চাপে বেসামাল হেফাজত, নতুন কমিটির পাঁচজনের চারজনই বাবুনগরীর আত্মীয়

| আপডেট :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | প্রকাশিত :  ২৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতা কর্মীদের দেশজুড়ে সৃষ্টি করা নশকতার গত দুই সপ্তাহ করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের। এখন পর্যন্ত সংগঠনটির ১৬ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আর এরপরই হেফাজতে ইসলামের চলমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। জানা গেছে, তিন ধরনের চাপে পড়ে কমিটি ভেঙে দিয়েছে বাবুনগরী নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নাশকতার মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়াতে ও বহুমুখী তদন্তের হাত থেকে বাঁচতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। সেই বৈঠকে হেফাজত থেকে রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দেওয়াসহ তিনটি কড়া শর্ত দেওয়া হয়। এছাড়া এই চাপের পাশাপাশি সংগঠনের ভেতরেও আরো দুটি চাপে পড়ে হেফাজত। এর একটি হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নাশকতার কর্মসূচিসহ কিছু কার্যক্রমের বিরোধিতা করে কয়েকজন নেতার পদত্যাগের পর আরো অনেকে পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছিলেন। আর অপরটি হলে গ্রেপ্তার বন্ধের ব্যবস্থা করতে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ওপর সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাপ বাড়ছিল।

আর এইসব চাপের মধ্যেই গত রবিবার রাত ১১টার দিকে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী তড়িঘড়ি করে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আর এই বিলুপ্ত ঘোষণার কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই আবার নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এর পরও সংগঠনটি এখনও সরকারের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এখনও হেফাজতের কার্যক্রম সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে এবল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই মামলায় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের প্রক্রিয়ায় কোনো নতুন নির্দেশনা নেই। তবে যদি হেফাজত আর কোনো নাশকতা এবং রাজনীতিতে না জড়ানোর বিষয়ে আস্থা তৈরি করতো পারে তবে সরকারের উচ্চমহল বৈঠকে বসবে এবং নতুন নির্দেশনা আসবে।

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা নিয়েও হেফাজতের অনেকেই নাখোশ। রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দেয়ার পরিবর্তে সম্পূর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করায় ক্ষোভ-হতাশা সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও। এছরা আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে উঠেছে আত্মীয়করণের অভিযোগও।

জানা গেছে, আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে অধ্যাপক মিজানুর রহমান ছাড়া অন্য চারজনই জুনাইদ বাবুনগরীর আত্মীয়। এদের মধ্যে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী তাঁর আপন মামা, নুরুল ইসলাম জিহাদী ফুফাতো ভাই ও সালাউদ্দিন নানুপুরী মেয়ের ভাশুর ও ভাগ্নে সম্পর্ক। জুনাইদ বাবুনগরীসহ চারজনের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পাশের উপজেলা ফটিকছড়িতে। তাই অনেকেই এই আহ্বায়ক কমিটিকে ‘ফটিকছড়ি কমিটি’ বলেও আখ্যায়িত করছেন।

শফীপন্থী ও নিষ্ক্রিয় অনেক নেতা বলছেন, সরকার ও প্রশাসনের চাপে থাকলেও জোনাইদ বাবুনগরীসহ রাজনৈতিক বলয়ের শক্তি হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ কৌশলে ধরে রাখতে চাচ্ছে। এ কারণে তারা কমিটিতে নিজস্ব লোকজন রাখছে।