘটনায় দুই মা’মলায় গ্রে’প্তার দেখিয়ে মামুনুলের ১০ দিন করে ২০ দিনের রি’মান্ডে নিতে আবেদন করেন ত’দন্ত কর্মকর্তা।

একই মা’মলায় হাবিব ও কেন্দ্রীয় সহকারী মহাস’চিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদের রি’মান্ড আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আ’দালত হাবিব ও মামুনুলের সাত দিন রি’মান্ডের আদেশ দেন। জালাল উদ্দিন আহমেদের ছয় দিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেন আ’দালত। গতকাল পল্টন থানায় আরেকটি মা’মলায় জুনায়েদ আল হাবিবের তিন দিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করেছেন আ’দালত।

ডি’বির সূত্র জানায়, মামুনুলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কর্মকাণ্ড এবং জামায়াত কানেকশন পাওয়া গেছে। এ কারণে না’শকতায় তাঁর উদ্দেশ্য এবং এর পেছনে কারা জ’ড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামুনুল ভারতবি’রোধী মতাদর্শীর লোকজন এবং স’রকারবি’রোধী দলের লোকজনকে একসঙ্গে করে না’শকতার পরিকল্পনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

এ জন্য ভারতে মু’সলমানদের নি’র্যাতনে মোদি জ’ড়িত বলে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই ইস্যুতে সাড়া দেশে তিনি কিছু রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ‘বড় মুভমেন্ট’ করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে স’রকারের পতন ঘটিয়ে অন্য দল ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে ধারণা ছিল তাঁদের। হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাঁর কিছুই হবে না বলে বিশ্বাস ছিল মামুনুলের। এ কারণে কৌশলে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে বি’রোধিতা শুরু করেন।

পরে মোদিবি’রোধী স্লোগান তোলেন। মামুনুলের না’শকতার পরিকল্পনার পাশাপাশি তাঁর আর্থিক দু’র্নীতির ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছেন গো’য়েন্দারা। তাঁর না’শকতায় ব্যবহৃত টাকা কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গেছে তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।